পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মানুষের স্বাধীন মতামত প্রকাশ বা বাকস্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বড় বাধা হয়ে আছে। এ নিয়ে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে তীব্র আপত্তি ও আইনটি সংশোধন করার কথা বললেও সরকার তা খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। সরকার করব, করছি বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। সংশোধন আর করছে না। উল্টো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ওটিটিসহ অন্যান্য মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করতে যাচ্ছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সরকার সবকথাই শুনছে, তবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার মতো করে। সরকারের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো কথা বলতে না পারে, কোনো বিরোধিতা না করে গণমাধ্যমে মত প্রকাশ করতে না পারে, এজন্য সবার মুখ বন্ধ করার আইনি যতরকম ব্যবস্থা আছে তা সরকার নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এর কুফল ইতোমধ্যে সাংবাদিকসহ অনেককে ভোগতে হয়েছে ও হচ্ছে। এ এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। সরকার যেন স্থির করে দিয়েছে এর বাইরে কথা বলা যাবে না। ‘ইয়েস নট ভেরি গুড’- ফর্মূলার মধ্যে থেকে কথা বলতে হবে। এর বাইরে গেলেই হাতে হ্যান্ডকাপ পড়বে। গল্পটা কম-বেশি সবারই জানা। গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি, যার ক্ষমতার কাছে সবাই অসহায়। একদিন গ্রামের এক অতিসাধারণ ব্যক্তি উক্ত প্রভাবশালীর জমির আইল ধরে বাড়ি যাচ্ছিল। প্রভাবশালী তা দেখে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমার ক্ষেতের আইল ধরে যাচ্ছিস কেন? লোকটি থতমতো খেয়ে জমির মাঝ দিয়ে যাওয়া শুরু করে। প্রভাবশালী আরও রেগে বলল, তোর এতো বড় সাহস! ক্ষেতের মাঝ দিয়ে যাচ্ছিস! লোকটি তাড়াতাড়ি ক্ষেত থেকে উঠে পাশের রাস্তায় গিয়ে উঠে। প্রভাবশালী বলল, তুই রাস্তা দিয়েও যেতে পারবি না। লোকটি অসহায় হয়ে জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি করব? প্রভাবশালী ধমক দিয়ে বলল, ‘কি’-ও করতে পারবি না। গল্পটি উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা সামন্ততান্ত্রিক যুগ, একনায়কতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরশাসকের আমলে ঘটে থাকে। যেখানে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না। সেখানে গণ-এর ইচ্ছা নয়, ব্যক্তি ইচ্ছাই শেষ কথা। কেউ এর ব্যতিক্রম করলেই, আর রক্ষা নেই। তাকে শায়েস্তা করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়। ইতিহাস হচ্ছে, এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা টেনেটুনে কিছু সময় প্রলম্বিত করা গেলেও আখেরে তার পতন অনিবার্য হয়ে উঠে। মানুষ তখন ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে, কে বাঁচিতে চায় বলে’ প্রতিবাদ করতে বের হয়ে পড়ে। তাদের এই ইচ্ছার কাছেই স্বৈরতন্ত্রের পরাজয় ঘটে। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমাদের দেশেও এর নজির রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘ফ্রিডম অফ স্পীচ’-এর বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এমন এক পরিস্থিতি চলছে যে প্রত্যেককেই সেল্ফ সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে কথা বলতে বা লিখতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বাকস্বাধীনতার বৃত্তটি সীমিত হয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, এক পক্ষের বাকস্বাধীনতা অবারিত, আরেক পক্ষের বক্তব্য বেড়িবদ্ধ। এ কথা সত্য, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক অসৌজন্যমূলক ও অশোভন ভাষার ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বেফাঁস ও বিষোদগারপূর্ণ কথাবার্তা অবিরত চলে। সচেতন জনসাধারণ এ ধরনের কথাবার্তা শুনে অভ্যস্ত। রাজনৈতিক নেতারা একে অপরকে এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতিতে কোনো সেন্সরশিপ নেই। তবে সরকারের বিপক্ষে গেলে আইনের হাতে ধরা পড়তে হয়। সাংবাদিক, সাধারণ ও সচেতন মানুষের কোনো কথা সরকারের বিপক্ষে গেলেই আর রক্ষা থাকে না।
দুই.
জনসাধারণের বাকস্বাধীনতার বিষয়টি সাধারণত নির্ভর করে রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সচেতন নাগরিক মহলের উপর। তাদের দায়িত্ব জনসাধারণের জন্য উচিত-অনুচিত এবং কল্যাণ-অকল্যাণমূলক ঘটনা এবং কথাবার্তা সুবিবেচনাপ্রসূত অথচ অবারিতভাবে প্রকাশ করা। এ দায়িত্ব পালনে তারা কতটা স্বাধীন বা তাদের করতে দেয়া হচ্ছে, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ ফ্রিডম অফ স্পীচ বা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালে গৃহীত ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’-এর আর্টিক্যাল ১৯-এ বলা হয়েছে, কোন ধরনের বাধা ছাড়া প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশ ও ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের তথ্য খোঁজা, গ্রহণ করা এবং তা বলা, লেখা, শিল্পকলাসহ যত ধরনের প্রকাশ মাধ্যম রয়েছে, তার পছন্দমতো মাধ্যমে প্রকাশ করা। তবে এ স্বাধীনতা সতর্কতার সাথে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে চর্চা করতে হবে, যাতে অন্যের অধিকার ও সম্মানহানি এবং জাতীয় ও জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। অর্থাৎ বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রটি কেবলমাত্র নিশ্চিত হতে পারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশে। আমাদের দেশে বাকস্বাধীনতার মৌলিক এই চরিত্রের অনুপস্থিতি দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। এটিকে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে, কিছু প্রচার মাধ্যম ও সচেতনমহল তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করেছে এবং করছে। আমার জন্য যে কথা সুবিধাজনক সেটাকেই সঠিক, অন্যের কথাটি বেকায়দার তা উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। অথচ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার নিউক্লিয়াসই হচ্ছে, অন্যের মতামত পছন্দ না হলেও তার গুরুত্ব দেয়া। বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, লেখক ও গবেষক নোয়াম চমস্কি বলেছেন, ‘তুমি যদি বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো, তবে তোমাকে ধরেই নিতে হবে তোমার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির বাকস্বাধীনতাকে পছন্দ করতে হবে।’ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে মিল্টন বলেছিলেন, ‘আমাকে জানার স্বাধীনতা দাও, কথা বলার স্বাধীনতা দাও, মুক্তভাবে সচেতন হয়ে বিতর্ক করার সব ধরনের স্বাধীনতা দাও।’ মিল্টন তার এই উক্তির মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার নামে যা খুশি তা বলার অধিকার চাননি। যা সত্য এবং উচিত তাই বলতে দেয়ার দাবী করেছেন। আর ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের বিখ্যাত সেই উক্তি তো সকলেরই জানা। তিনি বাকস্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তোমার মতের সাথে আমি একমত না হতে পারি, তবে তোমার মত প্রতিষ্ঠায় আমি জীবন দিতে পারি। মতপ্রকাশের তার এই বাণী মানুষের কাছে অমর হয়ে রয়েছে। তার নির্যাস মুক্তমনের মানুষ সবসময়ই ধারণ করে চলেছে। আমাদের দেশের মতো গণতন্ত্রকামী দেশে যেখানে গণতন্ত্র পুরোপুরি ভিত্তি লাভ করেনি, সেখানে গণতন্ত্র অনেকটা তৈলাক্ত বাঁশে বানরের উঠানামার মতো অবস্থায় রয়েছে। গণতন্ত্রকে একেক দল বা গোষ্ঠী তাদের সুবিধা মতো সংজ্ঞায়িত করেছে এবং করে চলেছে। মুখে মুখে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতের উদাহরণও প্রায়ই তারা দিয়ে থাকে। গণতন্ত্রের এসব উদাহরণ দেখিয়ে জনসাধারণের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি করলেও কার্যক্ষেত্রে এর চর্চা এবং প্রতিফলন দেখা যায় না বললেই চলে। বলা যায়, গণতন্ত্রের মোড়কে এক ধরনের একনায়কতন্ত্রকে তারা প্রাধান্য দেয়। অথচ গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। পরিতাপের বিষয়, যাদের নেতৃত্বে জনগণ সংগ্রাম করেছে, ক্ষমতায় আসার পর তাদের দ্বারাই গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। জনসাধারণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তারা আশাহত হয়েছে। এক গণতন্ত্রের জন্য তাদের আর কত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে, তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ব্রিটিশ, আমেরিকার গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করতে শত বছর লেগেছে। তাদের দেড়-দুইশ’ বছরের গণতন্ত্র। আর আমরা তো মাত্র অর্ধ শতাব্দী পার হয়েছি। এ ধরনের কথার মধ্যে যে এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক ও শাসন-শোষণের মনোভাব রয়েছে, তা সচেতন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের এ কথার অন্তর্গত অর্থ হচ্ছে, শতবর্ষ না পেরুলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না, কাজেই জনসাধারণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এটা গণতন্ত্রকামী মানুষের সাথে এক ধরনের প্রবঞ্চণা ছাড়া কিছুই নয়। দেশে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র নেই। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে যারা, সেই তারা যখন ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করে, তখন দেশের মানুষের আশ্চর্য হওয়া ও আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। উল্টো যাতে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে না পারে এবং মুখ বন্ধ রাখতে যত ধরনের আইন দরকার তাই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার, বর্তমান ইন্টারনেটের অবারিত আকাশে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রেও সরকার আইন করে অন্তরায় সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে যদি এ ধরনের প্রবণতা বজায় থাকে, তবে শত বছর কেন, হাজার বছরেও গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করবে না।
তিন.
বলতে দ্বিধা নেই, দেশে এখন একপাক্ষিক শক্তিশালী সরকার রয়েছে, অন্যদিকে সরকারকে অধিক হারে গণতান্ত্রিকতা ও নমনীয়তার মধ্যে রাখার মতো চাপ সৃষ্টিকারী বিরোধীদল নেই। অবশ্য এক্ষেত্রে সরকারের কৃতিত্ব রয়েছে। সরকার বিতর্কিত ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এ নিয়ে যাতে বিরোধীদল কঠোর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, এজন্য বেশ দমন-পীড়ন চালায় এবং বিরোধীদলকে নিস্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়। সচেতন নাগরিক সমাজ এই পরিস্থিতিকে প্রায়ই পলিটিক্যাল অ্যানহিলেশন বা নিশ্চিহ্নকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অনেকে বলেন, ক্ষমতাসীন দল আন্দোলনরত বিরোধীদলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে, তা বুমেরাং হয়ে তাদের দিকে ফিরে আসতে পারে। ক্ষমতাসীনদের অস্তিত্বের স্বার্থেই কার্যকর বিরোধী দলের প্রয়োজন রয়েছে। তারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল আর সরকারের মধ্যে এখন আর পার্থক্য নেই। তাদের আশঙ্কা, যদি কোনো দিন সরকারকে বিদায় নিতে হয়, তখন সরকারের সাথে দলের পতনও অনিবার্য হয়ে উঠবে। কারণ একসময় বটগাছেরও পতন হয়। ক্ষমতাসীন দল এ দিকটি বিবেচনায় না নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রযন্ত্র শুধু বিরোধীদলের ওপরই নয়, সংবাদপত্র, গণমাধ্যম, সচেতন ও সাধারণ নাগরিকদের ওপরও ব্যবহার করছে। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশে প্রতিমুহূর্তে কি হচ্ছে তা জানার অধিকার দেশের জনগণের রয়েছে। তাদের এ জানানোর কাজটি যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া করে সেগুলো যে সরকারের নিয়ন্ত্রণের কবলে পড়েনি, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। তাদের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক এক খড়গ ঝুলে আছে। তবে বাংলাদেশে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা প্রায় প্রতি বছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিরোধীমত দমনের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকে। যারাই এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের তা ভালো লাগার কথা নয়। সরকারের তরফ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিরোধীদলের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়। আবার যখন কোনো বিষয়ে সরকারের পক্ষে যায়, তখন তার নাম উল্লেখ করে বেশ আনন্দ প্রকাশ করে। অর্থাৎ সরকারবিরোধী মতামতের কোনো মূল্য নেই। একমাত্র সরকারের মতামতেরই মূল্য রয়েছে। এ ধরনের পরিবেশ যেকোনো দেশের জন্য বিপজ্জনক। সরকারি দলের লোকজন দ্বারা যেখানে বিশ্বখ্যাত সংগঠন তোপের মুখে পড়ে, সেখানে দেশের কোনো সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করলে, সেগুলোর অবস্থা কি হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। গণমাধ্যম অত্যন্ত সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল মাধ্যম। এখানে সচেতন, দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিরাই কাজ করেন। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, তারাও মানুষ। ভুল তাদেরও হতে পারে। আর তাদের ভুলের প্রতিকারের নানা নিয়মকানুন ও বিধিব্যবস্থা রয়েছে।
চার.
গণতন্ত্রের স্পিরিটটাই এমন যে, জরুরি অবস্থার মধ্যেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা বা দমানো যায় না। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশিত হবেই। এ প্রকাশকে যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দমানোর চেষ্টা চালায়, তা কোনক্রমেই তাদের অনুকূলে যায় না। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন সংকট দেখা দিলে তা নিরসন করতে পারে একমাত্র বাকস্বাধীনতা। এর মাধ্যমে সংকটমোচন এবং বিবদমান গোষ্ঠীকে প্রশমিত করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফ্রিডম অফ স্পীচ গণতন্ত্রের ‘সেফটি ভাল্ভ’ বা নিরাপদ কপাট হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব ব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গর্ভনেন্স ইন্ডিকেটরস’ প্রজেক্টের আওতায় কিছুকাল আগে বিশ্বের ২০০ দেশের উপর করা জরিপে দেখা গেছে, যেসব দেশে বাকস্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া রয়েছে, সেসব দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র সংহত হয়েছে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সচেতন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত পতে পারে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, শাসকদল এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারা ও বাকস্বাধীনতা খর্ব হয় এমন কোনো আইন প্রণয়ন থেকে বিরত সরকার থাকবে এবং প্রণীত আইন সংশোধিত করে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশিত।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।