Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাসি কান্নার ঈদ

অয়েজুল হক | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ এএম

কি করেন
ফেবু চালাচ্ছি
সেটা তো চালাবেন। রেলগাড়িও চালাতে পারেন।
তবে আমি বলেছি আপনি কি করেন মিন- পড়াশোনা, খেলাধুলা, গানবাজনা, অভিনয়, লেখক......
লেখক হতে যাব কেন?
- আপনি তো দারুন খারাপ? কাভার ফটোতে এতগুলো বইয়ের পিক?
- পিক মানে!
- পিক বোঝেন না! পাগল নাকি?

- পাগল হতে যাবো কেন? জানার অভাব। এতোদিন জানতাম পানের পিক হয়। বইয়ের পিক হয় জানা ছিলনা।
হা হা হা করে গালভরা হাসি হাসে মেয়েটা।
এভাবে পরিচয় নিতুর সাথে। সেটা পেরিয়েছে তিন বছর। বন্ধুত্বের পর জীবন সাথী হবার স্বপ্ন সাজিয়েছে দু’জন। হাসানের সবকিছু ভালো লাগে নিতুর।
ঈদের রাতে নিতুকে বাড়ি আনার ফন্দি হিসাবে একমাত্র বোন তানির সাথে আলাপ শুরু করে, জানিস আমার সবকিছু ভালো লাগে নিতুর।

মামা, তুমি যে বিশ্রী গন্ধের হাওয়া মারো সেটা ভাল লাগে নিতু মামির? জারিনের কথা শুনে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবার উপক্রম হয় হাসানের। তানির একমাত্র মেয়ে জারিন। মেয়েটার বয়স পাচ বছর হলেও কথা বলে পঞ্চাশ বছরের বুড়ির মতো।
হাসি থামিয়ে আবার শুরুকরে , তানি।
- কি বলবি বলে ফেল ভাইয়া।

- নিতুকে বাড়িতে নিয়ে আসবো। ঈদের দিন। খুশিটা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস। তানি কিছু কষ্ট মিশিয়ে বলে, ওরা অনেক বড়লোক, ভাইয়া তুই ওকে ভুলে যা।
- ধুর পাগলি। নিতু আমাকে কি পরিমাণ ভালোবাসে জানিস।
তানি কথা বাড়ায় না, আচ্ছা যেটা ভালো হয় কর। নিতুর কথা তো বাড়ির সবাই জানেই।

ঈদের দিন সাত সকালেই ঘুম ভাংগে। রাতে খুব একটা ভালো ঘুম হয়নি। প্রতিদিন নিতুকে পাওয়া গেলেও ঈদের রাতে একবারের জন্যেও মেয়েটাকে পাওয়া যায়নি। কয়েকবার কল করেও ওপ্রান্তে সাড়া মেলেনি। ঈদের দিনে একগাদা প্রোগ্রাম। দিনের পর দিন নিজের মতো করে খুশির দিন টা সাজিয়েছে। সেগুলোর সাথে নিরবধি খেলা করে বুকের ভেতরকার কাল্পনিক ভালোবাসা মেলানো স্বপ্ন। নিতুর সাথে সারাদিন..... । হাসানের ফোন বাজে। নিতু। খুশিতে বুকভরে ওঠে। রতের কষ্ট, দুঃস্বপ্ন, মুহুর্তেই হারিয়ে যায়। ফোন রিসিভ করে, হ্যালো।
- হ্যা, বলেন। নিতুর কন্ঠে রুক্ষতা।

- রাতে পাইনি। অনেকবার ফোন দিয়েছি।
- সকালেও দিয়েছন, ঈদের দিন মানুষ কতো ব্যস্ত থাকে। এতো পাগলামির মানে কি? আপনি কি ছাগল নাকি?
হাসান কিছু বুঝে উঠতে পারেনা। ভুল নাম্বারে কল গেল নাকি!

- কে বলছেন আপনি!
- কে বলছি মানে! ঢং করার যায়গা পাননি তাইনা?
- নিতু!
- হ্যা, নিতু। আর কোনোদিন আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।
ফোনটা কেটে দেয়। অনেকসময় নির্বোধের মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে । ঠিক কতো সময় কে জানে! মাথার ভেতর কয়েকটা শব্দ ঘুরপাক খায়, ছাগল নাকি, ডিস্টার্ব করবেননা....... কানেবাজে, বুকের ভেতর আঘাত করে চলে অবিরাম।

- কিরে হা করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছিস। নামাজ পড়তে গিয়েছিলি? মায়ের কথায় ঘোর ভাংগে।
- নামাজ..... হ্যা যাব। হাসান একটু নড়েচড়ে বসে।
- যাবি মানে?
- নামাজ পড়তে যাবো।
- কিসের নামাজ?

- কিসের আবার! আজ ঈদ না? ঈদের নামাজ।
- এখন কন্টা বাজে?
হাসান সময় দেখে। সাড়ে এগারো! নিজেই অবাক হয়।
মা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েই বেরিয়ে যান।

বিকালের দিকে কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলে। কক্সবাজার যাবে। জীবন, স্বপ্ন, প্রতারণা সবকিছু সগরের বিশাল জলরাশি তে মিলিয়ে দেবে। ভাসিয়ে দেবে। বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যেতে পারেনা। সায়েদাবাদ টার্মিনালের পাশে এক দোকানে প্রায় দেড়ঘন্টা আটকে আছে। হঠাত ঝড়ো বাতাস একগাদা মেঘ আর মুষলধারার বৃষ্টি নিয়ে হাজির। চলছে তো চলছেই....

রাস্তায় পনির ঢেউ। দু›একটা যানবাহন চলছে অনেক কষ্টে, কিছুটা যুদ্ধের মতো। জীবন চলার পথেও এমন সময় আসে যখন সামান্য সামনে এগুতে অনেক কষ্ট হয়। দেখছিল হাসান। হুড়মুড় করে একটা রিক্সা পড়ে যায়। সংস্কারকাজ চলছে। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা যখন নদী হয়, কে বুঝবে রাস্তার কোথায় বড় বড় গর্ত! সবদিকের যে অবস্থা তাতে একটা সেলফি তুলে লিখে দেয়া যায়, সায়েদাবাদ নদীর পাড়ে! সে নদীতে রিক্সা চলে, পড়ে, ডোবে!
রিক্সা ড্রাইভার আর দু আরোহী। ড্রাইভার মুখথুবড়ে পড়েছেন। পানি থাকায় আঘাতের তীব্রতা কমেছে। যাত্রী দু›জন সংস্কার কাজের গর্তে! কয়েক সেকেন্ড পর ভুশ করে ভেসে টাইপ্যান্ট পরা যুবক। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন, আমাকে বাচান। বাচান।

হাসান খেয়াল করে দেখছিল। একজন আরোহী গর্ত থেকে ওঠেনি! হাসান বসে থাকতে পারেনা। বৃষ্টি, বাতাস উপেক্ষা করে গর্তের কাছে ছুটে যায়। ঈদের দিন, খুশির দিন মানুষের স্বপ্ন ডোবা কিভাবে দেখে মানুষ! গর্তটা খুব গভীর নয় তার ভেতর থেকে টেনে তোলে একজন জ্ঞানহীন মানুষ। নিতু! অবাক হয় হাসান। মাথায় বাড়ি লেগেছে। হয়তো পড়ে যাবার সময় রিকশার কোন লোহালক্কড় বা রাস্তার ইট পাথরে ঘা লেগেছে। বেশকিছু জায়গা দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত ঝরে। হাসানের বুকের ভেতর মোচড় দেয়। তখনো টাই ঝুলানো যুবক, রিকশা ড্রাইভার নির্বিকার। হাসান চিৎকার করে, এই শালা গাড়ি দাড় করা। বলদের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
হাসানের কথা শুনে রিকশাচালক ছোটে, যুবক কাছে এসে বলে, দেন আমার হবু বউ কে আমি ধরছি। যদিও আমার হাতে খুব ব্যথা পেয়েছি, কিন্তু ভালোবাসার সামনে ব্যথা কি তাইনা?

হাসান মুচকি হাসে। নিতুকে দিয়ে দেয়। মুখে হাসি রেখেই বলে, তাইতো। ভালোবাসার জন্য সব ব্যথা মেনে নিতে হয়।
- থ্যাংকস।
কি বলবে হাসান! অনেক প্রশ্ন বুকের ভেতর। কিছু প্রশ্নের জবাব যুবকই দিয়ে দেয়। আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছি পাচ দিন হলো না! এর ভেতর কি কান্ডই না ঘটে গেল।

- আপনি আমেরিকা থাকেন?
- হ্যা। বিয়ের জন্যই দেশে আসা। আংকেল বাবা সবাই বললেন। নিতুকে সেই কতো বছর আগে দেখেছি। ভারী সুন্দরী হয়েছে নিতু।
- গুড।

কথা শুনতে শুনতে হাসান ভেতরে পরা স্যান্ডো গেঞ্জিটা ছিঁড়ে নিতুর মাথায় বাধে। এর ভেতর একটা গাড়িও চলে আসে। রিকশাচালক নিয়ে এসেছে। দেরী না করে নিতুকে পাশেই একটা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
সব দেখেশুনে ডাক্তার বলেন, যদিও সিরিয়াস কিছুনা তবে জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্তের ব্যবস্থা করুন।

- আমি রক্ত দিচ্ছি স্যার।
ডাক্তার সাহেব হাসানের দিকে তাকান। ব্লাড গ্রুপ কি জানেন?
- জি। ম্যাডামের এ পজেটিভ না?
- হ্যা।
- আমারও। এ পজেটিভ।
জানা জিনিষ মাঝেমধ্যে লুকাতে হয়। লুকাতে হয় ভালোবাসার জন্য।

ডাক্তার সাহেব নার্স ডেকে বলেন, দেখেন ভদ্রলোকের রক্তের গ্রুপ মেলে কিনা। ক্রসমিসিং টাও দেখবেন।
নার্সের সাথে চলে আসে হাসান। নিতুর হবু বর নিতুর কেবিনে পাশের বেডে শুয়ে থাকে। অনেকটা পাহারাদারের মতো। নিতু ঘুমিয়েছে! যেন বড় কোন স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার জন্যে।
কিছু পরীক্ষা তারপর রক্তগ্রহন শেষ হয়। একজন রক্ত নিয়ে দ্রুত চলে যায়। হাসান উঠে বসে।
নার্স বাধ সাধে। উঠবেন না প্লিজ।

- কেন!
- কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হয়।
- আমার জরুরি কাজ আছে। ঈদের দিন কি হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে কাটাবো নাকি!
হাসানের ব্যবহারে নার্স অসন্তুষ্ট। চেহারা বলে দেয়। রুক্ষ স্বরে বলে, আচ্ছা আপনার নাম বলেন।
- নাম বলতে হবে কেন?

- যিনি রক্ত দেন তার নাম রেজিস্টারে এন্ট্রি করতে হয়।
- আমার রক্তে কোন সমস্যা!
- সেগুলো দেখা হয়েছে। সমস্যা নেই।
- তাহলে ওখানে লিখে দিন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
সেবিকা কিছু বুঝে উঠতে পারেনা। বোকার মতো তাকায়।
হাসান দ্রুত পায়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে থেকে যায় তার সাজানো স্বপ্ন। নিতু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসি কান্নার ঈদ

২৯ এপ্রিল, ২০২২
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->