শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ইদ মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ দুটি উৎসব; ইদ-উল ফিতর,ইদ-উল আজহা।ইদ কথাটির অর্থ উৎসব। জীবনকে আনন্দে উদ্বেলিত করার জন্য, সাম্য সহানুভূতিশীলতার মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি করার জন্য, ত্যাগ,আর আত্নসমর্পণের মহান আদর্শ প্রতিফলনের অংশ হিসেবে ইদ উৎসব পালনের রীতি মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত হয়েছে।ইদের উৎসবে সৌভ্রাতৃত্ব ও ত্যাগের অনুপম তাৎপর্য রয়েছে।
ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে খুশি।বছর ঘুরে আসে খুশির ইদ।গ্রামে ইদ উৎযাপনের মজাই আলাদা। ছেলে বুড়ো সবাই মেতে উঠে ইদের খুশিতে। ইট-পাথরের শহুরে জীবনে মাটি নেই,নেই সোঁদা মাটির গন্ধ, আর সবুজের অবারিত নৈসর্গ শহরে কল্পনার বাইরে। এখানে যন্ত্র-যান্ত্রিকতা আর পিচঢালা পথগুলো সহস্র নিয়ন আলোয় ঘেরা।এই আলো ছেড়ে মধুর মিষ্টি বাতাস অথবা মেঠোপথ আর রাতের জোনাকি আলো দেখতে হলে যেতে হবে গ্রামে।বাংলাদেশের গ্রাম মানেই সবুজ, গ্রাম মানেই পাখ-পাখালি, গ্রাম মানেই মধুরতা।নগর জীবনে মিশে থাকা মানুষের গ্রাম দেখার স্বাদ মেলে বছরে দুবার দুই ইদে। বাস ট্রেন লঞ্চ ভরে তখন মানুষ ফেরেন নাড়ির টানে মধুর গ্রামে।শহরে জীবনের বাইরে গ্রামীণ ইদ আসে ভিন্ন আবহে।শহরে ফ্ল্যাট সংস্কৃতিতে স্বজন ছাড়া ইদের আনন্দ বেদনা তেমন না জমলেও দীর্ঘদিন পাশাপাশি কাটিয়ে দেওয়া গ্রামীণ জনপদে ইদ আসে দ্বিগুণ আনন্দে। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শহরের একগুঁয়ে প্রাণহীন যান্ত্রিক জীবনের অবসরে ইদ উদযাপন করতে মানুষ ছুটে গ্রামে, স্মৃতিবিজড়িত পথঘাট প্রান্তর,মানুষজন সবকিছুই সব সময় কাছে টানে।গ্রামের কথা মনে হলেই অতীত সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের অজান্তেই কেমন জানি আনমনা হয়ে হারিয়ে যায় সবাই ফেলে আসা বাল্য-কৈশোররের দিনগুলোতে। তাইতো প্রতি বছর ইদে মা-মাটি-মানুষের টানে সেই চিরচেনা গ্রামীণ পরিবেশেই বারবার ছুটে চলে,ঘুরে বেড়ায়, গ্রামের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে, মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রামের আলো বাতাসের সাথে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি।
শহরের একগুঁয়ে প্রাণহীন যান্ত্রিক জীবনের অবসরে ইদ উদযাপন করতে ধনী,গরীব,ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসে।কেন জানি বুঝতে পারি না, গ্রাম-গ্রাম্য প্রকৃতি,চিরচেনা গ্রামীণ দৃশ্যপট,বাল্য-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত পথঘাট প্রান্তর,মানুষজন সবকিছুই সব সময় আমায় কাছে টানে।গ্রামের কথা মনে হলেই অতীত সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের অজান্তেই কেমন জানি আনমনা হয়ে আমরা হারিয়ে যাই সেই ফেলে আসা বাল্য-কৈশোররের দিনগুলোতে। তাইতো প্রতি বছর ইদে মা-মাটি-মানুষের টানে সেই চিরচেনা গ্রামীণ পরিবেশেই বারবার ছুটে আসে,ঘুরে বেড়ায়, গ্রামের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে, মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রামের আলো বাতাসের সাথে।ইদের রং আবহমান বাংলার সব গ্রামেই একরকম। সকাল হতেই গ্রামে গ্রামে চলে সুখের আয়োজন।
মনে পড়ে কিশোর বেলার কথা, ইদের
সকালে ঘুম থেকে কে কার আগে উঠে গোসল করবে, নতুন জামা- কাপড় পরবে সে এক বিরাট প্রতযোগীতা।ইদের সকালে সেমাই, হালুয়া খেয়ে ইদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া,জামাত শেষে কোলাকুলি করা,বন্ধুদের সাথে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে যাওয়া এবং যার বাড়িতে যাবেন কিছুনা কিছু খেতে হতো,এই আত্মীয়েতা গ্রামে এখনো চালু রয়েছে।ইদ-উল ফিতর এলে ফিতরার টাকা হিসেব করে যার যার টাকা আব্বা আমাদের হাতে তুলে দিতেন,আমরা যার যার পছন্দ মতো গরীব - মিসকিনকে দিতাম,সে এক মধুর অনুভূতি খুবই ভালো লাগতো।এ ছাড়াও জমাত শেষে সবাই মিলে একসাথে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের কবর জিয়ার করা হয়।
ইদ-উল আজহার সময় এলে আব্বার সাথে হাঠে যেতাম বড় বড় কুরবানির ষাড় দেখতে,কাগজের ফুলের মালা গলায়, লালসালু কাপড়ে আবৃত গরুর শিং দেখতে এক মনোরম দৃশ্য। লাল,কালো, ধবধবে সাদা কত জাতের গরু দেখতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হতো।এতো বড় ষাড় না হলেও আব্বাও কোরবানি কিনতেন বাজার থেকে, নিয়ে আসার সময় কত যে ভালো লাগতো, কত মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো - ষাড়ের দাম কত?
বলতে ভালো লাগতো মনে বিরক্ত আসতো না।যে কয়দিন ইদ- উল আজহার বাকি আছে সে ক›দিন আমাদের কোরবানির যত্ন-আত্মীর কোনো কমতি চিল না, ধরি ধরে ঘাস খাওয়া থেকে প্রতিদিন দু-বার গোসল করানো সবই নিয়মিত চলত।ইদের জামাত শেষে হুজুর পাড়ার অন্যান্য কুরবানী জবাই করে ধারাবাহিকভাবে
আমাদের বাড়ি আসতেন।মাংস কাটা শেষ হলে গরীবের ,আত্মীয়স্বজনের ,আমাদের নিজের অংশ আলাদাভাবে বন্টন করা হতো।ইদের পর সপ্তাহ দিন ধরে দাওয়াত -যিয়াফত ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে স্বপ্নের মতো দিনগুলো চলে যেত।
ইদ মানুষের জীবনে আসে পরম আনন্দ নিয়ে।এর পিছনে থাকে অনেক তাৎপর্য।ইদের বৈশিষ্ট্য থেকে এই তাৎপর্য ইদ উৎসব পালনের মধ্যে উপলব্ধি করতে হবে।ইদের সীমাহীন আনন্দ উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে পরম করুণাময়ের উদ্দেশ্যে নিজেকে নিবেদিত করা আর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ত্যাগের, ভ্রাতৃত্বের,সম্প্রীতির ও সহমর্মিতার মহান আদর্শ অনুধাবন করতে হবে।
তাহলেই গ্রামে কিংবা শহরে ইদ উৎসব পালনের সার্থকতা প্রমাণিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।