শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পেছন দিকে তাকালো বুড়ি। আর তখনই নজরে পড়লো মেঘ খানা। কখন যে পশ্চিম আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে বুড়ি তা খেয়াল করেনি। দৈত্যাকার মেঘ টা পুরো আকাশের দখল নিতে দ্রুতই যেন ছুটে আসছে।যেমনি বুনো মোষের মত রং তার,তেমনি ফোঁসানি।
হ্যাঁ, ফুঁসতে ফুঁসতে পেছন থেকে ছুটে আসছে মেঘ খানা। না জানি কোন বিপদেই পড়তে হয় আজ।
অতকিছু ভাবার সময় নেই তার।অগত্যা একটু দ্রুতই পা চালাতে গেল শ্যামাদাসী।আর অমনি এক ঢেলা শুকনো মাটি তে পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।একরাশ ধুলোবালি বিনা বাঁধায় ঢুকে গেল চোখে মুখে।শরীরের সবটুকু শক্তি এক জায়গায় জড়ো করে উঠতে গেল।পারলো মা।পা দু›টো অবশ হয়ে আসছে তার।গলাটাও খটখটে মাঠের মত শুকনো।একটু জলের যে বড়ো দরকার।
একটু জলের খোঁজে ঘাড়টাকে খানিক ঘুরিয়ে তাকাতে গেল বুড়ি।একরাশ কালো অন্ধকার ছাড়া কিছুই সে দেখতে পেলো না আর।পায়ের নিচ থেকে উঠে আসা অসাড়তা ততক্ষণে পুরো শরীরের দখল নিতে শুরু করেছে।একটা অচেতন ভাব এসে ঘিরে ধরতে শুরু করেছে তাকে।একটু একটু করে চেতনা হারাচ্ছে শ্যামাদাসী।আর তার সেই অর্ধ চেতন ঘোরের মধ্যে অস্পষ্ট করে ভেসে উঠছে তার ছোট্ট কুঁড়েঘর।ফালি উঠোন।তুলসিতলা।বাতাবি লেবুর গাছ।জোনাক জ্বলা সন্ধে।ঝিঁঝিঁর ডাক।আর সব ছাপিয়ে জবার মুখখানি।
আর ঠিক তখনই প্রচন্ড আওয়াজ তুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো দুরন্ত কালবৈশাখী। অতবড়ো মাঠটাকে এলোমেলো করে দিতে দিতে ছুটে যেতে লাগলো ওপারের গ্রামটার দিকে।কতটা সময়?বেশিক্ষণ নয় বোধকরি। প্রথমে এক দু› ফোঁটা। তারপর ঝম ঝম করে শুরু হল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি ধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে এলো মুখে।মুখ থেকে পেট।আচমকাই ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শ্যামাদাসীর শরীর।অসাড় হয়ে আসা শরীরটা সাড় ফিরে পেতে শুরু করলে চোখ মেললো শ্যামাদাসী।তারপর চারিদিকে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে প্রাণ ভরে নিতে লাগলো জীবনের আস্বাদ।
যাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে শ্যামাদাসী তখন নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে বিভোর। (শেষ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।