Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ন্যাটো সম্প্রসারণের বদলে শান্তি আলোচনাই একমাত্র উপায়

রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত নিরসন- শেষ

সিএনএন | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১০ এএম

তৃতীয় সমস্যা হল, বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলই এখন আর নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বাস করে না এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও পক্ষ বেছে নেয়নি। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সমস্ত দেশ ও অঞ্চল তথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং এগুলির সাথে আরো কিছু দেশ যোগ করলেও তাদের সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

চতুর্থ সমস্যা বুমেরাং প্রভাব। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাশিয়া নয়, সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সরবরাহ-শৃঙ্খলে বিঘœ, মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্য ঘাটতি ঘটাচ্ছে। একারণে অনেক ইউরোপীয় দেশের রাশিয়া থেকে গ্যাস এবং তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং হাঙ্গেরি ও সম্ভবত অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ রাশিয়াকে রুবেলে অর্থ প্রদান করতে সম্মত হবে। বুমেরাং প্রভাব সম্ভবত এই নভেম্বরের মধ্যবর্তী মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদেরও ক্ষতি করবে। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ভোটারদের প্রকৃত উপার্জনকে হজম করে নেবে।

পঞ্চম সমস্যা হ’ল, রাশিয়ার রপ্তানিকৃত জ্বালানি এবং শস্যের জোড়ালো (মূল্য-সংবেদনশীল) চাহিদা। রাশিয়ান রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার সাথে সাথে সেই পণ্যগুলির বিশ্ব মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়ার রপ্তানির মাত্রা হ্রাস পেতে পারে, কিন্তু তা একই বা এমনকি উচ্চ রপ্তানি আয় নিয়ে আসতে পারে। ষষ্ঠ সমস্যা ভ‚-রাজনৈতিক। অন্যান্য দেশগুলি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে চীন রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাতকে অন্তত আংশিকভাবে এমন একটি যুদ্ধ হিসাবে দেখছে, যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণ প্রতিরোধ করছে। এ কারণেই চীন বারবার যুক্তি দিচ্ছে যে, যুদ্ধে রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলতে পছন্দ করে যে, ন্যাটো সম্পূর্ণরূপে একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট। কিন্তু রাশিয়া, চীন এবং অন্যরা অন্যভাবে চিন্তা করে। তারা ১৯৯৯ সালে সার্বিয়ায় ন্যাটোর বোমা হামলা, ৯/১১-এর পর ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধ এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটোর হামলা এবং এর ফলাফলকে ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের সাথে ন্যাটোর সম্প্রসারণ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার নেতারা পূর্বাঞ্চলে সংস্থাটির বিস্তারের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এটি উল্লেখযোগ্য যে, পুতিন যখন ন্যাটোকে ইউক্রেনে তার বিস্তার বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই বিষয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনা করতে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছিলেন।

সংক্ষেপে, চীন সহ অনেক দেশ রাশিয়ার উপর বৈশ্বিক চাপকে সমর্থন করবে না, যা ন্যাটোর সম্প্রসারণের দিকে পরিচালিত হতে পারে। বাকি বিশ্ব শান্তি চায়, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর বিজয় নয়। যুক্তরাষ্ট্র পুতিনকে সামরিকভাবে পরাজিত দেখতে পছন্দ করবে এবং ন্যাটোর সমরাস্ত্র রাশিয়ান বাহিনীকে একটি বিশাল আঘাত করেছে। কিন্তু এটাও সত্য যে, এই প্রক্রিয়ায় মধ্যে ইউক্রেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার পরাজয় ঘোষণা এবং পশ্চাদপসরণ অসম্ভব বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রাশিয়ার বিজয়ের সম্ভাবনা বরং বাড়ছে, এমনকি, পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্যভাবে ব্যবহারে মাধ্যমে। এভাবে ন্যাটোর অস্ত্রও রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু তা ইউক্রেনকে বাঁচাতে পারবে না।

এক কথায় বলতে গেলে, ইউক্রেনে মার্কিন কৌশল রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু ইউক্রেনকে বাঁচাতে পারবে না। একমাত্র শান্তি চুক্তিই দুই পরাশক্তিকে থামিয়ে ইউক্রেনকে বাঁচাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়াকে মোকাবেলার বর্তমান পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হ্রাস করবে এবং বিশ্বকে ন্যাটো-পন্থী এবং ন্যাটো-বিরোধী শিবিরে বিভক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করবে। মার্কিন ক‚টনীতি রাশিয়াকে শাস্তি দিচ্ছে, কিন্তু ইউক্রেনের জন্য বা মার্কিন স্বার্থের জন্য বাস্তব সাফল্যের খুব বেশি সুযোগ ছাড়াই। আসল সাফল্য হ’ল, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রুশ সৈন্যদের দেশে ফিরে যাওয়া। কেবলমাত্র আলোচনার টেবিলে এই ফলাফল অর্জন করা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো মিত্র এবং ইউক্রেনের জন্য মূল পদক্ষেপ হল যে, রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করলে এবং ইউক্রেন ছেড়ে চলে গেলে ন্যাটো ইউক্রেনে ঢুকবে না। এতেকরে, যে দেশগুলি পুতিনের সাথে জোটবদ্ধ, এবং যারা কোন পক্ষই বেছে নিচ্ছে না, তারা তখন পুতিনকে বলবে যে, যেহেতু তিনি ন্যাটোর পরিবর্ধন বন্ধ করেছেন, তাই এখন রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। অবশ্য, রাশিয়ার দাবি অগ্রহণযোগ্য হলে আলোচনা ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি দ্বারা সমর্থিত ইউক্রেনের নিরপেক্ষতার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা যায় কিনা, তা দেখার জন্য অন্তত চেষ্টা করা উচিত এবং প্রকৃতপক্ষে কঠোর চেষ্টা করা উচিত।

পুতিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত, তার গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে বাইডেনের কড়া কথাবার্তাগুলি ইউক্রেনকে বাঁচাতে পারবে না। ইউক্রেনকে বাঁচানোর সর্বোত্তম সুযোগ হ’ল, আলোচনা, যা বিশ্বকে পাশে দাড় করাবে। ন্যাটো সম্প্রসারণের পরিবর্তে শান্তিকে অগ্রাধিকার দিলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের আরও অনেকের সমর্থন অর্জন করবে এবং এটি ইউক্রেনে শান্তি এবং সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে। (সমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ন্যাটো


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ