Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদায় ফেসবুক

শেখ সজীব আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩১ এএম

মফিজ মন খারাপ করে একটি বটগাছের নিচে বসে আছে।তেমন কারো সঙ্গে কথাবার্তাও বলে না।মন খারাপের কারণ হলো,এবারের বই মেলায় তার একটিও বই বিক্রি হয়নি।

ফেসবুকে মফিজের পাঁচ হাজার বন্ধু রয়েছে।
তার বই সংগ্রহ করবে বলে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছে।বইটা নিয়ে কত যে প্রচারণা-ফেসবুক থেকে শুরু করে,পত্রপত্রিকাসহ,টেলিভিশনেও।
মফিজ বইটির পিছে অনেক টাকা খরচও করেছে।
কিন্তু কোনো কাজ হলো না।
মফিজ মেলার শেষের দিনে তার প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে দেখে যেভাবে বইগুলো ছিল,সেভাবেই
রয়েছে।মনে হয়,কেউ নেড়েচেড়েও দেখেনি।

তারপর মফিজ অনলাইনে
বই বিক্রির খোঁজ নিয়ে দেখে,অনলাইনেও তার বই বিক্রি হয়নি।সে চিন্তায় পড়ে গেল,কেন বই বিক্রি হলো না?
মফিজের ফেসবুকে লেখা পোস্ট করা মাত্রই লাইক-কমেন্টসের বন্যা বয়ে যেত।কমেন্ট বক্সে অনেকেই লিখত-›ভালো লাগল,পাঠে মুগ্ধ!’’দারুণ হয়েছে!আরও লেখা চাই।’
‘বাহ্ চমৎকার!’ ‘অসাধারণ,চালিয়ে যান।’

‘মনোমুগ্ধকর, হৃদয়ছোঁয়া’প্রকাশ ইত্যাদি
তাই মফিজ ভেবেছিল পাঠকের অভাব হবে না।
যদি এবার বই মেলায় তার বই বের হয় তাহলে ভালোই চলবে।
কিন্তু মফিজ বুঝল না,তার লেখা যে মান-সম্মত না।
লেখায় যে কত ভুল আছে,তা সে নিজেও জানে না।

মফিজ প্রতিদিনি একটি করে নতুন নতুন গল্প লেখে ফেসবুকে পোস্ট করত।ভুল থাকা শর্তেও,কেউ তাকে কোনোদিন কমেন্ট করে সংশোধন করার জন্যে বলেওনি।বলবেও বা কেমন করে সবাই তো তার লেখাটা পড়ে কমেন্ট করে না। অনেকে না পড়েই কমেন্ট করা শুরু করে।
তবে আমি লেখাটা পড়তাম,চোখে ভুল
দেখলেও কিছু বলতাম না,যদি মনে কষ্ট পায়।
উৎসাহ দিয়ে যেতাম।

আর প্রকাশক টাকা পেলে প্রকাশ তো করবে,
এটাই স্বাভাবিক।
মেলা শেষ হওয়ার পরেই,প্রকাশক মফিজকে ডেকে,বইয়ের হিসেব দিয়ে তাকে সব কপি-ই ফেরত দিয়ে দেয়। তার মুখে কোনো কথা নেই।প্রকাশক মফিজকে বলে-›দেখেন ভাই,আপনার মুখের দিকে চেয়ে,আপনার অনুরোধেই আপনার মান-সম্মতহীন লেখাগুলো ছাপাইছি।

আপনার লেখায় এত ভুল,তা সম্পাদকের পক্ষে
সম্পাদনা করা সম্ভব ছিল না।’
মফিজের মুখে কোনো কথা নেই।
সে মন খারাপ করে বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে এসে, বইগুলো নদীতেই ফেলে দিয়ে বলে-›লেখালেখির
গোষ্ঠি কিলাই!আর লেখালেখি করব না।

লেখালেখি করে সময়গুলো নষ্ট করলাম ফাও।’
তারপর মফিজ ফেসবুক থেকে বিদায় নেয় একটি স্ট্যাটাস দিয়ে-
‘আর লেখালেখি করব না,ফেসবুকও চালাব না,
বিদায় ফেসবুক।’
তৎক্ষণাৎ একজন কমেন্ট করে-

‘ভাই,আমি আপনার ‘বিদায় ফেসবুক’ গল্পের বইটি কিনতে পারি নাই, মেলাও তো শেষ।বইটা অনলাইন থেকে কিনে নেব।’ তারপর এক এক করে কমেন্ট আসতে থাকে- ‹শুভ কামনা রইল,আরও
এগিয়ে যান।’ ‘ভাই,এই বইটি মেলায় কেমন চলছে?’
‘আপনে তো আমাকে সৌজন্য কপি দিলেন না।’
মফিজ ভুলেও আর ফেসবুকে তাকালেন না এবং
কমেন্টগুলোও দেখলেন না।

মফিজের বইটির নামও দিয়েছিল
‘বিদায় ফেসবুক।’এখন সে ‘বিদায় ফেসবুক’ গল্পটির মতোই বিদায় জানালেন।
কেউ আর বলল না- ‘ভাই,কী হয়েছে?সত্যি-ই কি
ফেসবুক থেকে বিদায় নিচ্ছেন?’

আমার মতো অনেকেই ভেবেছে,হয়তো এটিও ‘বিদায় ফেসবুক’ গল্পের কোনো অংশ।আমিও কমেন্ট করলাম- ‘বন্ধু,আমি তোমার বইটি কিনতে পারি নাই,আমি তো দেশের বাইরে আছি।
আমার জন্য এক কপি রেখে দিও,দেশে আসলে যেন পাই।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদায় ফেসবুক

২২ এপ্রিল, ২০২২
আরও পড়ুন