Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডনবাসে রাশিয়ার দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরু

৩০০ মাইল দীর্ঘ রণক্ষেত্র, ক্রিমিনা শহর দখল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ডনবাস অঞ্চল দখলকে ঘরে বিভিন্ন শহরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার বাহিনীর মধ্যে এখন রাস্তায় রাস্তায় লড়াই চলছে। সেখানে ৩০০ মাইল দীর্ঘ এক রণক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে ইউক্রেন সরকার স্বীকার করেছে এরই মধ্যে লুহানস্ক এলাকায় ক্রেমিনা এবং আরো একটি ছোট শহরের দখল রুশ বাহিনীর হাত চলে গেছে। সেখানকার আঞ্চলিক প্রশাসক সেরহি হাইদাই জানাচ্ছেন, বিভিন্ন শহরের ওপর ভারী গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং চার জন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলছে, ডনবাস দখলের এই ‘নতুন অধ্যায়ে’ রাশিয়ার বাহিনী পুরো রণক্ষেত্র বরাবর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে জানাচ্ছে, গত রাত থেকে ইউক্রেনের ভেতরে ১,২৬০টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর তারা মিসাইল ছুঁড়েছে এবং ভারী কামান থেকে গোলাবর্ষণ করেছে। তারা বলছে, বিমান থেকে ছোঁড়া লক্ষ্যভেদী মিসাইল ডনবাস অঞ্চলের ১৩টি জায়গায় আঘাত করেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর সেøাভিয়ানস্কও রয়েছে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে। ডনেটস্ক অঞ্চলে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ইউক্রেনের একটি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করেছে। তবে কোন নিরপেক্ষ সূত্র থেকে এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

ডনবাস অঞ্চলে রুশপন্থী এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলছেন, রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ডোরা মারিউপোলের বিশাল আযোভস্টাল ইস্পাত কারখানায় ইউক্রেনের বাহিনীর শেষ অবস্থানের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এডুয়ার্ড বাসুরিন রাশিয়া-২৪ টেলিভিশন চ্যানেলকে জানিয়েছেন, এসব কমান্ডোদের সাহায্য করছে রুশ বিমান এবং গোলন্দাজ বাহিনী।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আবারও মারিউপোলের ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করার ডাক দিয়েছে। অস্ত্র নামিয়ে রাখলে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হবে বলে রুশ বাহিনী বলছে। সী অফ আযোভ উপকূলের মারিউপোল শহরের কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। গত মার্চ থেকে এই শহরের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার অনেকে রুশ বাহিনীর অবরোধের মুখে আটকা পড়ে আছেন।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের ওপর পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানোর আগে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে দুর্বল করে দেবার চেষ্টা করছে রাশিয়া। বিবিসির পল কারবি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ডনবাসের কথা বলেন তখন তিনি ইউক্রেনের কয়লা এবং ইস্পাত উৎপাদনকারী অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ দুটো অঞ্চল লুহানস্ক এবং দনিয়েৎস্ক-এর সমগ্র এলাকাকে বোঝান। এই এলাকা দক্ষিণের মারিউপোল বন্দর-শহর থেকে শুরু করে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটো মনে করে রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে নেয়ার মাধ্যমে দনিয়েৎস্ক থেকে ক্রাইমিয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠার করতে চায়।

‘মূল বিষয় হচ্ছে ক্রেমিলন এই অঞ্চলকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে যার অর্থ এই অঞ্চল ইউক্রেনের চেয়েও অনেক বেশি রাশিয়া,’ বলেন ব্রিটেনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট বা রুসির স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স। এসব অঞ্চলে রুশভাষী লোকেরাই বসবাস করেন, তাদের বেশিরভাগই রুশপন্থী। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর রাশিয়া দাবি করছে যে তারা লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ এবং দনিয়েৎস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

ক্রিমিনা শহরটি পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। শহর হাতছাড়া হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সার্গি গাইদে বলেন, ‘রোববার থেকে সোমবার ক্রেমিনাতে রাতে বড় ধরনের হামলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই শহরটিতে প্রবেশ করেছে। রুশ সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যায় সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে... ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ যোদ্ধারা পিছু হটে নতুন অবস্থানে চলে গেছে।’

ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ দেশের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দোনেতস্ক, লুহানস্ক এবং খারকিভ অঞ্চলের প্রায় পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর হামলাকারী আমাদের প্রতিরক্ষা ভেদ করার চেষ্টা করেছে। সৌভাগ্যবশত, আমাদের সামরিক বাহিনী (তাদের জায়গা) এখনও ধরে রেখেছে।’ অবশ্য পূর্ব ইউক্রেনে হামলা জোরদার করার পর রুশ সামরিক বাহিনী দু’টি এলাকার দখল নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। ওলেক্সি দানিলভ বলছেন, ‘ক্রিমিনা এবং ছোট অন্য একটি শহর (রুশ সামরিক বাহিনীর দখলে চলে গেছে)। কিন্তু এখনও লড়াই চলছে। আমরা আমাদের ভূখণ্ড কারও হাতে তুলে দেবো না।’

ক্রিমিনা শহরটি আঞ্চলিক প্রশাসনের কেন্দ্র ক্র্যামাতোরস্ক থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে শহরটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করা ছিল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য। সূত্র : এপি, বিবিসি. তাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ