Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা জোরদার

অভিযানের পরবর্তী পর্বে যোগ দিতে প্রস্তুত সিরিয়ার যোদ্ধারা মারিউপোল থেকে আরো এক ব্রিটিশ সেনা আটক রাশিয়ার সমস্যা হলে ইউরোপও সমস্যায় পড়বে : মেদভেদেভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানী কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে মুহুর্মুহূ রকেট ও বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। খারকিভে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৩ জন। মাইকোলাইভ শহরে ক্রমাগত রকেট হামলা চলছে। এদিকে, ইউক্রেন অভিযানের পরবর্তী পর্বে রুশ সেনাদের সাথে যোগ দিতে প্রস্তুত হয়েছে সিরিয়ার যোদ্ধারা।
নিপ্রো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জো ইনউড বলছেন হামলা সম্পর্কে সতর্ক করতে প্রায় সারাক্ষণই সেখানে বাজছে যুদ্ধের সাইরেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘হামলা চালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা চলছে। সাধারণ নাগরিকদের ওপর মর্টার আর রকেট হামলা চলছে।’ ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, রাশিয়া মারিউপোলকে একেবারে মাটির সাথে গুড়িয়ে দিতে চায়। শহরের কিছুই যেন আর অবশিষ্ট নেই। রাশিয়া শহরটিতে প্রবেশ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করছে বলে শহরের কর্মকর্তারা বলছে। তবুও এরই মধ্যে মারিউপোলে আত্মসমর্পণের জন্য রুশ আল্টিমেটামে সাড়া দেয়নি ইউক্রেন। যদিও রাশিয়া বলছে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধ লড়াই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দেনিস শেমহাল।

যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। মারিউপোল হচ্ছে আযভ সাগর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বন্দর। এটি লৌহ এবং ইস্পাত শিল্পের বড় কেন্দ্র। ইউক্রেনের বেশিরভাগ ইস্পাত, কয়লা এবং শস্য এই বন্দর দিয়েই রফতানি করা হয়। এটি হারালে ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য সেটি হবে আরেকটি বড় আঘাত। রাশিয়া যদি এই শহর দখল করতে পারে, তাহলে ক্রাইমিয়া থেকে রাশিয়া পর্যন্ত তারা একটি সরাসরি স্থল সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। এটি হবে রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং সামরিক বিজয়। রাশিয়া দাবি করছে, তারা শহরটির বেশিরভাগ এলাকায় পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে মারিউপোলের আযভস্টল ইস্পাত কারখানা, যেটিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইস্পাত শিল্প বলে গণ্য করা হয়, সেটি এখনো তারা দখল করতে পারেনি। অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান যোদ্ধারা সেখানেই আছে।

মারিউপোলের পতন হবে গত দু’মাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আযভস্টল ইস্পাত কারখানার ভেতর এখন প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনিয়ান সেনা আছে। সেখান থেকে তাদের বেরুবার পথ বন্ধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী। তবে মারিউপোলের মেয়রের একজন উপদেষ্টা টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তাদের বাহিনী এখনো প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের একজন এমপি, ওলেক্সি গনচারেনকোও বিবিসিকে বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি বলেন, ‘আমি গতকালই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানি যে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।’

ইউক্রেন অভিযানের পরবর্তী পর্বে যোগ দিতে প্রস্তুত সিরিয়ার যোদ্ধারা : ২০১৭ সালে সিরিয়া সফরের সময়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একজন সিরিয়ান জেনারেলের প্রশংসা করেছিলেন যার বিভাগ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের পরাজিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। পুতিন তাকে বলেছিলেন যে, রাশিয়ান সেনাদের সাথে তার সহযোগিতা ‘ভবিষ্যতে দুর্দান্ত সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুহেল আল-হাসানের বিভাগে এখন শত শত রাশিয়ান-প্রশিক্ষিত সিরীয় যোদ্ধা রয়েছে যারা ইউক্রেনে রাশিয়ান সৈন্যদের পাশাপাশি সিরিয়ার মরুভূমিতে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে লড়াই করার জন্য সাইন আপ করেছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত, সামনের সারিতে মোতায়েন করার আগে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য শুধুমাত্র অল্প সংখ্যকই রাশিয়ায় এসেছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা যুদ্ধের প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৬ হাজারের বেশি আবেদনের এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এবং সিরিয়া পর্যবেক্ষণকারী কর্মীরা বলছেন যে, এই অঞ্চল থেকে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যোদ্ধা ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দেয়নি।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের সাথে যুদ্ধের পরবর্তী পর্বের জন্য প্রস্তুতি নেয়ায় এটি পরিবর্তন হতে পারে। তারা বিশ্বাস করে যে, সিরিয়া থেকে যোদ্ধাদের আগামী সপ্তাহগুলিতে মোতায়েন করার সম্ভাবনা বেশি, বিশেষ করে পুতিন ইউক্রেনের নতুন যুদ্ধ কমান্ডার হিসাবে জেনারেল আলেকজান্ডার ডভোর্নিকভকে নামকরণ করার পরে, যিনি সিরিয়ায় রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর কমান্ড করেছিলেন।
যদিও কেউ কেউ প্রশ্ন করে যে সিরিয়ার যোদ্ধারা ইউক্রেনে কতটা কার্যকর হবে, শহরগুলি ঘেরাও করতে বা ক্রমবর্ধমান হতাহতের জন্য আরও বাহিনী প্রয়োজন হলে তাদের আনা যেতে পারে। ডভোর্নিকভ সিরিয়ার একাধিক আধাসামরিক বাহিনীর সাথে পরিচিত যেটি রাশিয়ার দ্বারা প্রশিক্ষিত ছিল যখন তিনি সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলিকে নির্মমভাবে অবরোধ ও বোমাবর্ষণের কৌশলটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
ইউক্রেনে ‘রাশিয়া একটি বৃহত্তর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে’ এবং সিরিয়ার যোদ্ধাদের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, আহমেদ হামাদা বলেছেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনী থেকে সরে আসা একজন যিনি এখন তুরস্কে অবস্থিত একজন সামরিক বিশ্লেষক। সিরিয়ার পর্যবেক্ষক ও কর্মীরা বলছেন, রাশিয়ানরা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সিরিয়ায় সক্রিয়ভাবে নিয়োগ করছে, বিশেষ করে রুশ-প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মধ্যে।

মারিউপোল থেকে আরো এক ব্রিটিশ সেনা আটক : ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল থেকে আটক করা একজন সাবেক ব্রিটিশ সেনাকে রুশ টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। শন পিনার নামের ৪৮ বছর বয়সী ওই সৈনিক বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের নৌসেনাদের সঙ্গে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন।
গত শনিবার রুশ গণমাধ্যমে প্রচারিত ছোট এক ভিডিওতে শন পিনারকে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা গেছে। ভিডিওতে তিনি বলছেন, ‘আমার নাম শন পিনার। আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক। মারিউপোল থেকে আমাকে আটক করা হয়েছে। আমি ৩৬ ব্রিগেড ফার্স্ট ব্যাটালিয়ন ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীতে কাজ করছিলাম। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ ধরে আমি মারিউপোলে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম। এখন আমি দোনেৎস্ক রিপাবলিকে আছি।’

ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে অথবা কীভাবে পিনার ধরা পড়েছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। তিনি তার ২৮ বছর বয়সী বন্ধু আইডেন আসলিনের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। আসলিন ছিলেন নটিংহামশায়ারের বাসিন্দা। গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে আসলিনের ব্যাটালিয়ন রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কমনওয়েলথ কার্যালয় জানিয়েছে, আটক হওয়া দুই ব্রিটিশ নাগরিককে সহায়তা দিতে ইতিমধ্যে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তবে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের তথ্য পেতে সমস্যা হচ্ছে এবং কনস্যুলার সেবা দেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শন পিনার যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারে বাস করতেন। প্রায় চার বছর আগে তিনি ইউক্রেনে পাড়ি জমান এবং স্ত্রীকে নিয়ে ডনবাসে থাকতে শুরু করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অ্যাংলিয়ান রেজিমেন্টের একজন প্রাক্তন সৈনিক।

রাশিয়ার সমস্যা হলে ইউরোপও সমস্যায় পড়বে : বিদেশী অর্থপ্রদানের ক্ষেত্রে রাশিয়ায় অচলাবস্থা দেখা দিলে ইউরোপেও হাইপারইনফ্লেশন এবং এর নিজস্ব অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ রোববার এ কথা বলেছেন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন যিনি বলেছিলেন যে, রাশিয়ার অচলাবস্থা সময়ের ব্যাপার। জবাবে মেদভেদেভ উল্লেখ করেছেন, ‘ঠিক আছে, দয়া করে চেষ্টা করুন।’ তিনি ‘দুটি সুস্পষ্ট বিষয়’ নির্দেশ করেছেন। ‘রাশিয়ার অচলাবস্থা ইউরোপের অচলাবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, উভয় নৈতিক এবং, বেশ সম্ভবত, বাস্তব,’ তিনি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, কারণ তার কথায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক ব্যবস্থা খুব স্থিতিশীল নয় এবং লোকেরা আস্থা হারাচ্ছে।
তদুপরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, হাইপারইনফ্লেশনের জন্য রাশিয়ানদের উপর দোষারোপ করা যায় না। এটি হবে দোকানে প্রাথমিক খাবারের অভাব এবং শরণার্থীদের আগমনের জন্য, যা অপরাধ তরঙ্গকে উস্কে দেবে,’ তিনি লিখেছেন, ‘এক্ষেত্রে, ব্রাসেলসের জনগণকে তাদের বাগ্মিতার পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায়, ময়দানের বীরদের গৌরবে ইউরোপের শহরের রাস্তায় টায়ারের দুর্গন্ধযুক্ত আগুন জ্বলবে।’ সূত্র : তাস, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ