Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিমানের অনিয়ম দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বাংলাদেশ বিমানের দুই এয়ারক্রাফটের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এয়ারক্রাফটের পেছনের হরিজেন্টাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙ্গে গেছে এবং একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটের নোজ ও ককপিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিমান দুটিকে গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে এ ধরণের আরো বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বিমান। হ্যাঙ্গারে দুই বিমানের এমন বিষ্ময়কর দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে এটা নিছক দুর্ঘটনাম নাকি নাশকতা? বিশৃঙ্খলা অঘটন যেন পিছু ছাড়ছে না দেশের পতাকাবাহী একমাত্র এভিয়েশন সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের। যেখানে বেসরকারি এভিয়েশন কোম্পানীগুলো সীমিত সম্পদ নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লাভজনকভাবে টিকে আছে, সেখানে বাংলাদেশ বিমান জনগণের ট্যাক্সের টাকায় অবকাঠামো সুবিধাসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা পেয়েও বছরে শত শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। বিমানের এয়ারক্রাফট লিজ গ্রহণ থেকে শুরু করে, সবধরণের প্রকিউরমেন্টে অস্বাভাবিক হারে দুর্নীতি-অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুর্নীতির অভিযোগে বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তা অপসারিত হলেও দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়না।

গতকাল কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে গত দুতিন মাসে সংঘটিত বিমানের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ফেব্রæয়ারীর ১৫ তারিখে মালয়েশিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ফেরার আগ মুহুর্তে বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফটের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়ার পর বিমানটিকে ফেরত আনা হয়। মার্চের ৬ তারিখে সিলেটের এমএজি ওসমানি বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে বিমানের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছরের প্রথম চারমাসেই বিমান বহরের ২১টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে ৪টিকে গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। বিমানের শিডিউল বিপর্যয় রোধে যেসব কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছিল, একের পর এক দুর্ঘটনায় গ্রাউন্ডেড হওয়ার কারণে একদিকে মেরামত বাবদ কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে শিডিউল বিপর্যয় ও আস্থার সংকট আরো বেড়ে চলেছে। গত রবিবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে দুই বোয়িং এয়ারক্রাফটের দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে টোম্যানের অনভিজ্ঞতাকে দায়ী করা হলেও বিমানের পুরো ম্যানেজমেন্ট এ দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ক্ষতিগ্রস্ত বিমান দুটি মেরামতের পেছনে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দুটি সুপরিসর বিমান দীর্ঘদিন গ্রাউন্ডেড থাকার কারণে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি বলে জানা যায়। বিমানের নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি-অস্বচ্ছতা, লোকসান ও শিডিউল বিপর্যয়ের ধারাবাহিক ঘটনাবলীর সাথে সাথে বেড়েছে একের পর এক দুর্ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি ও গ্রাউন্ডেড হওয়ার ঘটনা। রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে যা ইচ্ছা তা ঘটছে। কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

দেশের পাবলিক সেক্টরের প্রায় প্রতিটি খাতেই দুর্নীতি-অনিয়ম-লুটপাটের নজির থাকলেও বিমানের বিশৃঙ্খলা-অব্যবস্থাপনা যেন অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। দেশের পতাকাবাহী একমাত্র রাষ্ট্রীয় এভিয়েশন সংস্থাটির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও দুর্নীতি-অনিয়ম লুটপাটের কারণে তা যেন রাষ্ট্রের বোঝায় পরিনত হয়েছে। হেন কোনো অঘটন নাই যা ঘটছে না। অথচ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা ও দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বিমান যে লাভজনক হতে পারে বিভিন্ন সময়ে তার নজির আছে। বিগত এক-এগারো ত্বত্ত¦াবধায়ক সরকারের দুই বছরে বাংলাদেশ বিমান লাভ করলেও ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিমান। জ্বালানি বাবদ বিপিসি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমানের ঋণের পরিমান কয়েক হাজার কোটি বলে জানা যায়। একেকটি অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার পর এর পেছনে নাশকতা, স্যাবোটাজ, সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ইত্যাদি অভিযোগ উঠে আসে। বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ তদন্তেও নানা তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তেও উড়োজাহাজ কেনা, লিজ নেয়া, ভাড়া নেয়া, রক্ষণাবেক্ষণ, কার্গো হ্যান্ডেলিং এবং টিকিট বিক্রিসহ বিমানের ৮টি খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত হলেও প্রতিকার হয়নি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার কথাও শোনা গিয়েছিল। তিন মাসে চারটি বিমান গ্রাউন্ডেড হওয়া এবং আবারো বিমানকে ফ্লাইট ও শিডিউল বিপযর্য়ের মধ্যে ঠেলে দেয়ার পেছনে কোনো চক্রের নাশকতার যোগসুত্র থাকার আশঙ্কা অগ্রাহ্য করা যায়না। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের একশ্রেণীর নি¤œ স্তরের কর্মচারী পর্যন্ত নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার তথ্য বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। জনগণের রাজস্বের টাকায় উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ে, যাত্রীর সংখ্যাও বাড়ে, সেই সাথে লোকসানের অঙ্কও বাড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এ পরিস্থিতি চলছে। বিমানের ভেতরে বাইরের একটি চক্র দুর্নীতি, অপচয় ও নাশকতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছে। এদের শক্তির উৎস কোথায়? এদের খুঁজে বের করতে হবে। শুধু তদন্ত করেই ক্ষান্ত হলে চলবে না, এর সাথে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিমানকে সুশৃঙ্খল এবং যাত্রীসেবা বিশ্বমানের করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Mohi Uddin ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫১ এএম says : 0
    যাত্রী বেড়েছে, বহরে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজও বেড়েছে। তারপরও লোকসান দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ জন্য অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম–দুর্নীতি দায়ী
    Total Reply(0) Reply
  • K M Rashedul Islam ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৩ এএম says : 0
    আর্থিক এই দুরবস্থার মধ্যেও চলেছে অনিয়ম-দুর্নীতি। কর্তাব্যক্তিদের অদক্ষতা ও গাফিলতির কারণেও হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি। এরই মধ্যে উড়োজাহাজ কেনা, ভাড়া নেওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং কার্গো শাখায় ও টিকিট বিক্রিসহ বিমানের ৮টি খাতে দুর্নীতি হয় বলে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shahin ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৩ এএম says : 0
    বিমানের দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী অদক্ষ ব্যবস্থাপনা। সেই সূত্র ধরে আছে ব্যাপক অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ। এই অবস্থায় বিমানকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রথম দরকার একটা দক্ষ ব্যবস্থাপনা, যা গত ৪৭ বছরেও হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • ABDUL MAJID QUAZI ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৬ এএম says : 0
    বিমানের পরিচালক কর্মকর্তারা পরিচালনায় অদক্ষ হলেও দুর্নীতিতে দক্ষ ও পারদর্শী । তাদের পারদর্শিতার শিকার আমি নিজেও।
    Total Reply(0) Reply
  • ABDUL MAJID QUAZI ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৫৭ এএম says : 0
    দুর্নীতি যেখানে প্রাধান্য পায় সেখানে দক্ষতা বিলীন হয়ে যায়। অনিয়ম তাতে সঙ্গী হয়। যেহেতু সরকারী তাই বেতন ভাতা থাকবে জারি । তা নিশ্চিত জেনে চলছে দুর্নীতির মহামারী । কঠোর শাস্তি কি দমন করতে পারবে দুর্নীতি ?
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৫২ এএম says : 0
    যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করা হবে না ততদিন পর্যন্ত দুর্নীতি শুধু বাড়তেই থাকবে বাড়তে থাকবে বাড়তে থাকবে আর আমরা শুধু মার খেতেই থাকবো মার খেতেই থাকবো মার খেতেই থাকবো সরকারের কাছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান

১৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন