Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অতি শিগগিরই পূর্ণ আক্রমণ চালাবে রাশিয়া : ইউক্রেন

রাশিয়া অবশ্যই কিয়েভ দখলে নেবে : রমজান কাদিরভ ইউক্রেনে পাঠানো সেøাভাকিয়ার এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস ষ ক্রামাটরস্ক হামলা নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ না করতে হুঁশিয়ারি চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রাশিয়া কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বে একটি বড় সামরিক আক্রমণ শুরু করতে পারে। রোববার রাতে এ দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ‘বিমান থেকে ট্যাঙ্ক পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক প্রযুক্তির প্রয়োজন’। এদিকে, রাশিয়ার চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের নেতা রমজান কাদিরভ বলেছেন, রাশিয়া অবশ্যই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দখল নিবে।

রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইউক্রেনের পূর্বে কয়েক হাজার সৈন্য রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাশিয়া পুণরায় অভিযান শুরু করলে সেটি সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। তার সর্বশেষ গোয়েন্দা আপডেটে, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে, ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল।

ইউক্রেনীয় বাহিনী ‘বেশ কয়েকটি আক্রমণ প্রতিহত করেছে’, যার ফলে ‘রাশিয়ান ট্যাঙ্ক, যানবাহন এবং কামান সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে’, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যোগ করেছে। তাদের দাবি, রাশিয়া অবিরত বোমা হামলার উপর নির্ভর করে চলেছে যা ‘লক্ষ্য স্থাপন এবং হামলা পরিচালনা করার সময় তাদের বৈষম্য করার ক্ষমতা হ্রাস করে’, ফলে বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, আগামী সপ্তাহটি ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ হবে, রাশিয়ার সাথে ‘হারানোর ভয় আরও বেশি... ভয় যে সত্য স্বীকার করতে হবে’। ‘রাশিয়ান সৈন্যরা আমাদের রাজ্যের পূর্বে আরও বড় অভিযানে যাবে,’ তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের বিরুদ্ধে আরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি আরও বেশি বিমান বোমা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আমরা তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা জবাব দেব।’ সূত্র: স্কাই নিউজ।

রাশিয়া অবশ্যই কিয়েভ দখলে নিবে : রাশিয়ান বাহিনী কেবল ইউক্রেনের মারিউপোল বন্দরই নয়, একই সঙ্গে রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরগুলোতে আক্রমণ করবে। গতকাল ভোরে এ কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রভাবশালী নেতা রমজান কাদিরভ। নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি ভিডিও পোস্ট করে কাদিরভ বলেন, ‘তারা (রুশ বাহিনী) আরও আক্রমণাত্মক হবে। কেবল মারিউপোল নয়, অন্যান্য জায়গা, শহর এবং গ্রামেও। লুহানস্ক এবং ডোনেৎস্ক, আমরা প্রথমে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করবো। তারপর কিয়েভ এবং অন্য সব শহরও দখলে নিয়ে নেবো।’

সেøাভাকিয়ার এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, রুশ সামরিক বাহিনী রোববার ডিনিপ্রো শহরের কাছে সেøাভাকিয়া কর্তৃক ইউক্রেনকে সরবরাহ করা এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ মস্কোতে একটি দৈনিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘রোববার, ১০ এপ্রিল, দনেপ্রোপেট্রোভস্ক শহরের দক্ষিণ উপকণ্ঠে, উচ্চ-নির্ভুল সমুদ্র-ভিত্তিক কালিব্র ক্ষেপণাস্ত্র একটি হ্যাঙ্গারে লুকানো একটি এস-৩০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে, যা ইউরোপের একটি দেশ দ্বারা কিয়েভ শাসনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল’।

তিনি আরো বলেন, চারটি এস-৩০০ লঞ্চার ধ্বংস এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ২৫ জন সদস্যও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ডোনেটস্কের ভেলিকা নোভোসিল্কা বসতির কাছে আরো দুটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বুক-এম ১ এবং ওসা একেএমসহ একটি মেরামত সুবিধা উচ্চ-নির্ভুল বায়ু-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।

এছাড়াও, গত রাতে দুটি গোলাবারুদ ডিপো, একটি এস-৩০০ রাডার, নয়টি ট্যাঙ্ক, পাঁচটি স্ব-চালিত আর্টিলারি, পাঁচটি একাধিক রকেট লঞ্চার এবং ৬০টিরও বেশি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে, মুখপাত্র বলেছেন। তিনি ইউক্রেনে রাশিয়া যাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে তার একটি সামগ্রিক বিবরণও দিয়ে বলেছেন, প্রায় ২৩০ বিমান ও হেলিকপ্টার এবং ২৪৩টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, ধ্বংস হওয়া অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০টি ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সাঁজোয়া যুদ্ধ যান এবং ২৩৯টি বিভিন্ন রকেট লঞ্চার ছিল।

ক্রামাটরস্ক হামলা নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ না করতে হুঁশিয়ারি : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের ক্রামাটরস্ক শহরের একটি রেলস্টেশনে শুক্রবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেইজিং সব পক্ষকে শান্ত থাকার এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এড়াতে অনুরোধ করছে।

‘আপনি উল্লেখ করেছেন যে রেলওয়ে স্টেশনে হামলার রিপোর্টের জন্য, সত্য এবং কারণ অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে, আমরা বিশ্বাস করি যে, মানবিক সমস্যাগুলো নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয় এবং সমস্ত অভিযোগ সত্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত,’ তিনি উল্লেখ করেছিলেন। ‘পক্ষগুলোকে ভিত্তিহীন অভিযোগ এড়াতে হবে এবং তদন্তের সিদ্ধান্তে উপস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত শান্ত থাকা উচিত,’ কূটনীতিক বজায় রেখেছিলেন।

ঝাও লিজিয়ান আরও উল্লেখ করেছেন যে, চীন ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতির প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির বিষয়ে উদ্বিগ্ন। রাশিয়া এই ঘটনার সাথে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চীন বিশ্বাস করে যে, ‘পরিস্থিতির একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত’ হওয়া উচিত।

গত ৮ এপ্রিল, বর্তমানে ইউক্রেনীয় বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ক্রামতোর্স্ক শহরের একটি রেলওয়ে স্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং প্রায় ১০০ জন আহত হয়। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর, কিয়েভ মস্কোর উপর দোষ চাপায়। রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য কিয়েভের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যেম রাশিয়ান সৈন্যরা ৮ এপ্রিল ক্রামতোর্স্কে কোনও যুদ্ধ মিশন পরিচালনা করেনি।

উপরন্তু, মন্ত্রণালয় জোর দিয়েছিল যে ক্রামাটরস্ক রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পাওয়া প্রক্ষিপ্ত টুকরোগুলো তোচকা-ইউ-এর অন্তর্গত। এটি একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র যা শুধুমাত্র ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, ক্রামাটরস্কের ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ইউক্রেনীয় অধিষ্ঠিত শহর ডোব্রোপলির কাছে একটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটালিয়ন এই মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল। সূত্র : তাস, রয়টার্স, ডেইলি সাবাহ।



 

Show all comments
  • টুটুল ১২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৫১ এএম says : 0
    দ্রুত যুদ্ধ শেষ হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • হরেশ্বর বাবু ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৪ এএম says : 0
    আমি চাই না যুদ্ধ যুদ্ধের পক্ষে আমি নই ধ্বংস করা সহজ কিন্তু সৃষ্টি করা বড়ই কঠিন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohasin Ali ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৩ এএম says : 0
    আমি ইউক্রেনের জনসাধারণের কান্না দেখে মোটেও বিচলিত নই।কারণ আমি আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, লিবিয়া,ইরাক,কাশ্মীর, ইয়েমেন, বসনিয়া ,আরকান,লেবানন সিরিয়ান বৃদ্ধা নর-নারী,বাচ্চাদের বিবস্ত্র আহাজারি দেখে বড় হয়েছি
    Total Reply(0) Reply
  • Md Azmal Hossain ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৫ এএম says : 0
    নেটো কখনোই রাশিয়াকে আক্রমণ করার সাহস রাখেনা। কারণ রাশিয়াকে আক্রমণ করলে নিমিষেই পুরো ইউরোপ বিদ্যুৎ মুক্ত অর্থাৎ অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া রাশিয়ার অস্ত্রের মান কিন্তু নেটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahjahan Bikram ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৬ এএম says : 0
    “যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। ন্যাটো মুক্ত বিশ্ব চাই।” বিশ্ব শান্তি রক্ষা ও বিশ্ব যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য ন্যাটো ভেংগে ফেলা এখন সময়ের দাবী।
    Total Reply(0) Reply
  • Manzurul Islam ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৭ এএম says : 0
    ইউক্রেন দিয়ে রাশিয়াকে ধীরে ধীরে দুর্বল করবে, তারপর ন্যাটো রাশিয়াকে ঘেরাও দিয়ে আক্রমণ করবে। আমেরিকার পরিকল্পনা অনুযায়ী সব হচ্ছে, পুতিনের উচিত হয়নি এই যুদ্ধ বাজানো, সব জায়গায় জোর দেখাতে নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Al Faiz Piplu ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৪৭ এএম says : 0
    সেই অপেক্ষায় রাশিয়া এখনো S400 এবং যুদ্ধ বিমান গুলো ব্যবহার করে নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া-ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ