Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিলাবৃষ্টিতে তছনছ ঠাকুরগাঁওয়ে ফসলের মাঠ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

চৈত্রের শেষ দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। সেই সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টি। এতে শিলাবৃষ্টি যেন তাণ্ডব চালিয়েছে ফসলি খেতে। গতকাল রবিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে শিলার আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের। একই সঙ্গে ঝড়ে গেছে আমের মুকুল।
জেলার পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রুহিয়ায় প্রায় আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টির দাপটে আম, লিচু, তরমুজ, ভুট্টা, গম, ধান, জামসহ উঠতি মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া গাছপালা ও অনেক ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তবে ক্ষতি নিরুপণে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী এলাকার মরিচ চাষি ফরিদুল ইসলাম জানান, মরিচে পাক ধরেছে। কয়েকদিন পরই মরিচ তোলার কথা ছিল তার। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে দুই বিঘা জমির মরিচ ঝরে পড়েছে। প্রতিবছর মরিচ বিক্রি করেই তিনি সংসারের সিংহভাগ খরচ বহন করে থাকেন। এবার কি করবেন বুঝতে পারছেন না। বললেন, ফসলের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়তো জমি বন্ধক রাখতে হবে।

আম বাগান ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম বলেন, শিলাবৃষ্টিতে সাড়ে তিনশ’ গাছের আমের গুটি ও পাতা ঝরে গেছে। আমি একদম পথে বসে গেলাম। এর আগে ঠাকুরগাঁও সদরের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। সে ধকল সামলাতে না সামলাতেই আবারো শিলাবৃষ্টি আমার সবকিছু সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। গাছে যেসব আমের গুটি আছে তা দিয়ে আর কোনো স্বপ্ন দেখতে চাই না। আমার পথে বসার জোগাড় হয়েছে।
রানীশংকৈলের লেহেম্বার ভুট্টা চাষি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে ভুট্টার মাঠ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ভুট্টার মোচাগুলো পাথরের আঘাতে ভেঙে পড়েছে। গাছগুলো ভেঙে শুয়ে গেছে। আমার ৭ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি প্রায় তিন লাখ টাকা।
ঠাকুরগাঁও জেলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন আকস্মিক শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার সত্যতা স্বীকার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলব।

নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে তিন শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে দুই উপজেলার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। এতে ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ডোমার উপজেলার চিলাহাটিসহ অনেক এলাকা।
আকস্মিক এই ঝড়ে ডোমার ও ডিমলা উপজেলার প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলের ক্ষেত। ডোমারের চিলাহাটিতে স্থানীয় দোকানপাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপজেলার চিলাহাটি বাজারে ব্যবসায়ী আশরাফ কাজল জানান, দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ ঝড় শুরু হয়। মাত্র দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী ঝড়ে চিলাহাটি বাজারের অসংখ্য দোকানপাটের ছাউনি উড়ে গেছে। চিলাহাটি সরকারি কলেজের সামনে ১১ হাজার কেভি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ঝড়ে ভোগডাবুড়ি ও কেতকিবাড়ি ইউনিয়নে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় অন্তত তিন শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এ সময় অসংখ্য গাছপালা রাস্তায় ওপরে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িক বিছিন্ন হয়ে পড়ে। একইভাবে উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নেও ঝড় বয়ে গেছে। এতে উঠতি ভুট্টা ও বাদাম ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম কালু বলেন, আমার ইউনিয়নের চিলাহাটি বাজার, বউবাজার ও বোতলগঞ্জ এলাকাসহ চারটি ওয়ার্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অপর পাঁচটি ওয়ার্ডে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া, খগাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপনী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এসব ইউনিয়নে অন্তত এক হাজার কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

বালাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দুই থেকে তিন মিনিটের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘরের চাল উড়ে ও গাছ ভেঙে সড়কে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে গাছপালা সরানো হয়েছে।
ডোমার ও ডিমলা উপজেলা প্রশাসন জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



 

Show all comments
  • মোঃ আবু হাসান ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৬:৩২ এএম says : 0
    এটা আল্লাহর আসমানী গযব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিলাবৃষ্টি

১০ এপ্রিল, ২০২১
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ