মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন সঙ্কট ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও ন্যাটো জোটের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি দিন বাড়ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ গতকাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা সত্তে¡ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্রান্স ‘ন্যাটোকে বিভক্ত’ করছে।
এদিকে, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন যে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছিল ইইউ পরিচালনা পর্ষদ ইউরোপীয় কমিশন; জার্মানি, হাঙ্গেরিসহ কয়েকটি দেশের আপত্তিতে তা আটকে গেছে। এমনকি হাঙ্গেরি রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে মস্কো থেকে গ্যাস কিনতে রাজি হয়েছে। এর আগে রোববারের নির্বাচনে হাঙ্গেরি ও সার্বিয়াতে পুতিনপন্থী নেতাদের ভ‚মিধস জয় ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে মনোভাবের অন্তর্নিহিত দ্ব›দ্বকে তুলে ধরে। জার্মানিতে বসবাসরত রাশিয়ানদের প্রতি ক্রমবর্ধমান বৈরিতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গত রোববার বার্লিনে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন ইউক্রেন আক্রমণের সমর্থনকারীরাও। তবে দেশটির রাজনীতিবিদরা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ওই সমাবেশে ৪০০টি গাড়ি ও প্রায় ৯০০ বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছিলেন। গাড়িগুলোতে রাশিয়ার পতাকা আঁকা ছিল এবং একটিতে ‘জেড’ চিহ্ন ছিল, যার অর্থ ছিল রাশিয়ার অভিযানের সাথে একাত্মতা।
অংশগ্রহণকারীরা দেশাত্মবোধক রাশিয়ান গান গেয়েছেন বলে জানা গেছে। সংগঠক হিসাবে চিহ্নিত একজন গাড়ি মেকানিক ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেয়ার তার গাড়ির সামনে ‘আমরা কি পরবর্তী শিকার?’ সেøাগান লিখে রেখেছিলেন। তিনি নাৎসিদের অধীনে ইহুদিদের নিপীড়নের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানিতে রাশিয়ানদের উপরে নিপীড়নের সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে, জার্মান স্কুলগুলোতে রাশিয়ার বিষয়ে যে প্রোপাগÐা চালানো হচ্ছে তাতে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। জার্মানিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রি মেলনিক বলেছেন, তিনি আতঙ্কিত হয়েছিলেন এ বিক্ষোভ দেখে।
জার্মানি, ফ্রান্স, হাঙ্গেরিসহ অনেক দেশই নিষেধাজ্ঞার বদলে রাশিয়ার সাথে আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছে। ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেয়া নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কাজে আসছে না। বরং ইইউ সদস্যসের মধ্যে বিরোধ আরও বেড়েছে। পাশাপাশি, ইউরোপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইইউ জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ ও ন্যাটোর অন্যতম সদস্য জার্মানিতে পুতিনের পক্ষে বিশাল সমাবেশও হয়েছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, জার্মানি এবং তুরস্কের সাথে, পুতিনের সাথে একটি উন্মুক্ত সংলাপের পথ খোলা রাখতে চায়, যখন মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলো একটি পরিষ্কার বিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন যখন ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে ব্রাসেলসে মিলিত হয়েছিল।
পোল্যান্ড এবং বাল্টিক রাজ্যগুলো উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়া যে কোনও ফলাফলকে বিজয় হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে তা ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলবে। তবে ন্যাটো কর্মকর্তারা একমত যে, যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বে ধীরগতিতে অগ্রগতি করছে। বুচা হত্যাযজ্ঞের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে ন্যাটো বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা নয়, অস্ত্রের দিকে মনোনিবেশ করা হবে। ম্যাখোঁ বারবার পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্য কাজ করেছেন, ফেব্রæয়ারির শুরু থেকে, রাশিয়ান নেতাকে ১৬ বার ফোন করেছেন এবং মস্কো ভ্রমণ করেছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সংলগ্ন শহর বুচায় গণহত্যার প্রতিবাদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন একপ্রস্থ নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রস্তুত করেছিল ইউরোপীয় কমিশন। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন সেই খসড়া তুলে ধরেন। কিন্তু বুধবারের বৈঠকে এই প্রস্তাবনা উত্থাপনের পর তা কার্যকরে আপত্তি জানায় জার্মানি, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের কয়েকটি রাষ্ট্র। ফলে সেই প্রস্তাবনা বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্যতম সদস্য দেশ হাঙ্গেরি রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে গ্যাস কিনতে রাজি হয়েছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অরবান বলেন, রাশিয়া চাইলে গ্যাসের চালানের মূল্য রুবলে পরিশোধ করবে তার দেশ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সতর্ক করেছেন যে, রুবলে মূল্য পরিশোধ না করলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো এর আগে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে ইইউ কর্তৃপক্ষের ‘কোনো ভ‚মিকা’ নেই। এটি হাঙ্গেরির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এমভিএম এবং গ্যাজপ্রমের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। হাঙ্গেরির এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
পুতিনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে : হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়ার সংসদীয় নির্বাচন উভয় দেশে দীর্ঘকাল ধরে, পুতিনপন্থী নেতাদের জন্য ভ‚মিধস জয় এনেছে। রোববারের নির্বাচনেও বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এবং সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুসিক। এ দিনই ইইউ’র সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ জার্মানিতেও পুতিনের পক্ষে বিশাল সমাবেশ হয়েছে। এসব ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইউরোপজুড়ে পুতিনের প্রভাব ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
অরবানের ডানপন্থী ফিদেজ পার্টি ৫৩ শতাংশের বেশি ভোট জিতেছে, যা ভোটারদের এবং আরও উদারপন্থী বিরোধী দলগুলোর একটি পশ্চিমা-মুখী জোট উভয়কেই হতবাক করে দিয়েছে। ভোটারদের কাছে অরবানের ১২ বছরের সুশাসন এবং মস্কো এবং বেইজিংয়ের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক রাখা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সার্বিয়ায়, ভুসিক প্রায় ৪০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা নিকটতম বিরোধী প্রার্থীর সাথে সরাসরি জয়লাভ করেন। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো যে কোনও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিরঙ্কুষ জয়লাভ করেছেন।
ফলাফলগুলো হাঙ্গেরিয়ান এবং সার্বিয়ান ভোটারদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদার মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ত্বরান্বিত প্রবাহের উপর জোর দিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান উভয় দেশের প্রচারাভিযানে একটি বড় ভ‚মিকা পালন করেছিল এবং বিশ্লেষকরা বলছেন যে, সংঘাতটি ক্ষমতাসীনদের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সাহায্য করেছিল। সার্বিয়ার ভোটাররা প্রধানত পশ্চিমাপন্থী নীতির সাথে চিহ্নিত গোষ্ঠীগুলিকে এড়িয়ে চলে, যখন ইইউতে পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে ওরবানের খ্যাতি তার সমর্থকদের রাশিয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে দেখতে পরিচালিত করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথে, সার্বিয়া ভুসিকের অধীনে রাশিয়াপন্থী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি সংশয় ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ মাসে হাঙ্গেরিয়ান পোলস্টার পাবলিকাসের একটি জরিপ দেখায় যে, ভোটারদের মাত্র ৪৪ শতাংশ ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়াকে আগ্রাসী বলে মনে করে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এপি, দ্য টেলিগ্রাফ, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।