শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
আজ চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর মৃত্যু দিবস। বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ১৮৮১ সালে ২৫ অক্টোবর স্পেনে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৮ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে অনন্তের পথে যাত্রা শুরু করেন।
পাবলো পিকাসো সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম। বহুগুণের গুণান্বিত এই শিল্পী, একাধারে দক্ষ একজন ভাস্কর, মৃৎশিল্পী, পোশাক ও প্রসিদ্ধ একজন মঞ্চসজ্জাশিল্পী ছিলেন। তিনি প্রায় বিশ হাজারের মত শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন। তিনি কবিতা, নাটকেও ছিলেন খুব দক্ষ এক প্রাণ। তিনি তাঁর চিত্রকর্মের মাধ্যমে চিত্রশিল্পের সংজ্ঞাই যেন বদলিয়ে ফেলেছিলেন। কোলাজ শিল্পটির উদ্ভাবনেও তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চিত্রশিল্পকে এমন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন, এমন নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাঁর ছবির যে বিশ্বব্যাপী বহু চিত্রশিল্পী পিকাসোর প্রভাব এড়াতে পারেননি। অসামান্য বৈপ্লবিক শিল্পকীর্তির জন্য পাবলো পিকাসো চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পিকাসো প্রথমে ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন পরে ঘোরতর নাস্তিক হয়ে ওঠেছিলেন। পিকাসোর বাবা রুইজ নিজে একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন এবং প্রকৃতিকেন্দ্রিক ছবি বিশেষত পাখির ছবি আঁকাই তাঁর বিশেষত্ব ছিল। তিনি চারুকলা বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং যাদুঘরের তত্বাবধায়ক ছিলেন। এই রঙ্ তুলির পরিবেশে বেড়ে ওঠায় খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে পিকাসোর। মাত্র সাত বছর বয়সেই পিকাসো বাবার কাছ থেকে প্রাণীশরীর অঙ্কন এবং তৈলচিত্রের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিকাসো একটি সম্পূর্ণ তৈলচিত্র অঙ্কন করেছিলেন। বাবা তাঁর পিকাসোর এই অসামান্য প্রতিভাকে চিনেছিলেন এবং যত্নসহকারে লালন করেছিলেন। তাঁর বাবা নিজ হাতে ছেলেকে ছবি আঁকা শেখান। কারণ তিনিও একজন চিত্রকর ছিলেন। ফিগার ড্রইং এবং তৈলচিত্রের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি তাঁর বাবার কাছেই।
পিকাসোর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে-
ল্যা মুল্যাঁ দা ল গালেৎ, দ্য ব্লু রুম, ওল্ড গিটারিস্ট, দ্য উইপিং ওম্যান, লেস ডেমোঁয়সেলেস ডি’এভিগনন,
সেলফ-পোর্ট্রটে, টু নুডস, আভাগঁর রমণীরা, থ্রি মিউজিশিয়ানস, স্কাল্পটর, মডেল অ্যান্ড ফিশবৌল, থ্রি ড্যান্সার্স, গিটার, গ্লাস অব আবস্যাঁৎ, সিটেড বাথার, পালোমা ও গোয়ের্নিকা।
পিকাসো সাধারণত রাত দশটা-এগারোটা থেকে আঁকা শুরু করতেন। চলত সারা রাত। একের পর এক অসাধারণ সৃষ্টি করে গিয়েছেন। অসম্ভব জীবনীশক্তি নিয়ে জীবনের শেষ দিন অবধি শিল্পচর্চা করে গিয়েছেন। দর্শক যখন ছবি দেখে, সে তো শুধু বিষয়বস্তু দেখে না। কাজের মধ্যে শিল্পীর যে এনার্জি রয়েছে, যে মন এবং নান্দনিক বোধ রয়েছে, তাকেও অনুভব করে। মানুষের মুখ, চেহারা, ল্যান্ডস্কেপ পিকাসোর যে কোনও ছবি আমরা যখনই দেখি, তাঁর সেই প্রচণ্ড শারীরিক এবং মানসিক এনার্জি উপলব্ধি করা যায়। এই এনার্জির সঙ্গে মিশেছিল নন্দনতত্ত্ব। নানা পর্যায় রয়েছে তাঁর কাজে। একেবারে গোড়ার দিকে বাস্তবধর্মী ছবি। পরের পর্যায়টি ‘ব্লু পিরিয়ড’। তখন তিনি চরম দারিদ্রের মধ্যে। রেস্তোরাঁয় খেতে আসা রুগ্ন, জীর্ণ চেহারার গরিব মানুষের ছবি আঁকতেন। এ ছবিগুলো ছিল মূলত নীল রঙে আঁকা। তখন থেকেই তিনি পরিচিত হতে শুরু করেন। শিল্পমাধ্যমের ওপর তাঁর ক্ষমতা, প্রতিভা স্বীকৃতি পেতে থাকে। পিকাসোর সৃষ্টিশীলতা ছিল বাঁধনহারা, সব সময়ই নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করতেন। যদিও উনি নিজে বলতেন, ‘আমি কিছু খুঁজি না, আমি পেয়ে যাই।’ তিনি ছবিতে যে রকম নান্দনিকতা এঁটে দিয়েছিলেন, সেই সময় ছবিতে এই ধরনের নান্দনিক শারীরিক বিকৃতি অন্য কেউ আনতে পারেননি। আসলে পিকাসো নিজে জানতেন, কখন সৃষ্টিশীলতার কোন ঝোঁক প্রয়োগ করলে ছবি অসামান্য হয়ে উঠবে।
পিকাসোর একটি বিখ্যাত ছবি ‘উইপিং উওম্যান’। সেই সময় প্রেমিকা ডোরা মার-এর সঙ্গে পিকাসোর বিচ্ছেদ ঘটছে, তিনি অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ডোরা’র কান্নামাখা বিকৃত মুখের ছবি আঁকলেন তিনি। শুধু ইনিই নন, পিকাসোর জীবনে অনেক মহিলা এসেছেন। এবং প্রত্যেকেই তাঁর শিল্পকাজকে নানা ভাবে প্রভাবিত করেন। তাঁদের সংস্পর্শে এসে প্রচুর ছবি তিনি এঁকেছিলেন। অদ্ভুত শিল্পকীর্তির জন্ম দিয়েছিলেন। মারি থেরেস-এর খেলোয়াড়সুলভ চেহারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভাস্কর্য করেছিলেন। শেষ জীবনটা যাঁর সঙ্গে কাটিয়েছিলেন, সেই জ্যাকেলিন নিজেও ছিলেন পিকাসোর অনেক ছবির মডেল।
নিছক শিল্পীসত্তার জন্য নয়, পিকাসোর এই বর্ণময় চরিত্রটার কারণেই তিনি সবার এত পছন্দের। নাটক লিখতেন, সঙ্গে ছোট ছোট কবিতাও। সেরামিক পট-এর ওপর তাঁর সাবলীল ড্রইং অপূর্ব। ভাস্কর্যগুলোও মোটেই গতানুগতিক ছিল না। নানা ছুটকো জিনিস জোগাড় করে সেগুলো দিয়ে তিনি ভাস্কর্য করেছেন। তাঁর তৈরি ব্রোঞ্জের গর্ভিণী ছাগল বিখ্যাত। সেটার পেটের মধ্যে একটা ঝুড়ি ঢুকিয়ে তিনি এটি তৈরি করেন। আবার, একটা সাইকেলের সিটে সাইকেলের হ্যান্ডলটা শিং-এর মতো ফিট করে এক লহমায় এনে দেন পশুর মাথার আদল।
এই সব কিছুর সঙ্গেই তাঁর গভীর আত্মিক যোগ ছিল। আদ্যন্ত এক শিল্পীর জীবন তিনি কাটিয়ে গিয়েছেন। তাঁর প্রত্যেকটা ছবির মধ্যেই আসল মানুষটাকে খুঁজে পাওয়া যায়। ‘ওয়ার্ল্ড আর্ট’-এ তিনি যে বৈপ্লবিক অবদান রেখে গিয়েছেন, তা অন্য কারও মধ্যেই দেখা যায় না। সেখানে তাঁর অবস্থান এতটাই তীব্র, মনে হয় না অন্য কোনও শিল্পী পাবলো পিকাসোকে শিল্পে তাঁর জায়গা থেকে সরাতে পেরেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।