Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই যুদ্ধের অবসান সম্ভব

রাশিয়ায় নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না চীন-ইইউ ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত রুশ হেলিকপ্টার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ইতি টানতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাই মুখ্য, এমনটাই মনে করে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ফোন করেন এবং আশ্বাস দেন ন্যাটো সম্প্রসারণ হবে না, ইউক্রেনে কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন করবেন না এবং নিরপেক্ষতা ধরে রাখবে তাহলে এ বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব। গতকাল বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপীয় বিষয়ক মহাপরিচালক ওয়াং লুতং।
বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লুতং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতলব কী? তারা কি অস্ত্রবিরতি চায় নাকি রাশিয়াকে দুর্বল করতে চায়? তারা তো সরকার পরিবর্তনের হুমকি দিচ্ছে। যদি অস্ত্রবিরতি চায় তাহলে এটা দ্রুতই করা সম্ভব। চীনা এ কূটনৈতিক বলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত করা হবে না। কিংবা কোনো ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবে না। পাশাপাশি নিরপেক্ষ থাকবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন প্রতিশ্রুতি দিলেই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অবসান হতে পারে। ওয়াং জানান, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির ইচ্ছা প্রকাশ করলেই এ সমস্যাটি খুব সহজেই সমাধান করা যেতে পারে।
শুক্রবারের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-চীনের বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছে বেইজিং। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে চীন নিজেদের নিরপেক্ষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। যদিও চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ সপ্তাহের বৈঠকে তাদের কৌশলগত সম্পর্কের বিষয়ে উভয়েই পুনরায় আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে, রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে চীন তাদের ভাবমর্যাদাকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে সতর্ক করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিয়েন।
তবে শুক্রবারের বৈঠকের পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি ইউক্রেনে অভিযানের মুখে ‘চীন এবং ইইউ’র অস্থিতিশীল বিশ্বে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা উচিত’ বলে মত দিলেও যুদ্ধ থামাতে কোনও প্রস্তাব দেওয়ার আগ্রহ দেখাননি। এদিনের বৈঠকে চীন ইইউকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে, তারা ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবে। তবে তা তাদের নিজেদের মতো করে। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার চাপকে দূরে ঠেলে দিয়েছে চীন।
বিবিসি জানায়, একটি টুইটে লিয়েন লেখেন, ‘যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে আরো বিঘ্ন কারো স্বার্থের পক্ষেই যায় না’। ইইউ দেশগুলো যেখানে মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেখানে চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের কোনোরকম নিন্দা করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডার লিয়েন বলেন, রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাতে বলার একটি ‘বিশেষ দায়িত্ব’ রয়েছে চীনের। শুক্রবারের বৈঠকের আগে ব্লুমবার্গে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কোনো ইউরোপীয় নাগরিকেরই রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতাকে কোনোরকম সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি মাথায় আসবে না। তাই এরকম কোনো সমর্থন ইউরোপে চীনের ভাবমর্যাদার বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে’।
কিয়েভ কিছু দেশের কাছে নিরাপত্তা গ্যারান্টির খসড়া হস্তান্তর করেছে : জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন যে, তার দেশ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে নিরাপত্তা গ্যারান্টি সংক্রান্ত খসড়া নথি বিনিময় করেছে।
তিনি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দরকার, এটি ন্যাটো সদস্য এবং নন-ন্যাটো দেশ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা চাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, তুরস্ক ছাড়াও যেসব দেশ প্রকাশ্যে এতে যোগ দিতে চায়’।
ইউক্রেনীয় নেতা বলেন, ‘আমি শুধুমাত্র সেসব দেশের নাম দিয়েছি যারা ইতোমধ্যে বলেছে যে, তারা গ্যারান্টার হতে প্রস্তুত, অথবা যাদের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি এবং ইতোমধ্যে তাদের গ্যারান্টার হওয়ার বিষয়ে নথির কিছু প্রাথমিক খসড়া বিনিময় করেছি’।
তার কথায়, ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরাইল ও আয়ারল্যান্ড। ‘আমরা চাই চীন এতে যোগদান করুক’ তিনি বলেন।
একই সময়ে, ইউক্রেনের নেতা স্বীকার করেছেন যে, ‘রাশিয়াকেও সেই চুক্তিতে স্থান খুঁজে বের করতে হবে, কারণ এটি ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হবে’। তার মতে, রাশিয়াকে চুক্তির দ্বারা ‘আবদ্ধ করা প্রয়োজন’, কারণ এটি সঙ্ঘাতের একটি পক্ষ।
কিয়েভ প্রতিনিধি দলের সদস্য আলেকজান্ডার চ্যালি বলেছেন যে, ইউক্রেন একটি নিরপেক্ষ এবং অ-পারমাণবিক অবস্থা গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে যদি তাকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া হয়, যা ‘বিষয়বস্তু এবং আকারে উত্তর আটলান্টিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫’-এর অনুরূপ হওয়া উচিত। তার মতে, গ্যারান্টিগুলো কূটনৈতিক সমাধানের জন্য তিন দিনের আলোচনার পর সামরিক সহায়তা এবং নো-ফ্লাই এলাকা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা উচিত।
কিয়েভের মতে, গ্যারান্টাররা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের (রাশিয়াসহ) পাশাপাশি জার্মানি, ইসরাইল, ইতালি, কানাডা, পোল্যান্ড এবং তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। আলোচনায় অংশ নেওয়া ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সার্ভেন্ট অফ পিপল পার্টির সংসদীয় দলের প্রধান ডেভিড আরাখামিয়ার মতে, তাদের গ্যারান্টিগুলো ক্রিমিয়া এবং ডনবাসকে কভার করবে না।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শুক্রবার বলেছেন, মস্কো রাশিয়া, ইউক্রেন এবং সমস্ত ইউরোপীয় দেশকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত রাশিয়ান হেলিকপ্টার : একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে একটি রাশিয়ান হেলিকপ্টার ভূপাতিত করতে একটি ব্রিটিশ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। স্টারস্ট্রিক হাই-ভেলোসিটি মিসাইল সিস্টেম পরবর্তী প্রজন্মের লাইট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র (এএনএলডব্লিউএর)-এর আরো চালানের সাথে ইউক্রেনকে মার্চ মাসে ব্রিটেন থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
টাইমস জানিয়েছে, লুহানস্ক অঞ্চলে একটি রাশিয়ান বিমানের ওপর একটি স্টারস্ট্রিক হামলা যা ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তা যাচাই করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র পেপারকে জানিয়েছে যে, ভিডিওটিতে স্টারস্ট্রিককে ইউক্রেনের ওপর থেকে গুলি চালানো হচ্ছে। সূত্রটি যোগ করেছে যে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। দ্য টাইমস জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা শিল্পের সিনিয়র সূত্র যারা ছবিটি পরীক্ষা করেছেন তারাও বিশ্বাস করেন যে এটি স্টারস্ট্রিক। ইন্ডিপেনডেন্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদনটি নিশ্চিত করতে বলেছে। সূত্র : তাস, রয়টার্স এপি, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ