পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম সংবাদটি হচ্ছে, বিশ্বে সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৭ ধাপ এগিয়ে ৯৪-এ এসেছে। আগে ছিল ১০১ নম্বরে। এ সংবাদ এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশের মানুষ নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। তাদের অনেককে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি’র পণ্য পেতে ফজরের নামাজের পর থেকে ঘণ্টার পর ঘন্টা লাইন ধরে বসে থাকতে হচ্ছে। পণ্য পাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। কেউ পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। অবশ্য সুখী দেশের তালিকায় উন্নতি দেখে সরকার বেজায় খুশি। খুশি হওয়ারই কথা। কারণ, এটা তার সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে। মন্ত্রীরা বলছেন, দেশের মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কয়েক দিন পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ খাবারের ব্যয় কমিয়েছে। কেউ কেউ সঞ্চয় ভেঙ্গে চলছেন। ৫৩ শতাংশের আয় কমেছে। ৩৪ শতাংশ মানুষ ঋণ নিয়েছেন। ঋণ নিয়েছেন মহাজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে। ঋণের টাকার এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করেছেন খাদ্যপণ্যের পেছনে। এ খবরটি সরকারের চোখে পড়েছে কিনা জানি না। এ নিয়ে কোনো মন্ত্রীকে মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। এ থেকে বোঝা যায়, এ প্রতিবেদন সরকারের মনোপুত হয়নি। হওয়ারও কথা নয়। অস্বীকার করার উপায় নেই, উট পাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে ঝড় উপেক্ষা করলেও ঝড় থেমে থাকে না। সরকারও যেন এভাবেই দেশের সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ জীবনযাপন ও অসুখী হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছে। বরং সরকার সুখী দেশের তালিকায় উন্নতিকে ধরে বসে আছে। সরকার মনে করতেই পারে দেশের সকল মানুষ সুখে আছে। ভালো আছে। এ কথা সত্য, সুখের নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি নেই। কে যে কিভাবে সুখী হয়, তা বলা মুশকিল। সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয়, কোনো মানুষ নিশ্চিন্তে তিন বেলা খেয়ে-পরে থাকতে পারলে, নিজেকে সুখী মনে করতে পারে। এটা একেবারে মৌলিক চাহিদার বেস লাইন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) সুখী দেশের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আমলে নেয়। এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, দাতব্য সেবা এবং দুর্নীতিহীনতা। তাদের জরিপ অনুযায়ী, যেসব দেশে বৈষম্য বা ভেদাভেদ কম, সে দেশের মানুষ বেশি আনন্দে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশে সামাজিক সহায়তা বেশি, বিপদে সমাজ বা রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া যায়, সেসব দেশের নাগরিকরাই বেশি সুখী। হাজার খানেক মানুষের সাথে কথা বলে সাধারণত এ তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এখন হাজার খানেক মানুষের সুখ যদি পুরো দেশের মানুষের সুখের চিত্র হয়, তাহলে বলার কিছু নেই।
দুই.
এদেশের মানুষকে শত শত বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন সইতে হয়েছে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে অনেক সংগ্রাম ও রক্ত দিতে হয়েছে। অবশেষে সশস্ত্র সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। তারপরও মানুষ সুখের সন্ধান পায়নি। তার চেয়েও বড় বিষয়, এখনও আমাদের শাসক গোষ্ঠী বক্তৃতা-বিবৃতিতে বাংলাদেশকে একটি সুখী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কথা অহরহ বলছে। এ থেকে এটাই বোঝা যায়, দেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ দুঃখের মধ্যেই আছে। তাদের সুখের জন্য যে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন-তা সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে। তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি। আমাদের দেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট হয়। মোটা কাপড় আর মোটা চালের ভাত খেতে পারলে তাদের আর কিছু লাগে না। এই সময়ে এসে কোনো কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলছেন, দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। ঘরে ঘরে দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে। তারা কি এমনি এমনি কথাগুলো বলছে? হঠাৎ করেই দুর্ভিক্ষের কথা বলবে কেন? তাদের এ কথার ভিত্তি কি? নিশ্চয়ই এর ভিত্তি রয়েছে। ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে সাধারণ মানুষের আর্থিক ও জীবনযাপনের দৈন্যদশার চিত্র উঠে এসেছে। সাধারণ মানুষও অভিজ্ঞতা থেকে এর উত্তর পেয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। সরকার মানুষের এসব দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করতে চাইছে না। স্বীকার না করে আবার ট্রাকে ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করছে, এক কোটি পরিবারের জন্য রেশনিং কার্ডের ব্যবস্থা করছে। এটা সরকারের এক ধরনের কন্ট্রাডিক্টরি অবস্থান। সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি হাহাকার না থাকত, তাহলে সরকারের এ ব্যবস্থা করার প্রয়োজন পড়ত না। সরকার কেবল স্থাপত্যগত উন্নয়ন এবং জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে দিয়ে দেখাতে চাচ্ছে, আমরা উন্নতি করছি। উন্নতির আসল মাপকাঠি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, এদিকটি এড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু মানুষের যে উন্নয়ন হচ্ছে না, তা নয়। তারা উন্নতির দিক থেকে উন্নত বিশ্বের নাগরিকদেরও হার মানিয়ে দিচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে কোটিপতির সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। গত এক বছরে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এরা কারা? বলতে দ্বিধা নেই, এরা তারাই যারা সরকারের কাছাকাছি এবং সুবিধাভোগী। সরকারও মনে করছে, তার কাছাকাছি লোকজন সুখে থাকা মানে দেশের মানুষ সুখে থাকা। এটা যেকোনো সরকারের অদূরদর্শীতা। দেশের মানুষ কতটা সুখী আর কতটা অসুখী তার পরিমাপ সরকার বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে করতে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা জরিপ করে বিশ্বের সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করতে দেখা যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশের মানুষ কতটা সুখী তার একটা পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। সমস্যা হচ্ছে, এখন পরিসংখ্যানগত উন্নতিকে অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। পরিসংখ্যান যে নিরেট সত্য, তা বলা যায় না। এসব পরিসংখ্যান একটা ধারণা মাত্র। কারণ কে কতটা সুখী, তা যারা জরিপ করে তাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। যারা জরিপ করে তাদের কাছে যা সুখের, অন্যের কাছে তা সুখের না-ও হতে পারে। সুখের বিষয়টি আপেক্ষিক। তবে একটি দেশের উন্নতির ধারা এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন থেকে কিছুটা হলেও বাহ্যিক সুখের ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার যুগে সুখের মূল উৎস হয়ে উঠেছে অর্থ। যে দেশ আর্থিকভাবে যত বেশি উন্নত বা অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, সে দেশের মানুষকে সুখী হিসেবে ধরা হয়। পুঁজিবাদে সুখী হওয়ার একমাত্র সংজ্ঞাই হচ্ছে, যেভাবে পারো অর্থ রোজগার করো, সুখী হও। মানুষও এ সংজ্ঞা মেনে এখন অর্থের পেছনে ছুটছে। উন্নতির প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছে। যারা পারছে, এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, অনেকে ছিটকে পড়ছে। যারা পারছে না, তাদের দুঃখের সীমা থাকছে না। ভাববাদীরা অনেক সময় বলেন, অর্থ থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। তবে তাদের এ কথা পুঁজিবাদে অক্ষমের সান্ত¦না পাওয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে যে প্রতিযোগিতা নেই, তা নয়। তবে এ প্রতিযোগিতা সরকারের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারাই এ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সাধারণ মানুষ এর মধ্যে নেই। তাদের থাকারও কারণ নেই। তাদের এখন দিনান্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা। প্রতিযোগিতা করার মতো কোনো সুযোগই নেই। তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে, লাইন ধরে টিসিবির পণ্য পাওয়ার জন্য।
তিন.
বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। তাদের সুখের কথা বলে দিচ্ছে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের দেশে এসে হাজার খানেক মানুষের মতামত নিয়েই সুখ-দুঃখের কথা বলে দিচ্ছে। এখন হাজার খানেক মানুষের সুখ-দুঃখের উপর ভিত্তি করে ১৭-১৮ কোটি মানুষের সুখ-দুঃখের বিচার করা কতটা যৌক্তিক, তা পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন। হতে পারে কিছু মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে এ জরিপ করা হয়। তবে তা যে সঠিক হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এই সময়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের হিসাব করা হয়, তবে অনেকেই একমত হবেন, তারা ভাল নেই। এই ভাল না থাকার মূল কারণ হচ্ছে, সুশাসনের অভাব। দেশে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, তা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজের দিকে তাকালেই এটা বোঝা যায়। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে পরিলক্ষিত হবে, দেশে এক ধরনের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি কার্যকর রয়েছে। ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের কথাই সঠিক এবং তা মানতে হবে, এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এমন একটা প্রবণতা দৃশ্যমান। ক্ষমতাসীনদের এই নিরঙ্কুশ আধিপত্যের প্রতিবাদ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশ থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার ও লুট হয়ে গেলেও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে, তাদের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। যে দেশে জনগণের অর্থ নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা হয়, সে দেশের মানুষ কিভাবে সুখে থাকে? এর উপর জনগণকে যতভাবে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলা যায়, তার প্রক্রিয় তো রয়েছেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম রকেট গতিতে বাড়ছে। মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার কমিয়ে দিচ্ছে। অনেকে খরচ কমাতে দুপুরে ভাত খাওয়ার পরিবর্তে রুটি-কলা খাচ্ছে। একবেলা খাবার কমিয়ে দিচ্ছে। এসব বিষয় সরকার আমলে নিতে চায় না। সরকার মনে করছে, এসবের ভিত্তি নেই। তবে ক্ষমতার কাছাকাছি ও প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক যে মহাসুখে আছে, তাতে সন্দেহ নেই। তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করলেও এ দেশকে সুখের আবাস মনে করে না। তাদের সব সুখ হয়ে আছে বিদেশ। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকায় তারা বসতভিটা বানিয়েছে। অনেকের সুইস ব্যাংকে অঢেল টাকা জমা আছে। তাদের আচরণ অনেকটা ইংরেজদের মতো। ইংরেজরা যেমন ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হয়ে এ দেশ দুইশ’ বছর শাসন করেছে এবং সম্পদ নিয়ে গেছে, তেমনি আমাদের দেশেরও কিছু লোক এ কাজ করে চলেছে। লুটপাটের কথা বাদ দেয়া যাক। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, নীতি-নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে যে, নিজের বাবা-মা এমনকি সন্তানকে পর্যন্ত খুন করতে দ্বিধা করছে না। পুরো সমাজব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখানে সুখোর মাপকাঠি কি, তা পরিমাপ করা হয় না। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রের পরিচালকরা যদি সঠিক পথে না থাকে বা সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারে, তবে অনিবার্যভাবে তার প্রভাব সমাজ ও পরিবারে পড়ে। আমরা যদি রাজনীতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানে যারা বিচরণ করেন, তারা সুখে আছেন, এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথা বাদ দেয়া যাক। তাদের দুঃখের সীমা নেই। তবে সরকারে যারা আছেন এবং যেভাবে আছেন, তারা কি সুখে আছেন? শান-শওকত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তির মধ্যে থেকেও কি শঙ্কার মধ্যে নেই? বিশেষ করে যে দল জনসাধারণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন হয়, তার শঙ্কা অন্য যেকোনো সরকারের চেয়ে বেশি থাকে। কারণ ক্ষমতাচ্যুত হলে এর জবাব জনগণকে দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে দেশ জোরজবরদস্তির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়, সে দেশের মানুষ কোনোভাবেই সুখে থাকতে পারে না।
চার.
আমরা প্রায়ই সরকারের সর্বোচ্চ পার্যায় থেকে বলতে শুনি, ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই’। সচেতন মহল থেকে এর বিপরীতে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলার মানুষ সুখী হতে পারল না কেন? তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি কেন? সমস্যা কোথায়? ঘুরে-ফিরে এসব প্রশ্নের উত্তর ঐ এক জায়াগায়ই পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর থেকে সোনার বাংলা যারা চালিয়েছেন, তারা দক্ষ চালক ছিলেন না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, সে দেশ পরিচালনার জন্য দক্ষ চালক খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশ ও দেশের মানুষকে সুখী করার জন্য সর্বপ্রথম যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, তা আজও প্রতিষ্ঠা কারা যায়নি। অর্থনীতি কেবল পরিসংখ্যান ও সূচকে বাড়ছে। সাধারণ মানুষের পকেটে টানাপড়েন লেগেই আছে। স্বস্তি নেই। উল্টো টানাপড়েন বাড়িয়ে দেয়ার যত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যায়, তাই করা হচ্ছে। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তা এক বড় প্রশ্ন। সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের সুখে থাকার কোনো কারণ থাকতে পারে না। অন্যদিকে জনগণের পয়সা লুটপাটের অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে না পারাও গোটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকার এ ব্যাপারে অনেকটা নির্বিকার হয়ে রয়েছে। শুধু জনগণের সামনে উন্নয়নের ‘প্ল্যাকার্ড’ তুলে ধরে আশ্বস্থ ও সান্ত¦না দেয়ার অবিরাম চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সুখী দেশের যে তালিকা প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ যে অবস্থানে থাকে, তা না দেখলেও কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশের মানুষ সুখে নেই। সুখ তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।