Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্মোহনী ভালোবাসা

নাফিজা সুলতানা অমি | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ১২:২২ এএম

খুব ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন নিতাই চন্দ্র। তাঁর একটামাত্র মেয়ের বিয়ে। আয়োজনে যেনো কোনো ফাঁকফোকর না থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে রেখেছেন পাঁচজন লোক। কিন্তু যার বিয়ে তার মনে কোনো আনন্দ যে নেই, তা তার চেহারার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তার মূল কারণ হচ্ছে পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়া।

রুপসা অনেক বেশি ভালোবাসত গ্রামের রঞ্জিতকে। কতশত স্মৃতি, কতগুলো দিন একসাথে পথচলা। কিন্তু বাবার কানে যেতেই শেষ হয়ে যায় সবকিছু। থেমে যায় পথচলা। মধ্য দুপুরে পাড়া সুদ্ধ যখন ঘুমিয়ে থাকতো, তখন রুপসা চুপিসারে ঘর থেকে বের হয়ে চলে যেতো পাড়ার মাঠে। সেখানে রঞ্জিত তার জন্য অপেক্ষা করতো। রুপসাকে দেখেই তার মন ভালো হয়ে যেত। দুজনে মিলে গল্প করতো। তাদের নতুন জীবনের গল্প, তাদের স্বপ্নের গল্প। গল্প করার একপর্যায়ে এসে রুপসা ভীতু মুখ নিয়ে যখন বলতো, আচ্ছা, রঞ্জিত, বাবা মানবে তো? আমার অনেক ভয় হয়। যদি বাবা তোমার কিছু করে! কথাগুলো বলতেই ভয়ে রুপসার শরীর কেঁপে উঠে। চোখের কোনায় জল ছলছল করে। তাকে এভাবে দেখতে রঞ্জিতের ভালো লাগে। তার কাজল লেপ্টানো চোখের নিচে যখন এক ফোঁটা দুই ফোঁটা করে জল জমা হয় তখন তাকে দেখে রঞ্জিতের খুব মায়া হয়। রঞ্জিত দুই হাত দিয়ে তার চোখ মুছে দেয়। আলতো করে কপালে চুমু আঁকে। তারপর বলে, কিছু করবে না। দেইখো তুমি। তোমার বাবা নিজেই তোমাকে আমার হাতে তুলে দিবে। কিন্তু সেসব কিছুই হয় না। স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যায়। তাদের সাদাকালো স্বপ্নগুলো রঙিন হয়ে বাস্তবে রূপ নেয় না কিছুতেই।

রুপসা আর রঞ্জিতকে একসাথে দেখে ফেলে নিতাই চন্দ্র। গ্রামের জমিদারের মেয়ে হয়ে প্রেম করছে কি-না গ্রামের ছোটলোকের সাথে। রাগ হয় নিতাই চন্দ্রের। মেয়ের চুলের মুঠি ধরে ঘরে নিয়ে আসে। রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে তালা দেয়। ঘরের সকলকে কড়া আদেশ দেয় কিছুতেই যেনো ওই দরজার তালা খোলা না হয়। যে খুলবে তাকেই ঘর ছাড়া হতে হবে। কেউ আর সাহস পায় না তালা খোলার। রুপসার মা শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। কাঁদুক। কান্না করা ভালো।

শুধুমাত্র খাবার সময়ে তালা খুলে দেওয়া হয়। বাড়ির কাজের মেয়ে ময়না খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে। রুপসা মন মরা হয়ে বসে থাকে। একদিকে তাকিয়ে থাকে শুধু। গরম খাবারটা ঠান্ডা হয়ে যায়। ময়না মেঝেতে বসে তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, খাইয়া নেন দিদি। নয়তো অসুখে পড়বেন। একফোঁটা জল রুপসার গাল গড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, মরেই যাই। তাহলে তো আর ক্ষতি নাই। সব শান্তি হয়ে যাবে। ময়না এমন কথা শুনে আঁতকে ওঠে, ছি ছি দিদি, এমন কথা বলবেন না। এমন কথা মুখে আনাও পাপ। কোনো উত্তর দেয় না রুপসা। চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। ময়না আরও কিছুক্ষণ বসে। তারপর চলে যায়। রুমের দরজা বন্ধ করে আবারও তালা দেওয়া হয়।

নিতাই চন্দ্র মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র খুঁজতে থাকে। অবশেষে মিলেও যায়। ছেলে উচ্চশিক্ষিত। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছে। ভালো চাকরি করে। বিয়ের পর রুপসাকে নিয়ে চলে যাবে বিলেতে। আর কি চাই নিতাই চন্দ্রের? ছেলের নামি-দামি বাড়ি গাড়ি সব আছে, ছেলে উচ্চবংশের, পড়াশোনাতেও ফার্স্ট ক্লাস। মেয়ের সুখের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। পন্ডিত মশাইকে সপ্তাহখানেকের মধ্যে শুভ দিন দেখে বিয়ের তারিখ ফেলতে বলে। বিয়ের দিন ঠিক হয়। ধুমধাম করে আয়োজন হয়।

অন্যদিকে গ্রামের ছেলেছোকরা দিয়ে রঞ্জিতকে মারধর করে। তারপর গ্রামের বাইরে ঘন জঙ্গলে ফেলে আসে তার নিথর দেহ। গ্রাম ছাড়া হতে হয় রঞ্জিতের অভাগী মাকেও। অভাগী মা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় বাপের বাড়ি। শেষবারের মতোন ছেলের লাশটুকুও দেখা হয় না তার।

লাল শাড়িতে সেজেছে রুপসা। রঞ্জিত কল্পনায় ঠিক যেমন ভাবে সাজিয়েছিল তাকে। চোখের নিচে কালো কাজল, লাল বেনারসি, কপালে লাল টিপ, হাত-পা লাল আলতায় রাঙানো। বিয়ের আসরে রুপসাকে এনে বসানো হয়। কন্যা সম্প্রদানের সময় হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ হয় না। কন্যা সম্প্রদানের আগেই রুপসার নিথর দেহ হেলে পড়ে। মুখ দিয়ে বের হয় সাদা বর্ণের ফেনা। শাড়ির আঁচল থেকে বেরিয়ে আসে ছোট আকারের বিষের বোতল।

দিনের আলো মুছে গিয়ে রাতের অন্ধকার নেমে আসে। বিয়ে বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। গ্রামের লোক কানাকানি করে। পশ্চাতে ছি ছি করে। রাতের আকাশে অসংখ্য তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই দেখা যাবে সবচে উজ্জ্বল তারাটি একদম একা জ্বলজ্বল করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর তার পাশে আরও একটি তারা জ্বলে উঠলো। এরাই কি রুপসা আর রঞ্জিত? যারা একে অপরকে কথা দিয়েছিল মরার পর দুজন আকাশের তারা হয়ে জ্বলবে। কি সুন্দর ভালোবাসা। সম্মোহনী ভালোবাসা...



 

Show all comments
  • ইসমাইল আহসান তুহিন ৯ মার্চ, ২০২৩, ১২:০৫ পিএম says : 0
    অভিনন্দন নাফু, অনেকদিন পর তোকে খুৃজে পেলাম, তার সাথে সুন্দর সুখবর। অনেক দোয়া তোর জন্য নাফু...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সম্মোহনী ভালোবাসা

২৫ মার্চ, ২০২২
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->