অপ্রত্যাশিতভাবে সিলেট মরছে মানুষ। তুচ্ছ ঘটনায় ঘটছে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু। গত দুইদিনে ৬ জনের মৃত্যু ঘটলো বৃহত্তর সিলেটে। বেঁচে থাকার জন্য যেখানে মানুষের স্বাভাবিক আকুলতা, তার বদলে মৃত্যুকে যেন সহজে বরণ করছে দেদারচ্ছে। হত্যা বা আত্মহত্যা বা সড়ক দূঘর্টনা সবই যেন নস্যি মাত্র। সব মিলিয়ে এক অস্থির পরিবেশ-পরিস্থিতি চারিপাশে।

গত মঙ্গলবার সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক তরুণী। সন্ধ্যারাত ৭টার দিকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ওই তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। লাভলি দাশ (১৮) নামের ওই তরুণী সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার ছুয়ারা গ্রামের শ্যামাচরণ দাসের কন্যা। লাভলী তার বাবা ও ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন থেকে জাফলং এলাকার বিভিন্ন কলোনিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলো।
জানা যায়, পরিবারের লোকজনের অজান্তে নিজ বসতঘরের তীরের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি টের পেয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করেন বাড়ির লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাভলীর লাশ উদ্ধার করে। গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব বলেন, আত্মহত্যার কারন জানা যায়নি। এদিকে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট গুয়াবাদী এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধ মহিলার। এ ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুর দেড়টায়। মৃত নারীর নাম রাহেলা বেগম (৭৫)। উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রি গ্রামের আতিকুর রহমানের স্ত্রী তিনি। মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের সময় জৈন্তাপুর উপজেলাসদরের ফতেখা রোড সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধের সম্মুখে রাহেলাকে দ্রুতগামী একটি মিনি ট্রাক চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তবে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান রাহেলা। অপর এক ঘটনায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে স্বামীর লাথিতে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রীর। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী আসকর আলী (৫০)কে আটক করেছে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ। জানা যায়, শনিবার (১২ মার্চ) রাতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের মৃত মর্তুজ আলীর পুত্র আসকর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী রিনা বেগম সাংসারিক বিষয়াদীসহ হাট থেকে কিনে আনা পানের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়ায় ল্পিত হয়। এসময় স্বামী আসকর আলী ও রিনা বেগমের মাঝেও শুরু হয় পাল্টাপাল্টি গালমন্দ। একপর্যায়ে রিনা বেগমের পেটে লাথি মারেন স্বামী আসকর আলী। পরে আহত অবস্থায় রিনা বেগমকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এদিকে, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ইজিবাইক (টমটম) উল্টে মিনহাজ কাপ্তান (২৫) নামের এক চালক নিহত হয়েছেন। সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুর-ঝিলুয়া সড়কে জিলুয়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিনহাজ কাপ্তান বানিয়াচং উপজেলার বাগ মহল্লার মৃত মোবারক মিয়ার পূত্র। জানা যায় পাহাড়পুর-ঝিলুয়া সড়কে জিলুয়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ইজিবাইক (টমটম) উল্টে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। এসময় ইজিবাইকটির পাশে চালকের মরদেহও পড়েছিল। স্থানীয়রা বিষয়টি ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে অবগত করলে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে। কোন অভিযোগ না থাকায় পরিবারের লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তার স্বজনদের কাছে। অপরদিকে, হবিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে আয়াত আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তির। মৃত আয়াত আলী শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের মকবুল হোসেনের পুত্র। সোমবার দুপুরে ঘটে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা । হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শন (এসআই) নাজমুল হাসান জানান, হবিগঞ্জ-নসরতপুর বাইপাস সড়কের বহুলা এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের একটি লাইন ছিঁড়ে তার রাস্তায় পড়ে যায়। আয়াত আলী নামে এক ব্যক্তি ওই তারে জড়িয়ে মারা যান। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক অকুস্থালে পৌছে পুলিশ। অন্যদিকে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চলতি পিকআপভ্যানে দৌঁড়ে ওঠতে যেয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আহাদুর রহমান আহাদ (১০) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৪ মার্চ) সকালে পৌর এলাকার দত্তরমুড়ি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। আহাদ দত্তরমুড়ি গ্রামের ইছবর আলীর পূত্র। আহাদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আহাদ আমির ছলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সোমবার সকালে বাড়ির পাশে একটি চলতি পিকআপভ্যানের পিছনে ওঠতে যায় আহাদ। এ সময় হাত ফসকে আহাদ গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন শিশু আহাদকে। কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশি এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহত যুবক তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া গ্রামের জিলু মিয়ার পূত্র জনিক মিয়া (২৫)।
জানা যায়, রোববার (১৩ মার্চ) রাতে কোনো এক সময় বাংলাদেশি যুবক জনিক মিয়া বড়ছড়া সীমান্তের ম্যানেজার বাংলো দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। পরে সেখানকার লোকজন চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। সোমবার (১৪ মার্চ) সকালে জিরো পয়েন্টের ভাঙ্গারঘাট কোয়ারি নামক স্থানে ফেলে রেখে যায়। সংবাদ পেয়ে নিহতের পরিবারের লোকজন ও নুর মিয়া নামক এক ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের একটি ঘটনা শুনেছি।