Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। এই অভিযান অব্যাহত থাকলে পণ্যের উচ্চমূল্যসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলো মারাত্মক খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমনকি রেমিট্যান্সও কমে যেতে পারে। এছাড়া বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটও তৈরি হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি, অর্থ ও প্রতিষ্ঠান) ইন্দারমিট গ্রিল। তিনি জানান, কিছু উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ খাদ্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইউরোপ এবং মধ্যএশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু দেশের আমদানি করা গমের ৭৫ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে দেশ দুটি। শস্য ও বীজ আমদানি করতে না পারায় নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে খাদ্যের উচ্চমূল্য, ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা এবং উচ্চ প্রযুক্তির হস্তান্তর ও বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ব ব্যাংক বিজ্ঞপ্তিতে যে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলার ওপর যে জোর দিয়েছেন, তারও সঙ্গত কারণ রয়েছে। এসব আশঙ্কা সামনে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে আমাদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে দেশের সাধারণ মানুষ এখন দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিনই খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। সীমিত আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে জীবন নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের দাম তাদের ক্রয়সাধ্যের মধ্যে আসছে না। এ কথা ঠিক, করোনায় সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে পণ্যের সরবরাহ এবং মূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে। করোনার মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েনি। ধান, চাল, শাক-সবজি, পেঁয়াজ, মাছ, গোশতসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন অব্যাহত ছিল। এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের অব্যবস্থাপনায় মূল্যবৃদ্ধি দ্রুতায়িত হয়েছে। করোনাকালে সরকারের তরফ থেকে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহের কারণে সরকারি স্টকে ঘাটতি পড়ে। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার লাখ লাখ টন খাদ্য আমদানি করেছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে অতিমুনাফার লোভে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে পণ্যমূল্য মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে নতুন অজুহাত হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কথা বলছে। প্রকৃত অর্থে এ যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। স্বাভাবিক সময়েও এ বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো খাদ্যঝুঁকিতে পড়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছে তা আমলযোগ্য। এখনো পুরোপুরি সংকট শুরু না হলেও যুদ্ধ চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সংকট বাড়বে। তখন আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের পক্ষে উচ্চমূল্যে খাদ্য কেনার অবস্থা থাকবে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্যই মূলত এ যুদ্ধের সূচনা করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এতে দেশগুলোর অস্ত্র বিক্রি বাড়বে এবং তারা লাভবান হবে। তাদের এই আধিপত্য বিস্তার ও শক্তি প্রদর্শনের জাঁতাকলে পড়ে নিম্ন ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে আমরা কতটা প্রস্তুত এবং কি পদক্ষেপ নিচ্ছি, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরকারের তরফ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কথার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে। ধান, শাক-সবজি, মাছ, গোশত, ফল-মূলসহ অন্যান্য ফসলাদির উৎপাদন বেড়েছে। কখনো কখনো বাম্পার ফলনও হয়েছে। এই ফলনের মধ্যেও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সরকার টিসিবি এবং ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করেও পণ্যমূল্য মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে পারছে না। সামনে রমজান। তার আগেই পণ্যমূল্য লাগামহীন। এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমাদের নিজেদেরই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে সংকটের উত্তরণ ঘটাতে হবে। সরকারের কাজ হলো কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া। উদ্যোগ নিলেই হবে না, এ জন্য কৃষক ও উদ্যোক্তাদের যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা দিতে হবে।



 

Show all comments
  • Kader sheikh ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৭ পিএম says : 0
    খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে খাদ্যের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে দেশের জনগণ তাদের আয়ের বেশিরভাগ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে। রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো সকল সময়ে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
    Total Reply(0) Reply
  • Habib ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৯ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের জীবনধারণোপযোগী গ্রামীণ অর্থনীতিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি মৌলিক খাদ্যের উৎপাদন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং চাষযোগ্য জমি হ্রাসের উপর সরাসরি নির্ভরশীল।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Naimul Islam ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৩৯ পিএম says : 0
    সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও খাদ্য লভ্যতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন সত্তে¡ও ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা বিধান সরকারের জন্য একটি গুরুত্ববহ বিষয় হয়ে থাকছে
    Total Reply(0) Reply
  • Jaker ali ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৪১ পিএম says : 0
    সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারসমুহের জন্য খাদ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা ও সংগৃহীত খাদ্যের যথাযথ ব্যবহারে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Unit chief ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৪২ পিএম says : 0
    বাজারে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত আয় কমে গিয়ে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় নিম্ন-আয়ের পরিবারসমুহ সাময়িক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Liakat Ali ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    দেশে একটি নিরাপদ খাদ্যমজুদ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যশস্যসহ খাদ্যপণ্যের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রয়োজনে খাদ্য আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্যনিরাপত্তা
আরও পড়ুন