পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের খাদ্যমজুদ ব্যাপক আকারে কমেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট মজুদের পরিমাণ ৪ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। সরকারি গুদামে এ পরিমাণ মজুদ দেশে খাদ্যসংকটেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের পর খাদ্যের এত কম মজুদ দেখা যায়নি। এমনকি গত বছর মহামাররির সময়েও (১ জুলাই) খাদ্যমজুদ ছিল ১১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে খাদ্য মজুদ প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসা খাদ্যনিরাপত্তাকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ চিত্র দেশে খাদ্যাভাবের দিক নির্দেশ করছে। হঠাৎ করে দেশে খাদ্যমজুদ এত নিচে নেমে গেল কেন, তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এ ক্ষেত্রে প্রথমত খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দ্বিতীয়ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের চরম ব্যর্থতা রয়েছে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা এবং উদাসীনতা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দেশের সার্বিক খাদ্যপরিস্থিতি বা কখন, কী পরিমাণ মজুদ থাকা অপরিহার্য ও রাখতে হবে, এ সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তা নাহলে, দেশের খাদ্যমজুদ প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকত না।
বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি বলে সরকারের পক্ষ থেকে শুনে আসছি। এ কথা অমূলক মনে হতো না, যদি সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকত। মাঝে মাঝে চাল রফতানির কথাও শোনা গিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বারবার বলা হয়, দেশে আমন, বোরোসহ অন্যান্য ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান ও মূল্য নির্ধারণও করা হয়েছে। এবারও বোরো ধান সংগ্রহ ও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধান-চাল সংগ্রহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এক ধরনের আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে দেখা যায়। পত্র-পত্রিকায় যখন ধানের বাম্পার ফলনের কথা বলা হয় এবং কৃষক দাম পাচ্ছে না বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তখন তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জন্য যেন ‘মধুর সমস্যা’ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের ভাবখানা এমন হয়ে দাঁড়ায়, যেন কৃষক অধিক ফসল ফলিয়ে অপরাধ করে ফেলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এমন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন সংবাদও আমরা দেখেছি, ধানের দাম না পেয়ে কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অধিক ফসল ফলিয়ে কৃষকের দাম না পাওয়া যেমন দুঃখজনক, তেমনি এই দাম দিতে না পারা সংশ্লিষ্টদের জন্য চরম ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা এবং খাদ্যসংকট সৃষ্টির আশঙ্কা সম্পর্কে আগাম ধারণা না থাকার কারণেই আজকে খাদ্যমজুদ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দেশে খাদ্যমজুদের এই সংকট হঠাৎ করেই হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংকট ঘনীভূত হয়ে বর্তমান দশায় উপনীত হয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি গড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বা তারও বেশি বেড়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো খাদ্য সংকটে পড়ে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করছে। এখনও এ আমদানি চলছে। এই আমদানি করেও খাদ্য মজুদের মিনিমাম পরিমাণ বা যে পরিমাণ থাকলে খাদ্যনিরাপত্তা ধরে রাখা যায়, তা রাখা যাচ্ছে না। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দেশে খাদ্যসংকট এখন যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে চলতি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যের ধান-চাল সংগ্রহ করেও নিরাপদ মজুদ গড়ে তোলা যাবে কিনা সন্দেহ।
খাদ্য উৎপাদন ও মজুদের সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যে কথা এতদিন বলা হয়েছে বা হচ্ছে, তা ফাঁকা বুলি মাত্র। আসলে দেশ খাদ্যঘাটতির দিকে ধাবিত এবং তা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠতে পারে। বলা বাহুল্য, প্রত্যেক দেশই তার ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা সবসময়ের জন্য ধরে রাখে, যাতে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম ঘটায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ও মন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না। বিষয়টির একটি অনুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া দরকার এবং দায়ীদের যথোচিত জবাবদিহির ব্যবস্থা করা উচিৎ। এটা কোনো ছেলেখেলার বিষয় নয়। ন্যয়সঙ্গত মূল্যে মানুষের খাদ্যসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। সেজন্য দেশে একটি নিরাপদ খাদ্যমজুদ নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যশস্যসহ খাদ্যপণ্যের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রয়োজনে খাদ্য আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।