Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্কে তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক : পুতিন-জেলেনস্কি সংলাপের বার্তা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০৯ এএম

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবার সাথে গতকালকের বৈঠকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৈঠকের পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। এতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুও জড়িত ছিলেন।

ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে গতকাল তুরস্কের আন্টালিয়াতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজিত হয়। বৈঠকটি পরিচালনা করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু। বৈঠকের পরে দেয়া বিবৃতিতে ল্যাভরভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন কখনই যোগাযোগ রাখতে অস্বীকার করেননি, আমরা শুধুমাত্র নিশ্চিত হতে চাই যে, যোগাযোগের স্বার্থে যোগাযোগ রাখা হবে না বরং নির্দিষ্ট চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা করার জন্য হবে। আমরা আজ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা এই প্রস্তাব দিয়েছেন। এবং আমি তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমরা সবসময় এমন আলোচনায় আগ্রহী যার মাধ্যমে ফলাফল আসতে পারে এবং সমস্যাগুলো সমাধান হতে পারে।’

ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া শেষ পর্যন্ত ক‚টনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেয়েছে।’ তার মতে, কিয়েভ বিগত বছরগুলোতে মিটিং চেয়েছিল কিন্তু তার বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন এড়িয়ে যায়। ‘আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যখন কিয়েভ দ্বারা মিনস্ক চুক্তিগুলো সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল তখন জেলেনস্কি (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট) বলতে থাকেন, ‘চলুন দেখা করা যাক, আসুন শেষ পর্যন্ত আবার দেখা করি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘২০১৯ সালে, সেখানে যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছিল সেগুলো কিয়েভে নির্দেশিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনওটিই বাস্তবায়িত হয়নি, তারা আবার আরেকটি বৈঠকের জন্য আহŸান জানাতে শুরু করেছে।’

ল্যাভরভ যোগ করেছেন যে, পুতিন জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেননি তবে এই ধরনের আলোচনার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়া উচিত। ‘প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে, তারা বেলারুশের আয়োজনে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চলছে, তিন দফা আলোচনা হয়েছে, ইউক্রেন আমাদের সম্পূর্ণ নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে, তাই আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।’

বৈঠকের পর তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি ‘বিস্তৃত শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষর করার জন্য আলোচনা করছে। তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে বৈঠকের পর তুরস্কের ভ‚মধ্যসাগরীয় উপক‚লে আন্টালিয়ায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন নিরপেক্ষতা সহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে এবং একটি বিস্তৃত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিও টেবিলে রয়েছে।’ তিনি বলেন, বৈঠকটি ‘সহজ পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ‘এ ধরনের বৈঠক থেকে একটি অলৌকিক ঘটনা আশা করা উচিত নয়’। আলোচনা চলাকালীন, তুরস্ক জোর দিয়েছে যে, ইউক্রেনের মানবিক করিডোরগুলো কোনও বাধা ছাড়াই খোলা রাখা উচিত, কাভুসোগলু বলেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ২৪ ফেব্রæয়ারি অভিযান শুরু হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেন প্রথমবারের মতো মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করেছে।

বৈঠকের পর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার কোনো পরিকল্পনা নেই। রিসোর্টে সাংবাদিকদের কুলেবা বলেন, ‘রাশিয়া এই মুহ‚র্তে যুদ্ধবিরতি স্থাপনের অবস্থানে নেই। তারা ইউক্রেনের কাছ থেকে আত্মসমর্পণ চায়। এটি তারা পেতে যাচ্ছে না। ইউক্রেন শক্তিশালী, ইউক্রেন যুদ্ধ করছে।’ ‘যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি কারণ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেয়া হয়নি’, তিনি বলেছেন, ‘তবে উভয় পক্ষই মানবিক পরিস্থিতির সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।’

ইউক্রেনের শীর্ষ ক‚টনীতিক বলেন, ‘আমি এখানে একটি মানবিক উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি, মারিউপোল থেকে একটি মানবিক করিডোরের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যেতে।’ কুলেবা আরও বলেন, বৈঠকে লাভরভের প্রধান বার্তা ছিল যে ‘ইউক্রেন তাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তারা (রাশিয়া) তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ন্যাটো যৌথভাবে কাজ করতে প্রস্তুত নয় এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং জনগণই এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রæয়ারী, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ডনবাস প্রজাতন্ত্রের প্রধানদের অনুরোধের ভিত্তিতে একটি বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। রাশিয়ান নেতা জোর দিয়েছিলেন যে, মস্কোর ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলো দখল করার কোন পরিকল্পনা নেই এবং লক্ষ্য ছিল দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ডিনাজিফাই করা। সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি, তাস।

 

 

 



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১১ মার্চ, ২০২২, ১:১৯ এএম says : 0
    যতক্ষন পযর্ন্ত কৌতুক অভিনেতা কে জীবিত বা মৃত বন্দি করতে না পারেন ততক্ষন পযর্ন্ত পুতিন ক্লান্ত হবেন না। তিন পরারাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক আন্তর্জাতিক চাপ নিষেধাজ্ঞা পুতিনের এই অগ্রযাত্রাবিরোধী কোন শক্তি রাশিয়া কে থামিয়ে দিতে পারবে না। ইতিমধ্যে জেলেনস্কির উস্কানি আমেরিকা ন‍্যাটোর অস্ত্রের যোগান নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধে রাশিয়ার ভয়াবহ বিলিয়ন বিলিয়ন মারাত্মক খতি হয়েছে। তুরস্কের বৈঠকে কি সমাদান কি সম্ভব যেখানেই আক্রান্ত হলে ন‍্যাটোর কাজ থেকে রাশিয়া পরমানু অস্ত্রের ব‍্যবহার করার সমূহ সম্ভাবনা দেখে দিয়েছে। রাশিয়ার কঠোর অবস্থানের জন্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দায়ী। পরাশক্তি পৃথিবীর মাঝে শিতল যুদ্ধ কৌশলের যুদ্ধ রাজনীতির যুদ্ধ অর্থনৈতিক যুদ্ধ সব রকমের যুদ্ধের একমাত্র প্রতিদন্ধি আমেরিকা। সেখানেই আমেরিকা মিত্রদের মদতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক হুমকি দমকি দিয়ে আসছিলেন দীর্ঘ পযর্ন্ত। আমেরিকা ন‍্যাটোর সদস্য হয়ে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি হতে পারে জেলেনস্কির ইউক্রেন এই দর্শনের উপর রাশিয়ার হামলা। পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশ আমেরিকার পক্ষে নাই। এমনকি বাইডেনের ফোন ধরছেন না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জালানি নিষেধাজ্ঞা উল্টো হয়ে গেল। মুহুর্তে মুহুর্তে যুদ্ধের পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। কৌতুক অভিনেতা দেশে নেই। পোলান্ডে আর্তগোপনে আছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাই উপযুক্ত মানুষের স্থান না হলে পরিণতি পরিণাম তো দৃশ‍্যমান। সত্যি কথা এই যুদ্ধে মুসলমানদের রক্তের গন্ধ নেই তাই বেশী দিন স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আন্তর্জাতিক কিছু কৌশলের কারণে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পক্ষ নিয়ে পয‍্যবেক্ষন করছে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর কন‍্যার ভীষনারি নেতৃত্বের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে নিরাপেক্ষ অবস্থান কে কেও কেও বিভিন্ন ভাবে ব‍্যাখা করছে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপেক্ষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুতিন রাশিয়ার লৌহ মানব আমেরিকা সহ সকল সামরাজ‍্য বাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান কে সকল দেশ নিরভে সমর্থন দিচ্ছে মনে হয়। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাই কথায় কথায় যে কোন দেশ বা জাতি বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এই অস্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পৃথিবী বড়ই প্রযোজন। মতামত এর কলম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। মতামত যদি সত্য ও নিরাপক্ষ হয়।চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahamuda Poly ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    যুদ্ধ হোক মহাযুদ্ধ।। ধনী দের দালান কোঠা ভেঙে চুরমার হয়ে যাক।।।সবাই কৃষক হয়ে যাক।।। পৃথিবী ৩০০০বছর পিছিয়ে যাক।।।সব অহংকার ধুলিসাৎ হয়ে যাক।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Liakot Hossain Limon ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
    এরদোয়ান কে দিয়ে এটা সম্ভব না। এই সংকট নিরশনের চাবিকাঠি রয়েছে একমাত্র চিনের হাতে। মনে রাখবেন, গরুর মতো ছাগলেরও চারটি পা, তাই বলে ছাগলের গায়ে লাঙল বেধে দিলে তো সে হাল টানতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Jumel ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
    এক যুদ্ধ তেলের দাম বাড়িয়েছে বিশ্বযুদ্ধ হলে কি হবে ।।।।। আমরা শান্তি চাই যুদ্ধ চাইনা
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Hossain ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 0
    জতদিন রাসিয়া ইউনিয়নের যুদ্ধ থাকবে ততদিন আমেরিকা অন্যান্য দেশের দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ibn Sina ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২০ এএম says : 0
    আমার মনে হয়, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার আর দেরি করা ঠিক হবেনা। কারণ দেরিতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rubel Islam ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২০ এএম says : 0
    পশ্চিমা আধিপাত্য নিপাক যাক ..স্বার্বভৌমত্ব মুক্তি পাক ..
    Total Reply(0) Reply
  • Md Akter ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
    সব দোষ পশ্চিমা দেশগুলোর কারন তারা ইউক্রেনকে শুধু ব্যবহার করছে এবং বিশ্বকে ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। একটা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে জেলেনস্কির বুঝা উচিত ছিলো,তার জন্য না হোক দেশের মানুষের কথাটা অন্তত ভাবার দরকার ছিলো। আমার মতামত সে দেশ চালানোর নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharaf Hosen ১১ মার্চ, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
    রাশিয়ার উচিত হবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেওয়া। এটাই পশ্চিমাদের নিকট থেকে নেওয়া চরম প্রতিশোধ। ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিষপোড়া ইসরাইলকে টিকিয়ে রেখে পুরো এলাকাকে তটস্থ করে রেখেছে। যদি রাশিয়া এটা করে তাহলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সময়ের ব্যাপার হবে মাত্র। আর বিশ্ব ফিরে পাবে ভারসাম্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুতিন

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ