পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। তিনি বৈশ্বিক নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি আরো বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দোর গোড়ায় কড়া নাড়ছে। এজন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক ও প্রযুক্তির উত্তরোত্তর অগ্রগতির এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান ও বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। এখন প্রযুক্তি এবং এ সম্পর্কিত জ্ঞান ছাড়া অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। দ্রুত অর্থ লেনদেন থেকে শুরু করে কথাবার্তা, চিঠি চালাচালি এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানের স্বাক্ষর করার প্রয়োজন হলে প্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির উদ্ভাবন, তার ব্যবহার ও খাপ খাইয়ে চলতে না পারলে এগিয়ে যাওয়া শ্লথ হয়ে পড়বে। বর্তমানে জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভূমি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজ হয়ে পড়ায় একদিকে যেমন সুবিধা ও জটিলতা দূর হয়েছে, তেমনি এ সম্পর্কে দক্ষতা না থাকায় জটিলতারও সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, মোবাইল নেটওর্য়াকে ফোর জি এবং ফাইভ জি যুক্ত হওয়ায় ভার্চুয়াল জগতের সাথে মানুষ যুক্ত হতে পারছে। ঘরে বসেই ভার্চুয়াল মিটিং থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা যাচ্ছে। প্রযুক্তির এই অগ্রগতি এখানেই থেমে নেই। প্রতিনিয়ত একই ভার্সনের নতুন নতুন আপগ্রেড হচ্ছে। আজ যেটা নতুন কাল তা পুরনো হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি যেন রকেটের গতিতে ছুটে চলেছে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে, আমরা যে পিছিয়ে যাব, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
অষ্টদশ শতকে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মূলত প্রথম প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয় যাকে বলা প্রথম শিল্প বিপ্লব। বিংশ শতকে বিদ্যুতের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব, ষাটের দশকে কম্পিউটার আবিষ্কার ও অটোমেটিক মেশিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। বর্তমানে চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, যাকে প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মতো এতো দ্রুতগতিতে আর কোনো শিল্প বিপ্লব এগুতে পারেনি। প্রযুক্তি এখন এতটাই দ্রুত আবিষ্কৃত ও পরিবর্তিত হচ্ছে যে, তার সাথে সবার পক্ষে তাল মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্তরাই নতুন নতুন ভার্সন সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ যথেষ্ট পিছিয়ে। খুব অল্পসংখ্যকই প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ব্যবহার সম্পর্কে অবগত। উন্নত বিশ্বে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক, কোয়ান্টাম কম্পিউটার, অটোমেটিক গাড়ি, ন্যানো টেকনোলজি, বায়ো টেকনোলজি ইত্যাদির নতুন নতুন উদ্ভাবন ও ক্রমোন্নতি ঘটছে। এসবের ব্যবহার আমরা শুনছি, তবে তা থেকে আমরা অনেক দূরে। অথচ অদূর ভবিষ্যতে এসব ছাড়া আমরা বিশ্বের সাথে সমান তালে চলতে পারব না। আগে দেখা যেত, কোনো দার্শনিক, সাহিত্যিক, লেখকের কথা বিশ্বমত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখত। এখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের জনকদের কথায় অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের কথাই প্রাধান্য পাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শাখা-প্রশাখা এত বিস্তৃত ও পরিবর্ধনশীল যে, তার সবকিছুর খোঁজ-খবর রাখা ও অনুসরণ করা কঠিন। তারপরও আমাদের সেটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং কিছু প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়েও আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা অসামান্য উদ্ভাবন বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন। পাটের জেনম সিকোয়েন্স থেকে শুরু করে উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবনের কৃতিত্ব আমাদের দেশের গবেষকরা দেখিয়েছেন। কৃষি ক্ষেত্রে বিআরআরআই (বিরি) লবণসহিষ্ণু ধান আবিষ্কার থেকে শুরু করে উন্নত প্রজাতির ধান আবিষ্কার করেছে। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মৎস্য, পশু, শাক-সবজি, ফল-মূলের উন্নত প্রজাতি আবিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশী গবেষক ও বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভাল করছে। শিল্পায়নে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। ইতোমধ্যে গার্মেন্টসহ কিছু কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানে অটোমেশন চালু হলেও দক্ষ লোকবলের অভাবে তা গতি পাচ্ছে না। শুধু প্রযুক্তির সূচনা করলে হবে না, দক্ষ লোকবল সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে হলে প্রযুক্তিবিদ্যা ও গবেষণার ওপর জোর দেয়ার বিকল্প নেই। প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক সৃষ্টি করতে যেমন উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অপরিহার্য, তেমনি তাদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। আমরা দেখেছি, আমাদের অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী মূল্যায়িত না হয়ে এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে বিদেশ চলে গিয়েছেন। সেখানে তারা নিরবিচ্ছিন্ন ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়ে গবেষণা করছেন এবং বিস্ময় জাগানিয়া প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছেন। এতে সেসব দেশ উপকৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারত বিদেশে চলে যাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। আমাদেরও উচিৎ প্রবাসী বিজ্ঞানী ও গবেষকদের ফিরিয়ে এনে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে কাজে লাগানো। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে চলতে হলে দেশে গবেষণা ও প্রযু্িক্ত খাতকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। এ খাতে যত বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এদিকে এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।