Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউরোপে কর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের পাড়ি দেয়া নতুন ঘটনা নয়। ইতোমধ্যে এই অবৈধ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে শত শত বাংলাদেশীর সলিল সমাধি হয়েছে। এ সংবাদ বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হযেছে। এমন প্রেক্ষিতে, একটি সুসংবাদ পাওয়া গেছে, গ্রিসে কৃষিখাতে শ্রমিক পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার মাধ্যমে। এর মাধ্যমে বছরে দেশটি ৪ হাজার শ্রমিক নেবে। পাঁচ বছরের জন্য ভিসা পাবে। বেতন-ভাতা দেশটির সরকারি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। যারা যাবে, তারা মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে কাজ করবে। এই প্রথমবারের মতো ইউরোপের কোনো দেশে বৈধভাবে শ্রমিক রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু নতুন শ্রমিক নয়, গ্রিসে অবৈধভাবে বসবাসকারীদেরও পর্যায়ক্রমে বৈধ করা হবে। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইউরোপে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির দ্বার উন্মোক্ত হলো বলে ধরে নেয়া যায়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ইটালি, ইংল্যান্ড, গ্রিস, মাল্টাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে শ্রমিক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।

ইউরোপের দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংকট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে কাজ করার মতো লোকের সংখ্যা কমছে। দেশগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ ও কর্মঠ শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটি বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রফতানির জন্য এক অফুরন্ত সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় পারিশ্রমিক অনেক বেশি। এ কারণে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত কিংবা অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমায়। তাদের বেশিরভাগই সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। এক মানবেতর জীবনযাপনের মুখোমুখি হয়। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে কাক্সিক্ষত দেশে পৌঁছে, তারা অবৈধভাবে লুকোচুরির মাধ্যমে কাজ করে। এদের বেশিরভাগই সেখানে গিয়ে নির্দিষ্ট কোনো কাজ করে না। ‘অডজব’ বা নিম্নশ্রেণীর কাজ করে কোনো রকমে টিকে থাকে। সাধারণত ইউরোপে প্রবেশের জন্য অভিবাসন প্রত্যাশীরা গেটওয়ে হিসেবে গ্রিসকে বেছে নেয়। সেখান থেকে ইটালিসহ অন্যান্য দেশে যায়। এক ধরনের বন্দিত্বের মধ্যে দেশগুলোতে তারা কাজ করে। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব বাংলাদেশীদের বৈধ করার তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। ফলে বছরের পর বছর ধরে তাদের অবৈধ হয়ে থাকতে হয়। করোনার এই সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রমিক সংকট তীব্র হয়ে উঠায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তি দেশগুলোর জন্য অন্যতম উৎস হতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে আমাদের শ্রমশক্তি রফতানির প্রধানতম বাজার হয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায় ৮০ লাখের মতো বাংলাদেশী কাজ করছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মরত আছে। এ প্রেক্ষিতে, ইউরোপে শ্রমিক সংকট বাংলাদেশের জন্য নতুন শ্রমবাজারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সেখানে সরকারি পর্যায়ে সমঝোতার মাধ্যমে বৈধভাবে হাজার হাজার শ্রমিক রফতানি করা যেতে পারে। এতে অবৈধভাবে বাংলাদেশীদের প্রবেশের হার অনেক কমে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে বেকারত্বের হার অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটিতে পৌঁছেছে। বেকারত্ব ঘুচাতে এবং স্বচ্ছলভাবে চলতে অসংখ্য পরিবার তাদের সন্তানদের ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও বিদেশে পাঠাচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এতে কেউ কাক্সিক্ষত দেশে পৌঁছতে পারে, কেউ নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরে। সরকারিভাবে ইউরোপের শ্রমবাজার ধরতে পারলে দেশের শ্রমশক্তি রফতানির বিশাল একটি ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে এবং রেমিট্যান্সের পরিমাণও অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

ইউরোপের শ্রমবাজার টার্গেট করে এখন থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং যথাযথ পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে। কোন দেশে কোন খাতে, কী ধরনের কর্মী প্রয়োজন, খোঁজ নিয়ে সে অনুযায়ী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নত বিশ্বসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় তা চাঙ্গা করতে প্রত্যেকেই জোরেসোরে কাজ শুরু করেছে। জনসংখ্যা হ্রাস এবং কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় লোকবল সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদার করতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। দেশগুলোর এখন বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়োগ করার বিকল্প নেই। আমাদের দেশের শ্রমিকের নিষ্ঠা ও কর্মক্ষমতা বিশ্বে সুবিধিত। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে চাহিদাও রয়েছে। শুধু প্রয়োজন দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। এ কাজটি করতে পারলে আমাদের জনশক্তি রফতানি নতুন মাত্রা পাবে। দেশে যেহেতু পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, তাই এ ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে। প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা নিতে হবে এখনই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউরোপ


আরও
আরও পড়ুন