Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নতুন শিক্ষাক্রমই যথেষ্ট নয়, শিক্ষার মানও বাড়াতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। তবে এ নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। যেটুকু হয়েছে, তাতে কেউ কোনো আপত্তি জানায়নি। বরং অনেক শিক্ষাবিশেষজ্ঞ বলেছেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবায়ন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত না হওয়ায় এ নিয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। কিয়দংশ প্রকাশিত হয়েছে, যার সারাংশ হচ্ছে, গত ৩ জানুয়ারি জারিকৃত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স লাগবে প্রথম শ্রেণিতে ৬ বছরের বেশি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭ বছরের বেশি, তৃতীয় শ্রেণিতে ৮ বছরের বেশি, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১ বছরের বেশি, সপ্তম শ্রেণিতে ১২, অষ্টম শ্রেণিতে ১৩ ও নবম শ্রেণিতে ১৪ বছর লাগবে। এ বছর থেকে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দিতে হবে। এতে মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে ইউএনএফপিএ’র তৈরি শাহানা কার্টুন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২২ সাল থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যাচ্ছে। পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করে ২০২৩ সাল থেকে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩-২০২৫ পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজ চলবে। পরবর্তীতে তিনি আরো বলেন, সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে ‘সুষ্ঠু সমন্বয়ের’ ওপর নজর থাকবে। এসএসসির আগে আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না। আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা থাকবে না তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ২০২৩ সাল থেকে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা থাকবে না। সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। শুধু দশম শ্রেণির লেখাপড়ার ওপর হবে এসএসসি পরীক্ষা। নবম-দশম শ্রেণিতে এখনকার মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ নামে আলাদা কোনো বিভাগ থাকবে না। এইচএসসিতে বিভাগভিত্তিক লেখাপড়া করবে শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষা হবে দু’বার। প্রথমবার একাদশ শ্রেণিতে, শেষবার দ্বাদশ শ্রেণিতে। দুটি পরীক্ষাই বোর্ডের অধীনে হবে। দুই পরীক্ষার নম্বর যোগ করে হবে চূড়ান্ত ফল। বর্তমান সময়ের তুলনায় অর্ধেক নম্বরে এসএসসি পরীক্ষা হবে। প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা স্কুলেই হবে। বাকি ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেবে শিক্ষা বোর্ড। এইচএসসিতে ৩০% নম্বরের ওপরে কলেজ মূল্যায়ন করবে। বাকি ৭০% ওপর হবে বোর্ড পরীক্ষা। উভয় স্তরের পাবলিক পরীক্ষায় বিষয় সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে অর্ধেক হয়ে যাবে। বাকি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে কলেজে। ২০২৫ সালের এসএসসি এবং ২০২৬ ও ২০২৭ সালের এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব পরীক্ষা হবে নতুন পাঠ্যক্রমে। অপরদিকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী গত ৩ ফেব্রুয়ারি বলেন, তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের দিন শেষ, চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগডেটা কিংবা ব্লক চেইন প্রযুক্তির সঙ্গে মানবিক সমাজকে যুক্ত করে বিশ্ব এখন পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের পথে ধাবিত হচ্ছে। পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের জন্য নিজেদের এখনই তৈরি করতে হবে।

সাম্প্রতিককালে দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বলছেন, আমরা চাহিদা মাফিক দক্ষ লোক পাচ্ছি না। তাই বিপুল বেতন দিয়ে বিদেশ থেকে দক্ষ লোক এনে কাজ করাতে হচ্ছে। যাদের সংখ্যা কয়েক লাখ। এতে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রারও অপচয় হচ্ছে। সিপিডির গবেষণা রিপোর্ট মতে, ৪৬% নিয়োগকারী দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। পরিকল্পনামন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দক্ষ লোকের অভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে কিছু ভুল থাকছে। এক গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ, আমলাদের অদক্ষতার কারণে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দক্ষতার ঘাটতি শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই নেই, এটা দেশের সব পেশার লোকের মধ্যেই রয়েছে, যার প্রমাণ প্রতিটি মুহূর্তেই পাওয়া যাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। দেশের প্রবাসীদেরও বেতন অনেক কম পাক-ভারতের শ্রমিকের চেয়ে। কারণ, এ দেশের বেশিরভাগ প্রবাসী অদক্ষ। এদিকে, দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী বগুড়ার আলমগির কবির ‘দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। দেশে এরূপ অসংখ্য আলমগির রয়েছে, যারা যেনতেন প্রকারেরও কর্ম পাচ্ছে না। তাই হতাশায় অনেকেই মাদকাসক্ত হচ্ছে, অনেকেই আত্মহত্যা করছে, অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছে, অনেকেই মাদক কারবারসহ নানা অপকর্ম করছে। এছাড়া, অনেকেই অবৈধভাবে বিদেশে যেতে চেয়ে সাগরে ডুবে মরছে! আর সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে যারা বিভিন্ন দেশে পৌঁছতে পারছে, তাদের অনেকেই কারাগারে থাকছে, অনেকেই আশ্রয়প্রার্থী হচ্ছে, আর বিরাট অংশ নিম্নতর কাজ করে কোনো মতে চলছে। ইউএনএইচসিআর’র তথ্য মতে, ২০২১ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শরণার্থী গেছে বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যায় রয়েছে বাংলাদেশি (১১%)। সাগরে ডুবে মারা গেছে অনেক।

বর্ণিত এ বিপরীতমুখী পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। আধুনিক যুগেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেকেলেই রয়েছে! উপরন্তু সে শিক্ষার মানও অতি নিম্ন। অবাধ নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, অটোপাশ, কৃত্রিম উপায়ে পাশের হার বৃদ্ধি করানো, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, স্টাফ, উপকরণ, সুষ্ঠু পরিবেশ, ভালো অবকাঠামো, জবাবদিহি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রকাশনা, দক্ষ শিক্ষক ইত্যাদির অভাবে শিক্ষার মান নিম্ন হয়েছে। ওদিকে কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করার কারণেও শিক্ষার মান হ্রাস পেয়েছে। এতে দেশের উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে ও বেকারত্ব বাড়ছে। বিআইডিএস’র সাম্প্রতিক জরিপ রিপোর্ট মতে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩৪% আর স্নাতক পর্যায়ে ৩৭%। আইএলও’র ২০১৯ সালের রিপোর্ট মতে, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। বর্তমানে বেকারত্ব আরও বেড়ে শিক্ষিতদের অর্ধেকের বেশি হয়েছে। অশিক্ষিতদের অবস্থাও তথৈবচ। কারণ, প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। যার সামান্যেরই কর্মসংস্থান হচ্ছে।

এই অবস্থায় সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সাধারণ শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ সব ধরনের শিক্ষার জন্য সরকার একটি শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে। তাতে কওমি মাদরাসা শিক্ষা নিয়েও সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। নতুন এই শিক্ষা আইন অচিরেই জাতীয় সংসদে পাস হয়ে কার্যকর হবে। কিন্তু নতুন শিক্ষা আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন কওমি নেতৃবৃন্দ। তাদের অভিমত, কওমি মাদরাসা শিক্ষায় আধুনিক শিক্ষা যুক্ত করা হলে এ শিক্ষার স্বকীয়তা থাকবে না। শিক্ষামন্ত্রী গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে বলেছেন, ‘দেশে বর্তমানে ১৯,১৯৯টি কওমি মাদরাসা রয়েছে। বর্তমানে ৬টি কওমি মাদরাসা বোর্ড রয়েছে। এগুলোকে সমন্বিত করে একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা প্রয়োজন। কওমি মাদরাসাসহ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকরণ এবং সরকারের নিবন্ধনের আওতায়ও আনতে হবে। এ লক্ষ্যে সমন্বিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার।’ তথ্য মতে, বর্তমানে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখের অধিক। সরকার ২০১৮ সালে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে। ফলে তারা বিভিন্ন চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। উপরন্তু তখন ৬টি বোর্ড মিলে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামের একটি বোর্ড গঠন করেছেন। এ ব্যাপারে গেজেটও প্রকাশ হয়েছে। সেটা এখনো কার্যকর হয়নি। কওমি মাদরাসা চলে মূলত মানুষের দানের ভিত্তিতে। সেখানে সরকারের সহায়তা তেমন নেই। মাদরাসাগুলো সংশ্লিষ্ট বোর্ড নিয়ন্ত্রিত। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র ও এতিম। কওমির শিক্ষা শতভাগ ইসলাম ধর্মভিত্তিক। তাই এর শিক্ষার্থীরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পারদর্শী। তাদের মূল্যবোধও সর্বাধিক, যা বর্তমানে দেশের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের সময়ে খুবই প্রয়োজনানুগ। কিন্তু, তারা কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ না করায় জীবনাচরণের অন্য ক্ষেত্র সম্প্রর্কে তেমন জানে না। তাই তাদের কর্মসংস্থান প্রধানত মসজিদ ও মাদরাসাভিত্তিক। এর বাইরে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তেমন নেই। মসজিদ ও মাদরাসার বেতনও সামান্য, যা দিয়ে আজকের চরম দুর্মূল্যের বাজারে নিজেই চলা কঠিন। তাই স্বজনদের ব্যয় নির্বাহ করার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়ত মসজিদ ও মাদরাসায় চাকুরি যাদের হয় না, তাদের অধিকাংশই বেকার থাকে। বাকীরা ছোট খাট পেশায় নিযুক্ত হয়। অথচ, তারা যদি ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতো, তাহলে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হতো। যেমন হচ্ছে আলিয়া মাদরাসার পড়ুয়াদের। দেশে আলিয়া মাদরাসার সংখ্যা অনেক। একটি মাত্র শিক্ষা বোর্ড- মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। সরকার কর্তৃকও নিবন্ধিত। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। ফলে আলিয়ার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নামী-দামী পেশায় নিয়োজিত হয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করছে। দেশেরও কল্যাণ হচ্ছে।

কওমি নেতৃবৃন্দের অভিমত, কওমি মাদরাসা চলে ভারতের দেওবন্দের নীতি অনুযায়ী। কিন্তু ভারতের কওমির শিক্ষার্থীরা হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ। পক্ষান্তরে এ দেশের কওমির শিক্ষার্থীরা তেমন হন না। শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষা যুক্ত করা দেওবন্দ নীতির পরিপন্থী নয়। দ্বিতীয়ত ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক মহিলা মাদরাসার শিক্ষক আয়েশা আকতার সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, ‘তার মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, অংক পড়ানো হয়। এরপর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি অংকের সাথে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান বিষয়ও রয়েছে।’ তাহলে কি উক্ত মাদরাসা কওমির স্বকীয়তা হারিয়েছে? মোটেও না। তাহলে সব কওমিতে বাংলা, ইংরেজি, অংক ও কারিগরি শিক্ষা চালু করা হলে অসুবিধা কোথায়?

দেশে যারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করছে, তারা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করছে না। আর যারা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করছে তারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করছে না। ফলে উভয়ের মধ্যে বিপরীতমুখী শূন্যতা থাকছে। ফলে দেশে দক্ষতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ঘাটতি হচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে অনৈতিকতা ব্যাপক বেড়ে গিয়ে মারাত্মক সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, পারিবারিক, সামাজিক ও সমষ্ঠিগত প্রথা ধ্বংস হচ্ছে এবং মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে! অন্যদিকে, বেকারত্ব ব্যাপকতর হয়েছে। এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে শূন্যতা পূরণ। অর্থাৎ ধর্মীয় শিক্ষায় আধুনিক শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা যুক্ত করা। উভয় শিক্ষার মান বিশ্বমানের করা। শিক্ষাকে ধর্ম, কর্ম ও বিশ্বমানভিত্তিক করা হলে দেশে সামাজিক অবক্ষয় ও বেকারত্ব দূর হবে, দক্ষতার ঘাটতি পূরণ হবে। শান্তি ও উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। তাই সরকার কওমি শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা শতভাগ ঠিক রেখে অতিরিক্ত হিসেবে আধুনিক শিক্ষা যুক্ত করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে সম্মত হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন।
দেশে বর্তমানে সাধারণ শিক্ষায় কর্মমুখী শিক্ষার হার দ্রুত বাড়ছে। জাপান, জার্মানিসহ উন্নত দেশগুলোতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭০% এর বেশি। এ অবস্থায় দেশের শিক্ষার্থীরা কর্মমুখী শিক্ষা থেকে পিছিয়ে থাকবে কেন? কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করার পর চাকরি না পেলেও নিজে কিছু করে চলার সক্ষমতা অর্জিত হয়। উপরন্তু বিদেশেও দক্ষ লোকের চাহিদা অনেক বেশি। বেতন-মর্যাদাও বেশি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র আধুনিক করলেই চলবে না, এর কারিকুলাম প্রতিবছর হালনাগাদ করতে হবে এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে বিশ্বমানের করতে হবে। এ জন্য দরকার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সব শূন্য পদ পূরণ, নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস নির্মূল, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, সর্বত্রই শতভাগ নিয়ম বাস্তবায়ন, সব প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক তদারকি দরকার। এছাড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা ইউজিসি’র মাধ্যমে গ্রহণ ও সনদ প্রদান করতে হবে। তাহলে সনদ বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষা মান বাড়াতে বাধ্য হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন না করে শুধুমাত্র আধুনিক শিক্ষা চালু করলে তাতে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত বটম লেবেলে শিক্ষার মানোন্নয়ন না হলে আপার লেবেলে শত চেষ্টা করেও শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • jack ali ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১১ পিএম says : 0
    Since 50 years not a single ruler don't know how to rule a country. If we appoint a donkey then donkey would have build our country better than China.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন