পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডারউইনের বিতর্কিত মতবাদ, হিন্দুত্ববাদ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার, কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখে মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আয়োজনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সবগুলো জেলায় মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং ওলামা মাশায়েখ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। একইসাথে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে মানবন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই দেশের আলেম-ওলামাদের শত বছরের দাবি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দেয়া হয়েছে মাদরাসা শিক্ষার জন্য পৃথক অধিদপ্তর, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, নিরসন হয়েছে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য। সরকার যখন মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়ে আলেম-ওলামাদের প্রশংসা পাচ্ছেন তখনই একটি কুচক্রিমহল কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনের বিতর্কিত মতবাদ, হিন্দুত্ববাদ, রথযাত্রা, হাজার হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, নগ্ন ও অশ্লিল ছবি যুক্ত করা এবং বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার বিরোধী বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষকরা এসব পড়াতে চাচ্ছেন না এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে এসব পড়তে চান না। মাদরাসা বা দ্বীনি শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞদের অন্ধকারে রেখে হঠাৎ করে মাদরাসার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে এসব অন্তর্ভূক্ত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন দেশের আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত সারাদেশে এসব মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে মাদরাসার বই থেকে বিতর্কিত লেখা, ছবি বাতিল করা এবং এর সাথে জড়িতদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে ভবিষ্যতে আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, বর্তমান সরকারের সাফল্য ম্লান করতে এনসিটিবিতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কিছু ব্যক্তি মাদরাসা, ইসলাম শিক্ষা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কারিকুলাম তৈরি করেছেন। তারা তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বিতর্কিত করতে চায়। অবিলম্বে এদেরকে চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে এবং মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম তৈরি করতে হবে। যেটা হবে মাদরাসা, ইসলাম বান্ধব ও এদেশের আলেম-ওলামা এবং পীর-মাশায়েখদের সাথে আলোচনা করে, তাদের পরামর্শে। তিনি বলেন, আমরা একটি সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দিতে চাই। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষার সাথে সাধারণ, বিজ্ঞান শিক্ষার সমন্বয় করে একটি নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আমরা খাটি ওয়ারিসাতুল আম্বিয়া তৈরি করতে পারবো।
শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, যারা স্বপ্ন দেখছে এদেশের মাদরাসাগুলোতে বানর থেকে মানুষ হয়েছে, রথযাত্রার শিক্ষা, মন্দিরে যাওয়ার শিক্ষা দিবে তাদের সেই স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। তাদেরকে এই চিন্তা-চেতনা, ষড়যন্ত্র থেকে পিছিয়ে আসতে হবে। এদেশে মুসলমান ও ইসলামী আকিদা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
জমিয়াত মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি দেখা করে বলেছি। মানবন্ধনের মাধ্যমে এবং সারাদেশের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা মাদরাসা শিক্ষকরা কোন রাজনীতি করি না, মসজিদের মিম্বরে বসে ইসলামী তাহজিব, তামাদ্দুন, একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা, আদর্শ ইসলামী পরিবার গঠনের কথা বলি। এই পরিবেশ থেকে সমাজকে যেন বিচ্যুত করা না হয় সেদিকে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দেবেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি পূর্ণ না হলে এদেশের ইসলাম প্রিয় মুসলিম ভাই, পীর-মাশায়েখদের নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করবো। তবে আমরা কোন আন্দোলনে যেতে চাই না, মানববন্ধনের পর দ্বিতীয় আর কোন কর্মসূচি দিতে চাই না, আমরা শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে চাই। আমাদের অন্য রাস্তায় প্রেরণের জন্য কোন কাজ যেন করা না হয়।
ঢাকা মহানগর জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দিক বলেন, সরকার জাতীয় কারিকুলামের আলোকে ২০২৩ সালে দাখিল ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সাধারণ বিষয়ের নতুন বই প্রণয়ন করেছে। এই বইয়ের আলোকে আগামী বছর পাঠদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে বাংলাদেশের হাজার বছর ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী বহুকিছু আছে। এমনকিছু নগ্ন ও অশ্লিল ছবি সেখানে সংযুক্ত করা হয়েছে যা বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার বিরোধী। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারও এই দর্শন ও চিন্তায় বিশ্বাস করেন না। কোন কুচক্রিমহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নির্বাচনের পূর্বে সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য সুকৌশলে জাতির বৃহত্তর অংশকে মাদরাসা বা দ্বীনি শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞদের অন্ধকারে রেখে হঠাৎ করে এসব বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেই কুচক্রিমহলের হীন প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করছি, প্রতিরোধ করছি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্মারকলিপি দিচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বইগুলোতে বিতর্কিত, প্রত্যাখ্যাত ডারউইনের মতোবাদ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, হিন্দুত্ববাদ, সামাজিক অনুষ্ঠান বলতে রথযাত্রা, এমন অশ্লিল ও নগ্ন ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে যেটা কল্পনা করা যায় না। যে প্রধানমন্ত্রী এদেশের শতবছরের দাবী ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়েছে, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করেছে, মাদরাসায় দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো নির্মাণ করছেন, মাদরাসা ও মাদরাসা শিক্ষার যে উন্নয়ন এই সরকারের সময়ে হয়েছে তা অতীতে কোন সময় সেটি হয়নি। কারা, কী উদ্দেশ্যে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আমাদের কৃষ্টি-কালচার, ইসলাম ধর্মবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে সেটাই রহস্য।
ঢাকা মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো. ছাদেক হাছানের পরিচালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় জমিয়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবুজাফর মো. ছালেহ্, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা জালালুদ্দীন, অধ্যক্ষ মাওলানা বদিউল আলম সরকার, অধ্যক্ষ মাওলানা এজহারুল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা রেজাউল করিম, মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমানসহ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ঢাকা মহানগরী ও জেলা শাখার নেতৃবৃন্দসহ মাদরাসা প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীগণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশে নেন।
মানববন্ধনে জমিয়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, যে দেশের নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান সে দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য, কৃষ্টি, দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির সাথে সাথে বর্তমান চাহিদাকে সমন্বয় করে দেশবরেণ্য আলেম ওলমাদের অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। আলেম-ওলামাগণ বারবার একই দাবী- মুসলিম জনগোষ্ঠির ইমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে আধুনিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্তি ও মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট উপযোগী পরিমার্জন সাপেক্ষে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০২২ সালের জন্য এনসিটিবি ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য যে ৯টি বই (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান) পাইলটিং/পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান করা হয় এবং ২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ, ৭ম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ঐসমস্ত বই স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে বলে এনসিটিবি ঘোষণা দিয়েছে, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্ণিত পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ-উদ্দেশ্য (জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এ বর্ণিত) এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে।
তারা বলেন, এসব পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি, চিত্র, শব্দ, বাক্য, তথ্য ও উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে সঙ্কিত করে তুলবে। অধিদপ্তরসমূহ ইতিমধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯টি বইয়ের মধ্যে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বানী, উদ্ধৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত আপত্তিজনক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন : বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ওষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ছাপানো হয়েছে। হিন্দু মহিলার শাঁখা পরা ছবি রয়েছে। ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪টি ছবি ছাপানো হয়েছে যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ বিশেষ।
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ (মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বানর থেকে), দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেয়া হয়েছে যা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যাখ্যাত।
জীবন জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রনাম, গানশোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দূর্গাপুজা, গীতাঞ্জলী, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপরন্ত বইগুলোতে যে সমস্ত মানুষের নাম ব্যবহৃত হয়েছে একটি মুসলিম দেশে সত্যিই আপত্তিকর। যেমন: আনিকা, লিটল, রাড, প্লাবন, রতন, দীপক, নন্দিনী, এন্তি, মিসেল, মনিকা চাকমা, ডেবিট, প্রিয়াঙ্কা, মন্দিরা ইত্যাদি। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯২% মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগি নয়। মাদরাসায় এসকল বই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রশ্নেই আসেনা।
জমিয়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, এই ধরণের পাঠ্যপুস্তক মাদরাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদরাসা শিক্ষাবান্ধব সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ধর্ম ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান: মাদরাসার স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়ে সকল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন জমিয়াত নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে বলা হয়, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর অবদান এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কৃতজ্ঞতার সাথে আজীবন স্মরণে রাখবে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমি মাদরাসার স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সনদের মান প্রদান, জনবল কাঠামো অনুমোদন, মাদরাসার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ৫৬০টি মডেল মসজিদ, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কে জাতীয় ঘোষণাসহ বহুমুখী পদক্ষেপ ইসলামী শিক্ষার ইতিহাসে সোনালী হরফে লেখা থাকবে। যুগের চাহিা পূরণে রূপকল্প ৪১, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, উন্নয়ন কিংবা যুগোপযোগী করা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলানের দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রেখেই পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে।
১৩ দফা দাবি: জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ১৩ দফা দাবিগুলো হল- ১. মাদরাসা শিক্ষার জন্য এ সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যবই, এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করার বিকল্প নেই । অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে।
২. দাবীকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্বপর্যন্ত প্রচলিত পঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি পরীক্ষা দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে। ৪. বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকুরী জাতীয়করণ করতে হবে।
৫. সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধান সহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
৬. প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ২০১৮ সালে প্রণিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা মঞ্জুরীর ১৪ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। ৭. মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধনপূর্বক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. আরবি প্রভাষকগণের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৯. অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
১০. কামিল পাশ সহকারী মৌলভীদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে। ১১. মাদরাসা শিক্ষকগণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে। ১২. মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) স্কুল ও কলেজের নীতিমালা ২০২১ এর সাথে সমন্বয় করে মাদরাসার অনার্স স্তরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। ১৩. প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে যা অমানবিক। অনতি বিলম্বে বকেয়াসহ প্রাপ্য ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখা। গতকাল সোমবার দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের একক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের এ কর্মসূচিতে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শিক্ষক, কর্মচারী ছাড়াও উলামা মাশায়েখগণ শরিক হন। বেলা সাড়ে ১১টায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতারা কোর্ট হিলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহানগর সভাপতি প্রিন্সিপাল আবুল বয়ান হাশেমী স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় প্রিন্সিপাল মাওলানা রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা ইনামুল হক, প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু সালেহ, প্রিন্সিপাল মাওলানা ড. মহিবুল হকসহ সংগঠনের মহানগর ও জেলা কমিটির নেতারা তার সাথে ছিলেন। মহানগর জমিয়াত সভাপতি প্রিন্সিপাল আবুল বয়ান হাশেমী ও সাধারণ সম্পাদক ড. মাওলানা ঈসমাইল নোমানী স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে দেশের মাদরাসা শিক্ষার ঐতিহ্য এবং স্বকীয়তা বজায় রেখে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি বা কারিকুলাম প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এতে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবী তুলে ধরা হয়।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতাদের বক্তব্য মনযোগ সহকারে শুনেন। তিনি সর্ববস্তুরের মাদরাসা শিক্ষকদের দাবি সম্বলিত এই স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন। তার আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একই দাবিতে এক বিরাট মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখার নেতৃৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ও আলেম-উলামার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণসহ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কক্সবাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেক কিছু করেছেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, কওমি মাদরাসার স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সনদের মান প্রদান, জনবল কাঠামো অনুমোদন, মাদরাসার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, মাদরাসা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা, ৫৬০টি মডেল মসজিদ, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-কে জাতীয় দিবস ঘোষণাসহ বহুমুখি পদক্ষেপ ইসলামি শিক্ষার ইতিহাসে সোনালী হরফে লেখা থাকবে। যুগের চাহিদা পূরণে রূপকল্প ৪১, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, উন্নয়ন কিংবা যুগোপযোগী করা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, ৯১ শতাংশ মুসলমান যে দেশে বসবাস করে, সে দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য, কৃষ্টি, দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতির সাথে সাথে বর্তমান চাহিদাকে সমন্বয় করে দেশবরেণ্য আলেম ওলমাদের অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি হবে এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। উন্নয়ন ও সংস্কার সম্পর্কে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দদের সাথে ৫টি কর্মশালায় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হয়। আলেম-ওলামাগণ বারবার একই দাবি করেন যে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে আধুনিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্তি ও মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট্য উপযোগী পরিমার্জন সাপেক্ষে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে গতকাল নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয় সড়কে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ এইচ এম ওহিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ মাওলানা নুর হাসান, জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন চৌধুরী, প্রিন্সিপাল মাওলানা শামছুুল এরফান, অধ্যক্ষ মাওলানা মীর মোশাররফ মো. মোস্তফা, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নান, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান, অধ্যক্ষ মাওলানা ইফতেখারুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাবউদ্দিন প্রমুখ।
মানবন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রণীত ২০২৩ সালের পাঠ্যসূচিতে ইসলামী ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিরোধী এবং নাস্তিক্যবাদী বই প্রনয়ন করা হয়েছে, যা আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও নাস্তিক্যবাদী বানানোর অপচেষ্টায় শুধু নয়, বরং তা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং ইমানে আঘাত করার শামিল। তাই ২০২৩ সালের পাঠ্যসূচি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি, যা স্মারকলিপিতে দেয়া হয়েছে। পরে জমিয়ত নেতৃৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করেন।
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ নূুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন আলীর নেতৃত্বে শত শত মাদরাসার শিক্ষক এ মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধন থেকে নেতৃবৃন্দ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ¬বের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনসিটিবির ৯টি বই পরীক্ষামূলকভাবে পড়নো হয়। ২০২৩ সাল থেকে ওই বইগুলো সমস্ত স্কুল ও মাদরাসার বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে এনসিটিবি। ওইসব পাঠ্যপ্স্তুকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি, শব্দ, বাক্য, তথ্য উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সস্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে শংকিত করে তুলেছে। বইগুলোতে মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের নীতি নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত বিজ্ঞান বইয়ে ১১জন উলঙ্গ নারী পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করবে। এছাড়া বইগুলোতে শত শত মেয়ের বেপর্দা ছবি, হিন্দু মহিলাদের শাখা পরার ছবি, কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪টি ছবি, ডারউইনের বিবর্তনবাদ, দেব-দেবীর নগ্ন, অর্ধনগ্ন ছবি, ইসপের গল্প, প্রণাম, গান বাজনা, নাচের শিক্ষা, পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতির চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া গল্পগুলোতে অমুসলিম নাম ব্যবহার করা হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও মূর্তি পূজার আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী নয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসার শিক্ষার স্বীকৃতি, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই। তবে এজন্য এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ কাজ করতে হবে।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন শার্শা উপজেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ, মনিরামপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওহাব ও বাঘারপাড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা হায়দার আলী।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে জেলা প্রশাসকের দফতরের সামনে গতকাল ঘন্টাব্যাপী কর্মসূচিতে বরিশাল জেলা ও মহানগর সহ বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দগণ বক্তব্য রাখেন। বরিশাল মহানগর সভাপতি মাওলানা আবদুর রব সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম, জেলা জমিয়াতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাওলানা মাহমুুদল হাসান এবং চরমোনাই মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক দফতরে স্মারকলিপে প্রদান করা হয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আহুত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারের হাতে নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সেক্রেটারী প্রিন্সিপাল মো. শফিউদ্দীন নেছারী, মহানগর সেক্রেটারী উপধ্যক্ষ মাওলানা ডিএম নুরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, অধ্যক্ষ এ এফ এম নাজমুস সউদ, অধ্যক্ষ নাসিরউদ্দিন মোহাম্মদ হুমাউন, অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ, সম্মিলিত ওলামায়ে একরামের সভাপতি মাওলানা ইব্রাহিম ফাইজুল্লাহ, জেলা সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম জেলা সহ সভাপতি শ ম শাহিন, ডুমুরিয়া উপজেলা সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসেন, বটিয়াঘাটা উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বোরহানউদ্দিন, দাকোপ উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ জিএম মনিরুজ্জামান, ফুলতলা উপজেলা সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, তেরখাদা উপজেলা সহ সভাপতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান, রূপসা উপজেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। সংগঠনের জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান ও জেলা সেক্রেটারী প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ শফিউদ্দীন নেছারী সাক্ষরিত স্মারকলিপিটি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক মো, মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এর ১৩ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরণ করবেন।
স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে মানববন্ধন ও সমাবেশে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দ বলেন, মাদরাসা শিক্ষার জন্য বর্তমান সরকার প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যবই, ঘঈঞই, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন করার বিকল্প নেই। অনতিবিলম্বে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করে এ কাজ শুরু করতে হবে। দাবিকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে। সাধারণ শিক্ষায় ঝঝঈ পরীক্ষা দশটি বিষয়ে ১০০০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে। বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীগণের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, শতকরা ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে কোরআন সুন্নাহ মুসলিম ঐতিহ্য ও কৃষ্টি বিরোধী শিক্ষা ব্যাবস্থা মেনে নেওয়া হবে না। তারা বলেন, খুব দ্রুত দেশের বরেণ্য আলেম ওলামাদের অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও তদারকি এখন সময়ের দাবি। গতকাল সোমবার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির নির্দেশনার আলোকে বগুড়ার সাতমাথায় এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপরোক্ত আহবান জানানো হয়। হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্র এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই মানবন্ধন কমৃসূচিতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাই বারী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা রাগেব হাসান ওসমানী, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শাহিদুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুর রহমান, প্রন্সিপাল মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা রেজাউল বারী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা এবিএম হাফিজুর রহমান, শাজাহানপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবু নসর মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, প্রন্সিপাল মাওলানা ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বগুড়া শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লা শাখার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ৯১ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য-কৃষ্টি লালিত সংস্কৃতির সাথে সমন্বয় করে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রণয়ন করা হবে এটা দেশের আলেম ওলামাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ঘঈঞই ঘোষণা দিয়েছে ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে। গতকাল কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সফিকুল আমিন পাটোয়ারি প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধা থেকে জানান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পালন করা হয়। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গাইবান্ধা জেলা শাখা এইসব কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন শেষে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জাহিদ হাসান সিদ্দিকীর কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মুখ ডিবি সড়কে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সভাপতি শরীফ মো. আবু ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, সংগঠনের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মাদরাসার পাঠ্য পুস্তকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির যে সমস্ত বই স্কুল ও মাদরাসার বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানোর জন্য এনসিটিবি নির্দেশনা জারি করেছে তা ধর্মপ্রাণ মুসুলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত করে তুলেছে। তারা বলেন, ওইসব বইয়ে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়েকেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনিষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বাণী, উদ্বৃতি, নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত বিজ্ঞান বইয়ে উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি, ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ বিশেষ। তাছাড়া সামগ্রিক বিবেচনায় ৯১% মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরী বইগুলো স্কুলের জন্যও উপযোগী নয়। মাদরাসায় এ সব বই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহার করা সম্ভব নয় বল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।