Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তামিমের ম্যাচ ছিনিয়ে নিলেন মৃত্যুঞ্জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট ক্যারি করে মিনিস্টার ঢাকাকে দিচ্ছিলেন আরেকটি জয়ের সুবাস। ফিফটি তুলে তামিম ইকবাল এগিয়ে যাচ্ছিলেন রোমাঞ্চজাগানিয়া এক উল্লাসের দিকেই। তবে হঠাৎই সেই দিক পাল্টে দিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী! তার করা শেষ ওভারে ১৯ রানের হিসেবটা আর মেলাতে পারেনি মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ২০তম ওভারের প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে কাইজ আহমেদের স্ট্যাম্প উপড়ে দেন মৃত্যুঞ্জয়। রোমাঞ্চের বীজ বোনা শুরু সেখানেই। পরের তিন বলে ব্যাটেই ঠিকমতো নিতে পারেননি নাঈম, কোনো মতে করলেন জায়গা বদল- যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা! পঞ্চম বলটা ইয়র্কার করলেন, তামিম বাই থেকে নিতে পারলেন একটি রান। মৃত্যুঞ্জয় উদযাপন শুরু করে দিলেন তখনোই। শেষ বলে মিনিস্টার ঢাকার প্রয়োজন তখন ৬ রান, স্ট্রাইকে আটে নামা নাঈম। তবে মৃত্যুঞ্জয় একটু গুবলেট পাকালেন এরপর, শেষ বলটা ফুলটস করে দিলেন নো। সেটিকেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ তরুন এই ব্যাটার। শেষ বলের ফ্রি হিটে ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না নাঈম, ড্রাইভ করলেন সোজা ব্যাটে। কিন্তু যথেষ্ট জোর হলো না মারে। মৃত্যুঞ্জয়ের কণ্ঠের জোর অবশ্য শোনা গেল টিভি মাইকেও- ‘রিমেম্বার দ্য নেইম’। অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচ জয়ের আনন্দ চিৎকার! তার সতীর্থরাও তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছুটছে দিগি¦দিক। অবিশ্বাস্য এক জয়ের উচ্ছাস তো এমন বাঁধনহারাই হওয়ার কথা।
জয়ের দুয়ারে থাকা ঢাকা শেষ দুই ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি তরুণ দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও মৃত্যুঞ্জয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। পুরো সময় ক্রিজে থেকে ৫৬ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেও তামিম মাঠ ছাড়লেন শেষ ওভারে পর্যাপ্ত স্ট্রাইক না পাওয়ার হতাশায়। তামিমের চোখেমুখে তখন রাজ্যের অন্ধকার। দারুণ খেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দারুণ খেলেও ঢাকার ওপেনার অসহায় হয়ে দেখলেন প্রতিপক্ষের উল্লাস। ম্যাচের আগে আরেকদফায় অধিনায়ক পরিবর্তন করে ভাগ্যের বদল কিছুটা দেখল চ্যালেঞ্জার্স। এবারের বিপিএলের সম্ভবত সবচেয়ে রোমাঞ্চ জাগানিয়া ম্যাচে ঢাকাকে ৩ রানে হারিয়ে আপাতত টুর্নামেন্টে টিকে রইল আফিফ হোসেনের দল। ৯ ম্যাচ শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন চারে আছে চট্টগ্রাম। ২ ম্যাচ বাকি থাকতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ঢাকা।
প্লে-অফের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে এ ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল চট্টগ্রামের। এ ম্যাচে আবার অধিনায়ক বদলে ফেলেছে তারা, আগের ৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া নাঈম ইসলাম দলেই জায়গা পাননি। তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেছেন আফিফ হোসেন। শামীম হোসেনের ৩৭ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ভর করে ১৪৮ রান তুলেছিল তারা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকা পরিণত হয় ২১/৩-এ। এরপরই মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে তামিমের গড়া ৫৯ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ঢাকা জয়ের বেশ কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে আটকে যেতে হলো তাদের।
১৪৮ রান তাড়ায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদের পর ইমরানউজ্জামান, বা চারে আসা মাশরাফি বিন মুর্তজা- তামিমকে শুরুতে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। এরপরই মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তামিমের ঐ জুটি। তামিম অবশ্য শুরুতে সময় নিয়েছেন বেশ, প্রথম ২১ বলে এ বাঁ হাতি করেন ২১ রান। মেহেদী হাসান মিরাজকে ৩ বলের ব্যবধানে ২টি চার মেরেই বদলে ফেলেন ব্যাটিংয়ের ধরণ। অর্ধশতক পান ৩৯ বলে।
অবশ্য এর আগেই মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মিরাজ। তাতে দারুণ অবদান আছে শামীমেরও। স্লগ সুইপ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, সীমানার ওপর ক্যাচটা নিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই শামীম ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বেনি হাওয়েলের দিকে। অবশ্য মাহমুদউল্লাহর উইকেটের পরও শুভাগত হোম ও তামিম ঠিক পথেই রেখেছিলেন ঢাকাকে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ১১ বলে ১৯ রান করা শুভাগত শরীফুলের বলে বোল্ড হলে বিপত্তির শুরু। সে ওভারের শেষ বলে চার মেরেছিলেন তামিম, তবে পরের ওভারে দর্শক হয়েই থাকতে হয় তাঁকে বেশিরভাগ সময়। শেষ ওভারের প্রথম বলে কায়েস আহমেদকে বোল্ড করে খেলাটাকে নিজেদের দিকে টেনে আনেন মৃত্যুঞ্জয়। এমনিতে টপ অর্ডারে খেলা নাঈমকে আট নম্বরে পাঠাতে হয়েছে ঢাকার, নিশ্চিতভাবেই সে সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে তাদের। ঘটনাবহুল ওভারে উল্টো নায়ক বনে গেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চট্টগ্রাম শুরুতে ঠিক সুবিধা করতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারে জাকির হোসেন ফেরার পর উইল জ্যাকস ও আফিফ হোসেনের জুটিতে উঠেছে ৪০ রান, তবে তারা এ সময়ে খেলেছেন ৩৫ বল। দুজনই ২৪টি করে বল খেলার পরও বড় করতে পারেননি ইনিংস। এ দুজনের পর মিরাজ ও আকবর আলীও ফিরেছেন দ্রæত, ১৪তম ওভারে ৮৪ রান তুলতে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে চট্টগ্রাম। এরপরও তারা ১৪৮ পর্যন্ত গেছে শামীমের ওই ইনিংসে। টুর্নামেন্টজুড়েই নিজেকে হারিয়েই খোঁজা শামীম এদিন হাওয়েলকেও সহকারির ভ‚মিকায় পাঠিয়েছিলেন। পেয়েছেন এ মৌসুমের প্রথম অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়, শেষ ৪ ওভারে চট্টগ্রাম তুলেছে ৫১ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (শামীম ৫২, আফিফ ২৭, জ্যাকস ২৬, হাওয়েল ২৪*; মাহমুদউল্লাহ ১/৫, আরাফাত ১/১৬, মাশরাফি ১/২৪, ফজল হক ১/৩২)। মিনিস্টার ঢাকা : ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (তামিম ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৪, শুভাগত ২২; শরীফুল ২/২৮, মৃত্যুঞ্জয় ২/২১, নাসুম ১/১৫, মিরাজ ১/২৯)। ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৩ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : শামীম হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তামিম

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ