Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোলাগুলি সংঘর্ষে ২ জনের মৃত্যু

সপ্তম ধাপের ১৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সপ্তম ধাপের ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সহিংসতায় ২ জন নিহত হয়েছে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া ইউনিয়নে বোমা বিস্ফোরণ এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, কেন্দ্র দখলে নিতে ব্যাপক গোলাগুলি, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, নৌকায় সীলসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সহিংসতায় এক কিশোরসহ দুইজনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। এ নিয়ে এ উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় তিনজনের প্রাণ গেল। ভোটের প্রচারের সময় ধর্মপুর ইউনিয়নে সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়।
সাতকানিয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে সহিংসতার ধারাবাহিকতায় গতকাল ভোটগ্রহণের শুরু থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়। নলুয়া ইউনিয়নে তাসিব (১৩) নামের এক কিশোর স্কুলছাত্র এবং বাজালিয়া ইউনিয়নে আবদুস শুক্কুর (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। দুপুরে নলুয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের বাইরে তাসিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন। সে স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
তাসিবের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, কেন্দ্রের বাইরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুসারীরা মারামারি করছিলেন। একপক্ষ তাসিবকে কারও সমর্থক মনে করে উপর্যপুরি কুপিয়ে জখম করে। পরে তাকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাসিবের চাচা মিজানুর রহমান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী।
এদিকে বাজালিয়া ইউনিয়নে গুলিতে নিহত আবদুস শুক্কুর এই ইউপিতে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী তাপস কান্তি দত্তের অনুসারী। সাতকানিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুকিবুল হোসেন বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাজালিয়া বোর্ড অফিস কেন্দ্রে শুক্কুর গুলিবিদ্ধ হন। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে খাগরিয়া ইউনিয়নে গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষ প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়ে। সংঘাতের পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। সোনাকানিয়া ইউনিয়নে ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে জোরপূর্বক নৌকায় সিলমারার অভিযোগ করেন আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু তাহের। তার অভিযোগ, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলে নেয়।
এরপর নৌকায় সিলমারে। ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরী একটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী জসিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে তার সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ করেন। উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যাপক গোলাগুলির কারণে দুই দফা ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। প্রথম দফায় গোলাগুলির পর ভোট বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়োগ করে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা চলে গেলে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
প্রিসাইডিং অফিসার তামজিদুল হক জানান, দুই দফা গোলাগুলির পর ভোটারশূন্য হয়ে গেছে কেন্দ্র। এ কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ভোটের আগের রাতে অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা ও পাঁচ সহযোগীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, রাত ১১টায় প্রাইভেটকার যোগে কয়েকজন বহিরাগত সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করাকালে স্থানীয়দের তাদের আটক করে। তাদের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়। নৌকার প্রার্থীর সমর্থনে তারা সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া ইউনিয়নে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভোটকেন্দ্রে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করেছে এক প্রার্থীর সমর্থকরা। পরে জনগণ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে তারা পালিয়ে যায়। দুপুর পৌনে ২টার দিকে সেনুয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চৌধুরীহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার উম্মেদা খাতুন বলেন, আমি ভোট দিতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ কেন্দ্রের পূর্ব পাশ থেকে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আসে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার পাঁচটি ইউপির ভোট গ্রহণের শুরুটা ছিল শান্তিপূর্ণ। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন শুরু হলেও দুপুরের পর বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভোট স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টার পর সদর ইউনিয়নের পাইলট ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ৩০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় মন্দিরা চাকমা নামের এক মহিলা সদস্য প্রার্থী এবং রূপায়ণ চাকমা নামের এক সদস্য প্রার্থী আহত হন। আহত রূপায়ণ চাকমা বলেন, তালা প্রতীকের সদস্য পদপ্রার্থী আবুল বাশার ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর বেলা তিনটার দিকে এ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রিকল চাকমা। তিনি বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রটি স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বেলা ১১টার দিকে সদর ইউনিয়নের পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের পোলিং এজেন্টদের সামনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতীক সংবলিত ব্যালটে সিল দিতে দেখা গেছে। এ সময় পাঁচজন পোলিং এজেন্টের কাছে মুঠোফোন পাওয়া যায়।
সপ্তম ধাপে দেশের ২০ জেলার ২৪টি উপজেলায় ১৩৮টি ইউপিতে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯টিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। এ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোট ৭১ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ১১ জন। এছাড়াও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সহিংসতায় ইসির দায় নেই : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন জীবনহানি আশা করে না। এর পরও অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে কমিশনের ব্যর্থতা নেই। কারণ সহিংস ঘটনাগুলো স্থানীয়ভাবে সংঘটিত হয়। সরাসরি কমিশনের কোনো দায় নেই। এটা স্থানীয় প্রশাসন দেখবে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করি। গতকাল সপ্তম ধাপের ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটের পর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
অশোক কুমার বলেন, দুজন ব্যক্তি নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্থানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারিতে মারা গেছেন। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় প্রশাসন।
তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়মে জড়িতদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনিয়মে জড়িত ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এগুলোর তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি চলে যাওয়ার মতো স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে।
নির্বাচন কেমন হলো জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, নির্বাচন ওভারঅল ভালো হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যালট পেপারে বিকেল সাড়ে ৫টার তথ্য অনুযায়ী ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশের মতো। আর ইভিএমে পড়েছে ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ