Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকার মোকাবেলায় রাশিয়ার পাশে চীন

ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের আহ্বান শি এবং পুতিনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গতকাল বেইজিং অলিম্পিকের সাইডলাইনে একটি বৈঠকের সময় ন্যাটোকে আরও সম্প্রসারণ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, ক্রেমলিনের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
চীনের রাজধানীতে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিনে অনুষ্ঠিত দুই নেতার শীর্ষ সম্মেলন, বেইজিং এবং মস্কোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বে পরিণত হওয়ার আরও একটি ধাপ চিহ্নিত করেছে, কারণ উভয়ের জন্য পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। ক্রেমলিনের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিটির ইংরেজি ভাষার সংস্করণ অনুসারে, দুটি দেশ ‘বিশ্বাস করে যে কিছু রাষ্ট্র, সামরিক ও রাজনৈতিক জোট অন্যদের নিরাপত্তার ক্ষতির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একতরফা সামরিক সুবিধা পেতে চায়।’

রাশিয়া এবং চীনও ‘ন্যাটোর আরও সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে এবং উত্তর আটলান্টিক জোটকে তাদের মতাদর্শিক শীতল যুদ্ধের পন্থা পরিত্যাগ করার, অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্বার্থ, তাদের সভ্যতাগত, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পটভূমির বৈচিত্র্যকে সম্মান করার জন্য আহ্বান জানায় এবং অন্যান্য দেশের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের প্রতি ন্যায্য ও বস্তুনিষ্ঠ মনোভাব প্রদর্শনের আহ্বান জানায়,’ ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমওএফএ) একটি রিডআউট বলেছে যে, দুই নেতা ‘চীন-রাশিয়া সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত কয়েকটি বড় ইস্যুতে গভীরভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ মতামত বিনিময় করেছেন’। কিন্তু তারা ন্যাটোর কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বৈঠকটিকে ‘উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে’ অনুষ্ঠিত বলে বর্ণনা করেছে এবং বলেছে যে, শি ‘দুই দেশের মধ্যে উচ্চ-স্তরের পারস্পরিক বিশ্বাসকে সহযোগিতার ফলাফলে রূপান্তর করতে’ পুতিনের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।

রিডআউটে বলা হয়েছে, ‘শি জোর দিয়েছিলেন যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গভীর এবং জটিল পরিবর্তনের মুখে, চীন এবং রাশিয়া পরস্পর-পরবর্তী কৌশলগত সমন্বয়কে গভীর করতে এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি একটি কৌশলগত পছন্দ যা চীন এবং রাশিয়া এবং বৃহত্তর বিশ্ব উভয়ের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ একইভাবে সাংবাদিকদের সাথে একটি কনফারেন্স কলে শীর্ষ সম্মেলনটিকে ‘অংশীদার এবং মিত্রদের একটি অত্যন্ত উষ্ণ, গঠনমূলক বৈঠক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ‘একই সময়ে, (এটি) খুব সারগর্ভ ছিল,’ তিনি বলেছিলেন। পেসকভের মতে, পুতিন এবং শি প্রধানত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন, তবে আন্তর্জাতিক এজেন্ডার বিষয়গুলিও উত্থাপিত হয়েছিল। বর্ধিত আলোচনার পর, দুই নেতা ‘আন্তর্জাতিক সমস্যা, নিরাপত্তা গ্যারান্টি, আঞ্চলিক সমস্যা ইত্যাদির উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন,’ পেসকভ যোগ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া সহ পশ্চিমা সরকারগুলো চীনের মানবাধিকার রেকর্ডের উপর কূটনৈতিক বয়কট ঘোষণা করেছে, পুতিন গেমসে অংশ নেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের একটি ছোট দলের মধ্যে রয়েছেন। অন্যান্য নেতারা বেইজিংয়ের কঠোর কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের উল্লেখ করে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এশিয়া এবং ইউরোপে জোট তৈরির এবং তৎপরতা বাড়ানোর যত চেষ্টা আমেরিকা করবে চীন ও রাশিয়া ততই ঘনিষ্ঠ হবে। কারণ, বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকার অব্যাহত প্রাধান্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য নিজেদের ঐক্যকে একটি অস্ত্র হিসাবে বিবেচনা করছে এই দুই দেশ। ডিসেম্বরে তাদের মধ্যে সর্বশেষ যে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়, সেখানে পুতিন এবং শি এমন একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংকল্প করেন, যেখানে ‘আমেরিকা এবং ডলারের’ প্রাধান্য থাকবে না। এ ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকা উদ্বিগ্ন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া নিয়ে নেয়ার পর আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখনও প্রেসিডেন্ট পুতিন চীনের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং সাড়া পেয়েছিলেন। আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেইজিং শুধু তেল এবং গ্যাস কেনা নিয়েই মস্কোর সাথে চারশো’ বিলিয়ন ডলারের (৪০ হাজার কোটি ডলার) চুক্তি সই করে, যা সেই সময়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভরাডুবি থেকে থেকে বাঁচিয়েছিল। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি নিউজ।



 

Show all comments
  • Sayed Alli Molla Saao ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
    সাম্রাজ্যবাদ মানে যুদ্ধই তাদের আয়ের উৎস। অস্ত্র বিক্রি হবে, তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। ওরা যুদ্ধবাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Hakim ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৪৬ এএম says : 0
    পুরো দূনিয়ায় নিরপেক্ষতার নামে আসলে চলছে ধর্ম যুদ্ধ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৫৬ এএম says : 0
    রাশিয়া চীন এক হলে আমেরিকা কে এক হার বদলে তিন হাত দিতে পারবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ