Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মীয় ও সংস্কৃতিতে নামের প্রভাব

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১৪ এএম

দু’শব্দে বা এক শব্দে ইসলামী নাম হতে পারে। কারণ শব্দের এ দীর্ঘ নামের ঐতিহ্য আমরা পেয়েছি মূলত আরবদের থেকে। আরব দেশে সাত, আট বা ততোধিক শব্দে এক ব্যক্তির নাম হয়। প্রথম এক বা দুই শব্দ ব্যক্তিটির নাম, তার পরের শব্দগুলো হলো তার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা বংশের নাম। আরবদের দীর্ঘ নাম দেখে বাঙ্গালী মুসলিমদের সখ হল কয়েক শব্দে নাম রাখার। আরবী না জানা এবং আরব ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় না থাকার কারণে মুসলিমগণ তাদের নাম দীর্ঘ করল আরবদের লম্বা নামের তাৎপর্য উপলব্ধি ছাড়াই। মূলত নাম হবে এক বা দু’শব্দে। এজন্য মুহাম্মদ সা. ও তাঁর সাহাবী আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী রা. সহ প্রায় সকল সাহাবীর নাম এক বা দুই শব্দেই নামকরণ করা হয়েছে। আবার অনেকে এরূপ লম্বা নাম সংক্ষেপে লেখেন। যেমন লম্বা নাম এ. কে. এম.এইচ.এম.ভি. রহমত উল্লাহ চৌধুরী (টুকু মিয়া)। কেন এরূপ লম্বা নাম? ঐ উচ্চারণ করাও যায় না, আবার লেখতে গেলেও কয়েক ডজন অক্ষর লাগে। হালকা পাতলা ও সহজে উচ্চারণ করা যায় এরূপ নাম রাখাই উচিত।
আমাদের সমাজে সাধারণত একজনের দু’টি নাম থাকে। একটি ডাক নাম এবং অপরটি আসল নাম। আজকাল অনেকে আসল নামের সাথে ডাক নামও জুড়ে দিয়েছেন। কোন কোন মুসলিম ছেলে-মেয়ের ডাক নাম শুনে শত দুঃখের মাঝেও হাসি পায়। যেমন ঝাড়ু, ঝাড়ুন, পঁচা, ভেটকু, মখন, চিনি, ক্ষুদ, জগা, মগা, কলা, ধলা, পেছন, বচন, রচন, চাঁদ, সুরুজ ইত্যাদি। আমেরিকার এ্যাপলো আর রাশিয়ান লুনাও বাদ যাচ্ছে না। উদ্ভিদ জগত, প্রাণী জগত, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, মাঠ-ঘাট, অলি-গলি অর্থাৎ যা স্মরণে আসছে তাই নাম রাখা হচ্ছে। আমার মনে হয় একটি আসল নাম, একটি ডাক নাম এ দু’টো নামের ধারা এদেশে মুসলিমদের মধ্যে এসেছে হিন্দুদের ধারা থেকে। হিন্দু শাস্ত্র মতে শিশুর দু’টি নামের বিধান আছে। একটি প্রকাশ্যে, অপরটি গুপ্ত, শুধু পিতা-মাতার জ্ঞাতব্য। যার ফলে আমাদের দেশে ডাক নামে ডাকা হয়, এটি হয় প্রকাশ্য। আর আসল নাম পরিবারের লোকেরা জানেন অথবা শিক্ষা ক্ষেত্রে সনদপত্রে বা নিবন্ধন পত্রে লিখা থাকে। তবে উপনাম (কুনিয়্যাত) বা উপাধি হিসেবে শরী‘আহ্ সম্মত একাধিক নামও অনেকে গ্রহণ করে থাকেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। আমাদের সমাজে মুসলিমদের মধ্যে দু’ধরনের লোক রয়েছে যারা ভিনদেশী ও হিন্দুয়ানী নামের চর্চা করেন। একদল শহুরে মুসলিম সমাজের টপ সোসাইটি বলে তারা পরিচিত। বিদেশী নামের প্রতি তাদের মোহ অত্যাধিক। যেমন-লিলি, রোজী, ডেইজী, মিন্টু, রিন্টু, সেন্টু, জন্টু, চম্পা, পপি, বিউটি, লাভলী, এলবার্ট, এলবাম, এডোয়ার্ড, চার্র্লি, লেলিন, স্টালিন, রুশো ইত্যাদি। গরিবের মধ্যেও কেউ ভদ্রলোক সাজার প্রবণতায় বাচ্চাদের এন্সী, ফেন্সী, ডেন্সী রেখে কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অন্য দলের মধ্যে অতিমাত্রায় স্বদেশী হওয়ার বাতিক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের রাখা নাম শুনলে বুঝার মাধ্যম নেই যে, তারা মুসলিম না হিন্দু সন্তান যেমন- স্বাধীন, বিন্দু, সিন্ধু, তরঙ্গ, পদ্ম, বিপ্লব, বিপুল, সৌরভ, গৌরব ইত্যাদি। অপর দিকে অন্য আরেক ধারা রয়েছে যারা বাংলা আর আরবী মিশ্রিত করে জগাখিচুড়ী এক ধরনের নাম রাখেন। যেমন- কৌশিক আহমদ, অনীক ইসলাম, অম্লান দেওয়ান পার্থ আহমেদ, সুহৃদ ইসলাম, শুভ রহমান, ঋষি উল্যাহ, হেনরী আমীন, সুমন হোসেন, সাজু আক্তার, শিখা আখতার ইত্যাদি। অনেকে আবার এরূপ নাম দেখে মনে করেন ওরা বোধ হয় নও মুসলিম। কিন্তু আসলে তা নয় বরং এরা মুসলিম পিতামাতার সস্তান। আবার হিন্দুদেও দেব-দেবী, দূর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী ইত্যাদিও নামেও মুসলিম সন্তানদের নাম রাখা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার রাখছেন এমন শব্দে যার কোন অর্থ নেই। যেমন- দু’পুত্রের নাম রাখা হয়েছে তন্ময় ও উন্ময়। উন্ময়ের অর্থ সন্তানে বাবাও হয়তো জানেন না।
ইসলামে নাম ধরে ডাকতে নিষেধ নেই। তবে পিতা-মাতা, বড়দের সম্মান নষ্ট হয় এরূপ সম্বোধন ইসলামে নিষিদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজে বহু স্ত্রী তার স্বামীকে আপনি করেই সম্বোধন করেন। তবে এ ধারা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন অনেক স্ত্রী তার স্বামীকে নাম ধরে বাসার চাকর-বাকরের মত ডাকেন। শিশু সন্তানরা পিতা-মাতাকে তুমি সম্বোধন করেন। এছাড়া ব্যক্তি ব্যক্তিকে পারস্পরিক নাম ধরে ডাকার মধ্যেও একটি শিষ্টাচারিতা রয়েছে। কোন সম্মানিত ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাকে স্যার স্যার বলে সম্মান দেখানো হচ্ছে অপর দিকে তার অনুপস্থিতিতে যেনতেন ভাবে তার নাম ধরে তার সম্পর্কে বলা হচ্ছে। আবার আজকাল এক ধরনের নাম ধরনের নাম ধরে ডাকার শিষ্টাচার চালু করেছে বিবিসি। যা তারা তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলার সময় বলে থাকে। যেমন- বলুনতো আনিস, ঢাকায় কেমন হরতাল দেখলেন ইত্যাদি। বলুনতো, দেখলেন ইত্যাদি শব্দে যথেষ্ট শিষ্টাচারিতা থাকলেও কিন্তু সম্বোধনে না আছে মি., না আছে জনাব। এভাবে সম্মানহীন এক ধরনের নাম ধরে ডাকার সংস্কৃতি আমাদের সমাজে চালু হচ্ছে ।
নামকরণ ও নাম ধরে ডাকা ইসলামী রীতির অনেকাংশে বিকৃত অনুশীলন আজ মুসলিমদের মধ্যে চালু হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানে বিকৃত অনুশীলন আজ মুসলিমদের মধ্যে চালু হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করলে যে বিষয়গুলো ফুটে উঠে সেগুলো হলো,
আামাদের মুসলিম সমাজের অনেকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সাদৃশ্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞ। এছাড়া অনেক সন্তানে নামকরণের ইসলামী নীতি সম্পর্কেও অজ্ঞ। ফলে তারা নানা বিকৃত ধারা চর্চা করছে। যার স্পষ্ট উদাহারণ হচ্ছে- আমাদের সমাজে একদল মুসলিম পবিত্র কুরআনে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এতটুকু বুঝেই আবেগে সন্তানের নাম রাখা শুরু করেছেন। অথচ শব্দটির অর্থ খুবই খারাপ। যেমন, তুকায্যিবান (মিথ্যাচারিতা), খিনজীর (শুকর), জাহান্নাম (নরক), আযাবুন আলীম (যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি) ইত্যাদি। এটি অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া সমাজে মফিজ, আবুল বলে একে অপরকে গালি দেয়। অথচ এটি ইসলামী নামের অংশ। এটির অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।
অমুসলিম লেখক, সাহিত্যিকগণ কর্তৃক মুসলিম নামের বিকৃতি ও মুসলিম নামকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবণতাও মুসলিমদেরকে এ ধরনের বর্জনে প্রলুব্ধ করেছে। যেমন- কলকাতা থেকে ছাপানো বাংলা কবিতার বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ পাঠ্যটি সচিত্র।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মীয় ও সংস্কৃতিতে নামের প্রভাব
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ