Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের ক্যালেন্ডারে নতুন বছর আসে কীভাবে, কীভাবে উদযাপিত হয় নববর্ষ?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:৩১ পিএম

চান্দ্র নববর্ষ ২০২২ শুরু হচ্ছে পয়লা ফেব্রুয়ারি। চীন, পূর্ব এশিয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চীনা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। চীনা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন এই বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে চীন ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে।

নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপক আয়োজন, পাশাপাশি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আর নতুন বছরে সৌভাগ্য কামনা করে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। চীনা নববর্ষ শুরুর পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। কী সেই গল্পগাঁথা। নববর্ষ উদযাপনের নানা অনুষ্ঠানগুলোই বা কী?

শীত মরশুমের সবচেয়ে ছোট দিন ২১ ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয়বার যখন নতুন চাঁদ ওঠে তার পরের দিন থেকে শুরু হয় উৎসবের উদযাপন। চীনের চান্দ্র ও সৌর মিশ্র ক্যালেন্ডারে এটি প্রথম অমাবস্যার পর নতুন চাঁদ ওঠার দিন। এই তারিখটি সাধারণত পড়ে ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

এটি বসন্ত উৎসব হিসাবেও পরিচিত। পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর মধ্যে দিয়ে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি কামনাই সাধারণত নববর্ষ উদযাপনের রীতি। চীনারা তাদের ক্যালেন্ডার ষাঁড়ের বছরকে বিদায় দিয়ে আজ বাঘের বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই উপলক্ষে পরিবারগুলোতে চলছে ব্যাপক খাওয়াদাওয়ার উৎসব, চলছে আতসবাজির বর্ণাঢ্য প্রদর্শন এবং ড্রাগন নাচ। মূল উৎসবটা হয় পুরনো বছর বিদায়ের দিন এবং নববর্ষের দিনে।

চীনে লাখো লাখো মানুষ- কখনও হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পরিবারের সাথে মিলে আনন্দ উৎসব করতে যান। লাল রং চীনে সৌভাগ্যের প্রতীক। মানুষ সৌভাগ্যের জন্য লাল রং দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি সাজায়। শিশুদের উজ্জ্বল লাল রং-এর খামে ভরে অর্থ দেয়া হয় তাদের সৌভাগ্য কামনা করে। উৎসব চলে দুই সপ্তাহ ধরে। এবছর নববর্ষ উৎসব শেষ হবে ১৫ই ফেব্রুয়ারি। সেদিন পূর্ণিমা। পূর্ণিমায় ফানুস ওড়ানোর উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে নববর্ষের উদযাপন।

চীনে ১৯৯০এর দশক থেকে নববর্ষ উপলক্ষে এক সপ্তাহের সরকারি ছুটি দেয়ার রেওয়াজ চালু আছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান সময়ে চীনের মানুষ এই ছুটির মরশুমে খাওয়া দাওয়া এবং কেনাকাটায় খরচ করে ৮২ হাজার কোটি ইউয়ান অর্থাৎ ৯,৬০০ কোটি পাউন্ড।

চীনা বর্ষপঞ্জির রাশিচক্র অনুযায়ী ১২টি প্রাণীর সাথে প্রতিটি বছর যুক্ত থাকে। এ বছর হল বাঘের বছর। বলা হয় এই বছর যেসব শিশু জন্মাবে তারা হবে সাহসী, শক্তপোক্ত এবং প্রতিযোগিতা-প্রিয়। দক্ষিণ চীন এবং হংকং-যের প্রধান ভাষা ক্যান্টনিজে নববর্ষের শুভকামনা জানাতে বলা হয় "গং হেই ফ্যাট চয়"(恭喜發財), যার মানে হল "আপনার সমৃদ্ধি কামনা করছি"। ম্যান্ডারিন ভাষায় লোকে বলে "শিন নিয়ান কুয়াই লে" (新年快乐), যার সোজা অর্থ হল "হ্যাপি নিউ ইয়ার"।

চীনে নববর্ষ উৎসবের শুরু হয়েছিল কীভাবে?

ধারণা করা হয়, চীনে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব চৌদ্দশ শতাব্দীতে। চীনে তখন শাং রাজার শাসনামল। এই নববর্ষ নিয়ে জড়িয়ে আছে একটি পৌরাণিক গাঁথা। একটি কাহিনি আছে এরকম - নিয়ান (শব্দের অর্থ 'বছর') নামে এক দানব প্রতি বছরের প্রথম দিন এসে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালাত। এই দানব প্রচণ্ড শব্দ, উজ্জ্বল আলো এবং লাল রং-কে ভয় পেত। তখন এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে গ্রামবাসীরা ওই দানবকে তাড়া করে তাকে গ্রামছাড়া করে।

চীনে ড্রাগনকে মনে করা হয় শক্তি এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই চীনের বহু এলাকায় এই নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ড্রাগন নাচ হয়। লম্বা, রং ঝলমলে ড্রাগনের পুতুল তৈরি করা হয় এবং রাস্তা দিয়ে এই ড্রাগন নিয়ে শোভাযাত্রা নববর্ষ উদযাপনের একটা অন্যতম আকর্ষণ। নববর্ষ উপলক্ষে চীনের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার করে, এই বিশ্বাসে যে তারা পুরনো বছরের দুভার্গ্য বয়ে আনা সব কিছু ভাল করে ঝেটিয়ে বিদায় করছে।

ভিয়েতনামে দিনটির নাম 'টেট গুইয়েন ডান' বা সংক্ষেপে 'টেট'। এর অর্থ বছরের প্রথম দিনের প্রথম সকালের উৎসব। মানুষ দিনটি উদযাপন করতে ঘরবাড়ি ভাল করে পরিষ্কার করে এবং টাটকা ফুল দিয়ে গৃহসজ্জা করে। এসব ফুলের মধ্যে থাকে পিচ ব্লসম (পিচ ফলের গাছের প্রথম ফুলের কলি) এবং কুমকোয়াত নামে একধরনের লেবু গাছের ফুল। পিচ ব্লসমের গোলাপি রংক উদ্দীপনার প্রতীক বলে মনে করা হয় আর কুমকোয়াতের ফুল সমৃদ্ধি আনে বলে বিশ্বাস করা হয়।

উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় এই উৎসবের নাম 'সিওল্লাল'। এই উৎসব চলে তিন দিন ধরে। কোরিয় পরিবারগুলো এসময় আগামী বছরের জন্য পূর্বপুরুষদের দোয়া চেয়ে তাদের উৎসর্গ করে খাবার পরিবেশন করে। এই আচার অনুষ্ঠানের নাম 'চারিয়ে' - পূর্বপুরুষদের নাম করেই তারা রান্নাবান্না করেন এবং তাদের জন্য নানা খাদ্যসামগ্রী পরিবেশন করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিককালে নতুন বছরের জনপ্রিয় একটি উপহার হয়ে উঠেছে 'স্প্যাম'। লোভনীয় এই স্প্যাম হল টিনের কৌটায় শূকরের মাংস। প্রিয়জনকে ছোট এক কৌটা স্প্যাম উপহার দেবার জন্য কোরিয়রা ৭৫ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করে থাকেন।

মঙ্গোলিয়ায় এই উৎসবের নাম 'সাগান সার'। মঙ্গোলিয়ার কিছু মানুষ এটাকে শ্বেত চন্দ্র উৎসবও বলেন। মানুষ এই উপলক্ষে 'ওভু'তে প্রার্থনা করেন। ওভু হল পাথরের স্তুপ দিয়ে তৈরি প্রার্থনা বেদি। তারা এই উৎসব উদযাপনের আচার হিসাবে নস্যির ডিবে আদানপ্রান করেন। তারা বিশ্বাস করেন এই নস্যির কৌটা দেয়ানেয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বন্ধন গড়ে ওঠে।

নিউইয়র্কে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা বের হয়। শহরের সারা ডি রুজভেল্ট পার্কে প্রায় ছয় লাখ আতসবাজি পোড়ানো হয়। এরপর শহরের চায়নাটাউনের রাস্তা দিয়ে সিংহ ও ড্রাগন নৃত্য সহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। সিঙ্গাপুরে রাস্তায় 'চিনগে' নামে জমকালো শোভাযাত্রা বের হয়। এই শোভাযাত্রায় থাকে বর্ণাঢ্য নানা ফ্লোট, জমকালো রংবেরং-এর পোশাক, লাইভ অনুষ্ঠান ও আতসবাজির প্রদর্শন।

ব্রিটেনের চীনা সম্প্রদায়ের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ থাকেন ম্যানচেস্টারে। ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রাচীন চীনা কমিউনিটি এই শহরেই, যেখানে খুবই জমকালো শোভাযাত্রা হয় নববর্ষ উপলক্ষে। এই শহরের চীনা পাড়ার আকর্ষণ ১৭৫ ফুট লম্বা ড্রাগন। এই শহরে যেমন বিশাল লম্বা ড্রাগনের শোভাযাত্রা বের হয়, তেমনই নিউ ইয়র্ক শহরের চীনা পাড়াতেও রাস্তা দিয়ে ৫৩ ফুট লম্বা ড্রাগনের মিছিল দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ