রাজশাহীতে জানুয়ারি মাসে ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত ২২ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে হত্যা ২, হত্যার চেষ্টা ২, আত্মহত্যা ৮, ধর্ষণ ২ জন, ধর্ষণ চেষ্টা ১, নির্যাতন ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭ জন নারী ও শিশু। উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ারের (লফস) ডকুমেন্টেশন সেল থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে লফস সংস্থার ডকুমেন্টেশন সেল থেকে রাজশাহীর প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিত নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে। লফস মনে করে, এই অঞ্চলে নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি বিভিন্ন মাত্রায় অবণতি ঘটছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণে অধিকাংশ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কিছু টিভি সিরিয়াল পরকিয়াকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া পারিবারিক কলহ ও প্রেম ঘটিত কারনে হত্যা-আত্মহত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে। বিষয়গুলো কারও জন্য সুখকর নয়।
জানুয়ারি মাসে অমানবিক কিছূ ঘটে যাওয়া ঘটনার চিত্র তুলে ধরে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- চারঘাট উপজেলার ইউসুফ ইউনিয়নের বেলঘরিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সুইটি খাতুুনের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, দুর্গাপুর উপজেলার পৌর এলাকার দেবীপুর খুলুপাড়া গ্রামের কুলসুম (১৭) টাকার অভাবে কলেজে ভর্তি হতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার অভিযোগ, লক্ষীপুর ভাটাপাড়ায় ৭বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, নগরীর একটি কলেজে শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে রাফিউল ইসলাম রাফি (১৮) কীটনাশক পানে আত্মহত্যা, দুর্গাপুর উপজেলার টিকা কেন্দ্রে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ, দুর্গাপুর উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে শ্বাসরোধ ও হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে মেহেরুনকে (১৭) হত্যা, নগরীর হড়গ্রাম এলাকায় উম্মাহাতুল মাদ্রাসায় ৮ বছরের শিশুর ধর্ষণ ঘটনা জানাজানি হলে ভর্তি বাতিল, বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ৯ বছরের শিশু ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে, পুঠিয়ার কান্দ্রাগুচ্ছ গ্রামে ১২ বছরের বুদ্ধীপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে মাসুদা আক্তার রুমি (১৮) আত্মহত্যা।
এছাড়া পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ উপজেলার এসএসসি পরিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, একই উপজেলার মধুখালী গ্রামে ক্যান্সার আক্রান্ত রাহেনা বেগম (৫১) অভাব সইতে না পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা, গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র শাওলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী নারী শিক্ষক নির্যাতিত, নগরীর রাজপাড়া থানার বুলুনপুর ঘোষপাড়া এলাকায় স্কুল শিক্ষক ফাতেমা খাতুন (৩৭) কে তাঁর স্বামী শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, নগরীতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সাজেন্টের বাড়ীতে কাজ করতে না চাওয়ায় ওই সার্জেন্ট গৃহকর্মী নারীকে তুলে আনতে প্রশাসন দ্বারা হুমকি প্রদানের অভিযোগ, চারঘাট উপজেলার গাওরা গ্রামে দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভুগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে রওশন আরা বেগম (৩৬) এর আত্মহত্যা, বাঘা উপজেলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের নারীর (৬৫) লাশ উদ্ধার করা হয়, মোহনপুর উপজেলায় কিস্তির টাকা চাওয়ায় স্বামী ও তাঁর প্রথম স্ত্রী মিলে দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরা (২৭) নামের গৃহবধুকে মারধর করলে বাবার বাড়ী যেয়ে আত্মহত্যা করে, দুর্গাপুর উপজেলার কুহাড় গ্রামে আঁখি বেগম (২৫) নামের গৃহবধু লিজ দেয়া জমি ফেরত চাইলে তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ যুবকের বিরুদ্ধে, মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের খয়রা গ্রামে উঠান পরিস্কার করতে নিষেধ করা নিয়ে গৃহবধু রুপালী বেগমকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি ও দেবর মিলে মারধর, তানোর উপজেলার তালন্দ লবাতলা ব্রীজ সংলগ্ন রাস্তার মাঝে প্রকাশ্য দিবালোকে যুবতিকে শ্লীলতাহানি ও সঙ্গী যুবক কে মারধর করার অভিযোগ দুই বখাটের বিরুদ্ধে, পুঠিয়া উপজেলার শিলমারিয়া ইউনিয়নের খোকসা গ্রামে জেসমিন আক্তার বাবলীর বদনাম ছড়ানোর বিচার চাওয়াকে কেন্দ্র করে মারধর ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া যায়।
রাজশাহীতে এই ঘটনাগুলোর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লফস। লফস এর নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যা প্রকাশিত হয় না বা কোন তথ্য জানা যায় না এমন বাস্তবতায়। রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রকাশিত তথ্য হতাশাজনক। রাজশাহী অঞ্চলে নারী-শিশু নির্যাতনসহ সার্বিক ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ক্রমশই অপরাধীরা উৎসাহিত হবে এবং অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। লফস সকল নারী-শিশু নির্যাতন ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত স্বাপেক্ষে অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবি জানান।