গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ময়লার স্তূপের মাঝে কুড়িয়ে পাওয়া সেই লাশের পরিচয় এক মাসেও মেলেনি। ভাঙ্গারী বিক্রেতা সফিকুল অন্যদিনের মত ময়লার স্তুপ থেকে মানুষের ফেলা নানা সামগ্রী খুঁজে ফেরার সময় লাশটি দেখতে পায়। কে এই হতভাগিনী! কোথা থেকে, কি করে এ পর্যন্ত তা অজানায় রইলো। পুলিশের নানা তৎপরতায়ও লাশটির পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাই বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার ময়লার স্তুপ থেকে ২৫-৩৫ বছরের অজ্ঞাত ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ফারজানা আক্তার ১৭ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এখনো কূল-কিনারা বের করতে পারেনি পুলিশ। লাশে পচন ধরায় শনাক্তও করা হয়নি এটি কার লাশ।
মামলার বাদী ফারজানা আক্তার বলেন,‘ওই নারীর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। দুইজন এসে দাবি করেছিল লাশ তাদের মেয়ের। কিন্তু ডিএনএ মেলেনি। তাই তাদের লাশ দেয়া হয়নি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মুকিত হাসান বলেন,‘যে নারীর লাশ পাওয়া গেছে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ফিঙ্গার প্রিন্টও নেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য এখনো রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে ডিবি পুলিশ, পিবিআই, র্যাব বিষয়টি নিয়ে তারাও ছায়া তদন্ত করছে। সবাই চেষ্টা করছে রহস্য উদঘাটনের। আশা করছি, শীঘ্রই কিছু একটা হবে।’
তিনি বলেন,‘কক্সবাজার থেকে নুর হোসেন ও সখিদা বেগম দম্পতি এসে লাশ তাদের মেয়ের মর্মে দাবি করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করা হয়। কিন্তু তাদের সাথে ম্যাচ করেনি। তবে তারা যে লাশের সন্ধান করছিল এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ওই লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। গত ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজন এলাকা থেকে তাদের মেয়ের লাশ পাওয়া যায়।’
মুকিত হাসান বলেন,‘আমরা ধারণা করছি লাশটি ভাসমান যৌনকর্মীর। সেই অনুযায়ী তদারকি করে তদন্ত করছি। দিন-রাত তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। রহস্য উদঘাটনে আমরা তথ্য-প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কতদিন আগে মারা গেছে এটা আমরা জানি না। আর ঘটনা ঘটার একদিন পর যদি লাশটি পেতাম। তাহলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার ট্রাকিং করে তা বের করতে পারতাম। অনেক দিন হয়ে গেছে। এজন্য এ বিষয়টিতে একটু ঝামেলা হচ্ছে। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে একটা রেজাল্ট আসবে।’
লাশের পরিচয় শনাক্তে সাংবাদিক এগিয়ে আসান আহ্বান জানান মুকিত হাসান।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯ টার দিকে এক ব্যক্তি সংবাদ দেন যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিল্ডের ভিতর মান্ডা রোডের উত্তর পাশে ময়লার ঢিবির ওপর একজন অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে সিআইডি ক্রাইম সিন টিমসহ রাত ৯ টা ২০ মিনিটে সেখানে গিয়ে একজন অজ্ঞাতনামা এক নারীর উলঙ্গ লাশ দেখতে পান। ওই নারীর মুখমন্ডলসহ শরীরের সমস্ত অংশ পচা-গলা ও পোকা ধরা। লাশটি পচা-গলা হওয়ায় তাৎক্ষণিক বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। ধারণা করা যায়, ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯ টার মধ্যে যে কোনো সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য মৃতদেহটি ময়লার ঢিবির মধ্যে রেখেছে।
পুলিশে খবর দেয়া সফিকুল ইসলাম বলেন,‘যাত্রাবাড়ীর কাজলারপাড় এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকি। ময়লা থেকে ভাঙ্গারী জিনিসপত্র টোকায়। ঘটনার দিন (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাসা থেকে বের হয়। সারাদিন ভাঙ্গারী জিনিসপত্র টোকায়। বিকেল চারটার দিকে বাসায় ফিরবো। এজন্য হা-মুখ ধুতে পুকুরপাড়ে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় দেখি ময়লার স্তুপের মধ্যে একটা লাশ পড়ে আছে। দেখে ভয় পেয়ে যায়। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাজ করছিল (অপারেটর)। তাদের বিষয়টি জানায়। তারা বিষয়টি তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানায়। আমি সেখান থেকে বাসায় চলে আসি।’
তিনি বলেন,‘সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে চা খেতে যায়। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা আমাকে দেখে। সেখানে তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও আসে। পরে আমরা আবার সেখানে গিয়ে দেখি আসলে এটি লাশ কি না। পরে বিষয়টি দেখে নিশ্চিত হয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।