পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধের বিধান থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেকেই তা পাচ্ছে না। এ জন্য বছরের পর বছর, এমনকি যুগের পর যুগ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, স্থাপনা, শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক জোন ইত্যাদির জন্য সরকারকে বিভিন্ন সময়ে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। সরকারের এই অধিগ্রহণ জাতীয় স্বার্থেই নাগরিকদের মেনে নিতে হয়। বিনিময়ে তারা ক্ষতিপূরণ পায়। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে যে আইন পাস হয়েছে, সেই ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল’ আইনে জমির জন্য ক্ষতিপূরণ তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অধিগ্রহণের সময়সীমা, জমির মূল্য নির্ধারণ ও সে অর্থ প্রদানের সময়সীমা আইনে বেঁধে দেয়া হয়েছে। আইনের ৮ ধারার (৪) উপধারা (৩)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রাক্কলন প্রাপ্তির ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থার ক্ষতিপূরণের মঞ্জুরির অর্থ নির্ধারিত পদ্ধতিতে জেলা প্রসাশকের নিকট জমা প্রদান করিতে হইবে।’ আর ১১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৮-এর অধীনে রোয়েদাদ প্রস্তুতের পর দখল গ্রহণের পূর্বে প্রত্যাশী ব্যক্তি ও সংস্থা কর্তৃক ধারা ৮-এর উপধারা (৩) অনুসারে প্রস্তুতকৃত ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা প্রদানের অনধিক ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক উক্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ উপধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করিবেন।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, আইনটির এই বিধানবলী অত্যন্ত গণমুখী। অথচ, বাস্তবে আইনটি সবার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। যাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে না, তাদের হয়রানির শেষ নেই, বঞ্চনার অবধি নেই।
যাদের জমি এ যাবৎ অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন লোকের সংখ্যা মোটেই কম হবে না, যারা খুব অল্প জমির মালিক। তাদের সেই জমির বড় অংশ কিংবা পুরোটাই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি থেকেও হয়তো উচ্ছেদ হয়েছে। এই নিরালম্ব মানুষগুলোর যদি ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে বিলম্ব হয়, তাহলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে দিন কাটাচ্ছে, সেটাই সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে। ক্ষতিপূরণের অর্থ ঠিক সময়ে পেলে তারা জমি কিনে বা ঘরবাড়ি বানিয়ে হয়তো স্থিত হতে পারতো। জমি হারিয়ে ক্ষতিপূরণ যথাসময়ে না পাওয়া তাদের প্রতি চরম অবিচার ও জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সবাই যে সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন না, এটা তার প্রমাণ বহন করে। অভিযোগ রয়েছে, ভুক্তভোগীদের পক্ষে ঘুষ না দিলে নাকি কিছুই হয় না। এ অভিযোগও রয়েছে, যারা ঘুষের চাহিদা পূরণ করতে পারে, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি দ্রুতায়িত হয়। আর যারা পারে না, তাদেরটা পড়ে থাকে। এ অফিস, সে অফিস দৌড়া-দৌড়ি করেও তাদের খুব একটা লাভ হয় না। অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাকাদা দেয়া হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার অধিগ্রহণ ও দখলের আগেই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিতে বলেছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এরপরও ক্ষতিপূরণ প্রদানে বিলম্ব ও গড়িমসি অব্যাহত আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক উন্নয়নোদ্যগ নেয়ায় বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ সব জমির ক্ষতিপূরণ কোথাও কোথাও মালিকরা পেয়েছে। কোথাও এখনো পায়নি, ঝুলে আছে। ঢাকা ও গাজীপুর জেলার অনেকেই ক্ষতিপূরণের অর্থ পায়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেন জমির মালিকদের অনেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ পাচ্ছে না, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরই তার জবাব দিতে হবে।
সরকার অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য তিনগুণ বাড়িয়ে নির্ধারণ করে আইন করেছে। আইনে ক্ষতিপূরণ প্রদানের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে অন্যান্য দিক ছাড়াও একটি মানবিক দিক রয়েছে, যার প্রশংসা না করে পারা যায় না। আইন কার্যকর করার নির্দেশনা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বার বার তাকিদ দিয়েছেন। আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর তাকিদের মধ্যে মানবিক ও জনবান্ধব দৃষ্টি-ভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে। আমরা এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। আশা করি, আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রেও তিনি যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন। নির্দেশনায় তেমন ফল না পাওয়ায় ‘পদক্ষেপের’ই এখন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আইনটি সুচারুরূপে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যারা বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বশীল আছেন, তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি একান্তভাবে প্রত্যাশিত। যাদের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা, অবিমৃশ্যকারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদান বাধাগ্রস্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, ‘আগে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ, পরে অধিগ্রহণ’- এই নীতি বাস্তবায়ন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।