পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে গতকাল রোববারও সকাল থেকে অভিযান চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত কোন লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ নদীতে লাফিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে সুগন্ধার তীরে অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। কেউ আবার ট্রলার নিয়ে নদীর বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের পক্ষ থেকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এদিকে বরগুনায় অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল নামক স্থানে এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ইঞ্জিন রুম থেকে হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। গতকাল বেলা ১টায় বরগুনা সার্কিট হাউজে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত সাত সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীদের জবানবন্দি গ্রহণের পূর্বে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের মধ্যে বরিশাল নৌপুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন, নৌপরিবহন অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার তাইফুর আহমেদ ভুইয়া, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভুইয়া, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার পরিচালক মামুন-অর-রশীদ এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এসময় অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মো. তোফায়েল ইসলাম আরও বলেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে যাওয়া যাচ্ছে না। দুর্ঘটনায় কবলিত অধিকাংশ যাত্রীর বাড়ি বরগুনায়। এ কারণে লঞ্চের প্রত্যদর্শী যাত্রী এবং উদ্ধারকারীদের সাথে কথা বলার জন্য তারা বরগুনায় এসেছেন। তাদের কাছ থেকে সরাসরি শুনে ঘটনার সময় লঞ্চে কর্মরত স্টাফদের ভ‚মিকা কী ছিলো তা আমরা নির্ণয় করতে পারবো। নদীবন্দর থেকে জাহাজ ত্যাগ করার পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়ে জাহাজ ত্যাগ করার নির্দেশনা থাকলেও সেটি করা হয়েছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে তোফায়েল হোসেন বলেন, যেহেতু ২৩ ডিসেম্বর ঘটনার পরপরই অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এ বিষয়ে অফিসে খোঁজখবর নিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন।
বেসরকারি যাত্রীপরিবহনে এই দুর্ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝালকাঠি থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
এদিকে লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে সকাল নয়টায় বরগুনা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মুহাম্মদ মাহবুব আলম আবেদন গ্রহণ করে সকাল সাড়ে ১০টায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন। মামলায় ওই লঞ্চের আরও ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আইনজীবী সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় মালিকসহ স্টাফদের গাফিলতি সুস্পষ্ট। আলোচিত এ ঘটনায় বাদী সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলার আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে আদেশ দেন।
মামলার বাদী বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্যে আমি নিশ্চিত হয়েছি মামলার আসামিদের গাফিলতির কারণে আগুন, মৃত্যু, আহত ও ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করেছি। এ কারণেই আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি করেছি। আমি এ মামলার আসামিদের দ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, নিখোঁজদের সন্ধানে গতকাল রোববার সকাল থেকে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত কোন লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ নদীতে লাফিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে সুগন্ধার তীরে অপেক্ষায় আছেন স্বজন ও সহকর্মীরা। কেউ আবার ট্রলার নিয়ে নদীর বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। তাদের অভিযোগ, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি কোথাও ভেড়াতে পারতো, তাহলে এতো প্রাণহানি ঘটতো না। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ মৃত্যু হয়েছে। তাই লঞ্চ কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
এদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সেখানে স্বজনরা এসে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান। পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজের ৪১ জনের তালিকা করা হয়েছে। পাশাপাশি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ৫১ জনের তালিকা করা হয়েছে।
এছাড়া আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন স্থান স্পিডবোট নিয়ে পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। অনুসন্ধান করে দুর্ঘটনার কিছু কারণ তুলে ধরেন তিনি। দুর্ঘটনার জন্য লঞ্চের স্টাফদের দায়ী করেছেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, এটা আমরা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। পুরো তদন্ত শেষ করতে আমাদের প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। তার পরে আমরা একটা ধারণা দিতে পারব কোন কারণে আগুন লেগেছে। আগুন লাগার পরে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দ্রুত লঞ্চটি অ্যাঙ্কর করে পাড়ে থামিয়ে রাখলে এত লোকের মৃত্যু হত না। যেহেতু নদী খুব ছোট। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি। যার কারণে হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
বামনা (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, এখনও সন্ধান মেলেনি বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের গোলাঘাটা গ্রামের হামিদ হাওলাদারের। তিনি তার স্ত্রী, মেয়ে ও জামাই এই চারজন বাড়িতে ফিরছিলেন। সকলে মৃত্যুক‚প থেকে আসলেও এখনও সন্ধান মেলেনি বৃদ্ধ হামিদ হাওলাদারের। নিখোঁজ হামিদ হাওলাদারের স্ত্রী ময়ফুল বেগম জানান, চিকিৎসা শেষে তারা চারজন বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চটির প্রথম তলার ডেকে ইঞ্জিনরুমের পাশেই তারা বিছানা করে ছিলেন। রাতে ইঞ্জিনরুমে আগুন লাগার সাথে সাথে তারা সবাই একসাথে জড়ো হয়। কিছু সময়ের মধ্যে সমগ্র লঞ্চটির লাইট একসাথে বন্ধ হয়ে গেলে তারা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সবাই। ধোয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা যে যার মতন করে ঝাঁপ দেন নদীতে। বৃদ্ধ ময়ফুল বেগমের বোরখায় আগুন লেগে গেলে তিনিও নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচেন। তবে স্বামী হামিদ হাওলাদারের কোন সন্ধান পাননি তিনি। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মেয়ে জামাইকে পাই। কিন্তিু অদ্যাবধি হামিদ হাওলাদার নিখোঁজ রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।