Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়কে থামছে না শিক্ষার্থীদের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হঠাৎ করেই সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। অন্ধের যষ্ঠি হারিয়ে অনেক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ছে। গত নভেম্বর মাসেই নিহত হয়েছে অর্ধশত শিক্ষার্থী। সর্বশেষ গতকাল ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার রামপুরা এলাকায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সাবরিনা আক্তার মিতু সোনাইমুড়ি উপজেলার বজরা ইউনিয়নের শিলমুদ গ্রামের মর্তুজা ভূঁইয়ার মেয়ে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

সোনাইমুড়ী থানার এসআই আবদুল আলিম বলেন, ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সোনাইমুড়ী পৌরসভার রামপুর নামের স্থানে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবরিনা। এ সময় তিনি সড়ক অতিক্রম করে রাস্তার পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে যাচ্ছিলেন। তখন কুমিল্লার দিক থেকে আসা একটি ইটবোঝাই ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার এবং ট্রাকটি জব্দ করে। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় লক্ষীপুর চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার পুলিশ পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সাবরিনা আক্তারের মামা আবিদুর রহমান বলেন, সাবরিনা পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। চার-পাঁচ দিন আগে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে নানার বাড়িতে আসেন সাবরিনা। তার বাবা মর্তুজা ভ‚ঁইয়া ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত শুক্রবার তিনি স্ত্রী-সন্তানদের সোনাইমুড়ী পৌরসভা রামপুর এলাকার শ্বশুরবাড়িতে রেখে কর্মস্থলে ফিরে যান। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাবরিনা তার বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন।

আবিদুর রহমান বলেন, সাবরিনা তার নানার বাড়ির পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী-কুমিল্লা সড়কের রামপুর নামের স্থানে সড়ক পার হওয়ার সময় কুমিল্লার দিক থেকে উল্টো পথে আসা ইটবোঝাই একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে সাবরিনা মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।

লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মৃদুল কান্তি কুরি বলেন, ট্রাকচাপায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত ছয় বছরের মধ্যে ২০১৫ সালে ৮ হাজার ৬৪২ জন, ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৫৫ জন, ২০১৭ সালে ৭ হাজার ৩৯৭ জন, ২০১৮ সালে ৭ হাজার ২২১ জন, ২০১৯ সালে ৭ হাজার ৮৫৫ জন এবং ২০২০ সালে ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে ৭০৬ জন, শিক্ষক নিহত হয়েছে ১০৪ জন, ২০২১ সালে প্রথম ১০ মাসে সড়কে নিহত হয়েছেন ৬৪৯ শিক্ষার্থী। কেবল ২০২১ সালের নভেম্বরেই নিহত হয়েছেন ৫৫ শিক্ষার্থী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়কে দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাই দুর্ঘটনা কমানোর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি সড়কে নিয়ম মেনে চলার তাগিদ সবার।
সাড়ে তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের বাবা-মা। স্বপ্ন দেখেন হয়তো ফিরবে প্রিয় সন্তান। দিয়ার মা বলেন, সন্তান হারানোর কষ্ট কখনোই ভোলা যায় না। দিয়া আর কখনোই আমার কাছে আসবে না। তবুও আমি আজও আশায় আছি-আমার দিয়া ফিরে আসবে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রাক্টরসহ এসব দ্রুত গতির যানবাহন বেপরোয়াভাবে চলছে এবং ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থী, যুবক কিশোর প্রতিদিন আহত নিহত হচ্ছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা জন্য অদক্ষ চালক আর বেপরোয়া প্রতিযোগিতাকেই দুষছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এসব মানতে চায় না চালকরা।

রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় প্রাণ গেল তিনজনের : রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে গুলশান থানার কোকাকোলা এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় শফিকুল ইসলাম নামে আহত এক যুবকের মৃত্যু হয়। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

গুলশান থানার এসআই অনিন্দ্য সরকার বলেন, গুলশানের কোকাকোলা এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় প্রথমে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে শফিকুলের। এ সময় পেছন থেকে আসা ভিক্টর পরিবহনের আরেকটি বাসের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টায় তিনি মারা যান।

এদিকে, একই রাতে লালবাগের হোসেন উদ্দিন রোডে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মো. জাহিদ হাসান নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করে। নিহতের বড় ভাই আমির হোসেন মিলন বলেন, আমার ভাই আজিমপুরে রায়হান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। গত শুক্রবার আমাদের বাসায় মেহমান আসে। রাতে আমরা তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। পরে বাসায় ফিরে দেখি সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ডা. মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফেসবুকে সে প্রেম সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেয়। তার ভাবীকে বলেছিল সে একটি মেয়েকে ভালোবাসে। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। ফোনটি পুলিশের হেফাজতে আছে। সেটি ওপেন করলে কার সঙ্গে চ্যাটিং করত সেটা জানা যাবে। আমরা দুই ভাই-এক বোন। জাহিদ ছিল ছোট।

এছাড়া গত শুক্রবার রাতে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় শেফালী বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার স্বামীর নাম লিয়াকত আলী। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ