গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ইলমা চৌধুরী’র স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, ইলমাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি করেন তারা।
ইলমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে এলমার সহপাঠী ছাড়াও অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন রেজওয়ানা চৌধুরী, কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ শামিমা বানু প্রমুখ।
মানববন্ধনে রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ইলমার স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে তার শরীরে এত দাগ থাকবে কেন? হাসপাতালে যাওয়ার পর তার এ দৃশ্য দেখে আমি মানতে পারছি না। তার স্বামীকে দেখে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে এবং তার কথাবার্তা খুবই অসংলগ্ন। নৃত্যকলা বিভাগের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত ‘ভেবেচিন্তে’ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ইলমা চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া।
এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ইলমার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাকে মানসিকভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে। এটি খুবই মর্মান্তিক। এটি স্পষ্ট একটি হত্যা। আমরা এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্ত দাবি করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইলমার পরিবারের পাশে আছে।
কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইলমার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি শুধু মর্মান্তিক নয়, নৃশংসও বটে। আমরা এর দ্রুত বিচার দাবি করছি। আমাদের দেশে বিচারপ্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়। ইলমার স্বামী প্রভাবশালী বলে আমরা জেনেছি। অনেক সময় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার হয় না। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।
ইলমার বিভাগের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম বলেন, ইলমা খুবই বন্ধুসুলভ ছিল। রক্ষণশীল এক প্রবাসী ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হয়ে ঘরোয়াভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা দেখতে পাই যে সে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে তার স্বামী তাকে বাধা দিত। সে ঘর থেকেও বের হতে পারত না। বের হলেও তার সঙ্গে একজন গার্ড (পাহারাদার) দিয়ে রাখতেন এবং সে কোথায় কী করছে, তার সবকিছু স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে তদারক করত।
মঙ্গলবার বিকেলে ইলমা চৌধুরীকে অসুস্থ্য অবস্থায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। সুরতহালে ইলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরিবারের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে ইলমা চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। ইলমার মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল তার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে আটক করেছে পুলিশ। ইফতেখার কানাডাপ্রবাসী। গত রোববার তিনি ঢাকায় ফেরেন। রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় থাকেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।