Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিছু ভিসির কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে

ঢাবি সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষকরা সাধারণ মানুষের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম এবং এর অনেক পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষকদের দেখলে এবং তাদের কথা শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয় আসত। কিন্তু, ইদানিং কিছু কিছু ভিসি ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, আপনাদের (শিক্ষক) প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি, কিছু সংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদাক্ষুন্ন যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পরিবারের লোকদের চাকরি দেওয়া। এটা এই পেশার সঙ্গে যায় না। তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা। শিক্ষকরা হয়ে উঠুন সমাজে মর্যাদার প্রতীক। শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি গবেষণাগার। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং গবেষণা মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করেছে। যুগের সঙ্গে, আধুনিকতার সঙ্গে ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের জীবনযাত্রা গতিশীল হলেও দুঃখের বিষয় হলো গবেষণায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয় এটি আমাদের নেতৃত্বের প্রতীক। আমাদের পথপ্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মো. আবদুল হামিদ বলেন, তোমাদের শিক্ষা অর্জন যেন কেবল সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তোমাদের আজকের এই অর্জনের পেছনে বাবা-মা শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক ও রাষ্ট্রের যে ত্যাগ রয়েছে তা ধারণ করতে হবে। দেশ ও সমাজের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। আসুন আমরা প্রগতি আধুনিকতা ও সহনশীলতার দিকে আরও বেশি এগিয়ে যাই। সকল প্রকার সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা থেকে নিজেকে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুক্ত রাখি। সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা। তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, তা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি আমার আহ্বান, শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশুনা ও গবেষণার সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলুন। আপনারা তরুণদের মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসুন। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত এবং আধুনিকতায় অনেক এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বাত্মক চেষ্টায় আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগেও প্রায় অভিযোগ শোনা যায় যে ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট উত্তোলন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হয়রানির মুখোমুখি হয়। শিক্ষার্থীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস, কাউন্সিলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার ইত্যাদি চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সেশন জট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা আমার ছিল না। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি চ্যান্সেলর হয়েছি। এই সমাবর্তনে উপস্থিত হওয়া আমার জন্য গর্বের, তাই অসুস্থতা নিয়েও আমি এই সমাবর্তনে উপস্থিত হয়েছি। শরীরের সাড়া না দিলেও আমি মনের জোরে এ সমাবর্তনে এসে উপস্থিত হয়েছি। এমন এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া কত সম্মানের কত গর্বের তা বলে শেষ করা যাবে না। যদিও আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম না তবুও সেই সময় থেকে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুকরণ করেছি অনুসরণ করেছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাবর্তন বক্তা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রোভিসি অধ্যাপক ড. এ এসএম মাকসুদ কামাল, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাবি সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ