Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অরক্ষিত খুলনার প্লাটিনাম জুটমিল, কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দেদারসে চুরি

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩:৪৮ পিএম

লোকসানের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল ‘প্লাটিনাম জুবিলী জুটমিল’। বন্ধ থাকার সুযোগে যে যেভাবে পারছে, চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে পাটকলটির মূল্যবান যন্ত্রাংশ, আবাসিক ভবনের জানালা দরজা। এমন কি দামি শক্ত ভারী লোহার গেটও রাতের অন্ধকারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোরেরা। জোরালো অভিযোগ রয়েছে, চুরির সাথে জড়িত রয়েছেন মিলের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারী ও সিবিএ’র দুজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা। গত এক বছরে কয়েক কোটি টাকার মালামাল লোপাট হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

জানা গেছে, অব্যহত লোকসানের কারণে গত বছর ৩০ জুলাই মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বর্তমানে এটি বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় চালুর প্রক্রিয়া চলছে। মিলটি লোকসানের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল,

মিলের সব ডিপার্টমেন্টে চুরি, বছরের পর বছর পাটক্রয়ে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত জনবল, কাজ না করেই সিবিএ’র চাপে শ্রমিক মজুরী পরিশোধ, পাটকল কর্মকর্তাদের লাগামহীন দূর্ণীতি প্রভৃতি।

পাটকলটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করার পরই চুরি বেড়ে গেছে। বেসরকারিভাবে চালু হলে সিবিএ নেতা ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হয়ে যাবে, এমনকি তারা চাকুরিচ্যুত হবেন এমন আশংকায় তারা যেভাবে পারছেন লুটপাট করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাটকলের আবাসিক এলাকার দুটো চারতলা ভবন ও ১১ টি দ্বিতল ভবনের জানালা, দরজা, গ্রিল, লোহার সিড়ি-সবই খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। আবাসিকের কয়েকটি লোহার গেটও চুরি হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাতে প্লাটিনাম উচ্চ বিদ্যালয়ের জানালা দরজা খোলার সময় স্থানীয়রা টের পেয়ে ধাওয়া করলে চোরেরা পালিয়ে যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চুরির নেপথ্যে রয়েছেন পাটকলটির সিবিএ’র দুজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা দিপক কুমার রায়, গোয়েন্দা শাখার কর্মচারী মতিন, নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারী মিন্টু, ইমাম, উজ্জ্বলসহ আরো কয়েকজন। মিলের হিসাব রক্ষক নন্দর দাসের বিরুদ্ধে ব্যপক চুরির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মিলটির নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সিবিএ সভাপতি শাহনাজ শারমিনের বাসার সামনে দু জন আনসার সদস্যকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী সিবিএ সভাপতি আনসার নিরাপত্তা পান না।

চুরির বড় অভিযোগ রয়েছে মিলের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সরকার বন্ধ ঘোষণার পর গত বছর কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার মালামাল লোক দেখানো টেন্ডারের মাধ্যমে মাজেদা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মাত্র ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। ওই সময় টেন্ডারের মালামাল নেয়ার নামে আরো কয়েক কোটি টাকার দামী মালামাল পাচার হয়ে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে প্লাটিনাম জুটমিলের প্রকল্প প্রধান জিএম মুরাদ হোসেন জানান, মিলে নিরাপত্তার অভাব নেই। ৫০ জন নিরাপত্তা কর্মী ও ১৪ জন আনসার সদস্য মিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। চুরি হতে পারে- এ আশংকায় অনেকগুলো ভবনের জানালা দরজা, পানির পাইপ, ফিটিংস খুলে মিলের ষ্টোরে রাখা হয়েছে। কী পরিমান জানালা দরজা ও অন্যান্য সামগ্রী খুলে ষ্টোরে রাখা হয়েছে তার হিসাব দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। সিবিএ সভাপতির বাড়িতে নিরাপত্তায় আনসার থাকার অভিযোগ সঠিক নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে খুলনার ভৈরব নদীর পাড়ে প্রায় ৫৬ একর জায়গা নিয়ে প্লাটিনাম জুটমিল প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে মিলটি লাভজনক ছিল। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ হয়। এরপর থেকে ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকে মিলটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ