Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নির্যাতনে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ হেফাজতে এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মৃত্যু!

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১৪ পিএম

সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিবি) হেফাজতে এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) ভোর রাতের কোন এক সময়ে এই মৃত্যুর ঘটনা
ঘটে।
নিহতের নাম বাবুল সরদার (৫৫)। তিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সুরত আলী সরদারের ছেলে।
নিহতের মেয়ে দেবহাটা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি ফলপ্রার্থী সুলতানা
মুন্নীসহ পরিবারের সদস্যরা বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ৪/৫ জন লোক আমাদের
বাড়িতে আসেন। এর মধ্যে একজনের পোশাক পরা ছিলো। তার নাম মনির। এসময় তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে একজন মহিলাকে ঘরের মধ্যে পাঠায়। ওই মহিলা কয়েক
বোতল ফেন্সিডিল ঘরের মধ্যে রেখে আসে। পরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দাতারা আমার পিতাকে
নিয়ে ঘরের মধ্যে যায় এবং ওই মহিলার রেখে আসা ৪৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ পিতাকে গ্রেপ্তার
করে বাইরে আনেন। তাদের ঘর তল্লাশী করে ৩০ হাজার টাকাও নিয়ে নেয় তারা। এরপরে তারা
বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে সাতক্ষীরায় নিয়ে যায় এবং তার কাছ থেকে ভিডিও করে নেয় যে,
তারা কোনো টাকা পয়সা নেয়নি মর্মে। তাকে সেখান থেকে সাতক্ষীরা ডিবি কার্যালয়ে
নিয়ে এসে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তার মৃত্যু হলে রোববার সকালে আমার মাকে
যেতে বলা হয়। খবর পেয়ে আমার মা শাহানারা বেগম ও ভাবী স্নেহ আরাকে নিয়ে ডিবি
কার্যালয়ে আসেন। এসময় আমাদেরকে জানানো হয়, আমার বাবার কোমরে থাকা সুতালী
(ঘুনসি) দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু কিভাবে একজন মানুষ সুতালী (ঘুনসি) দিয়ে আত্মহত্যা
করে এটা সকলের কাছে প্রশ্ন।
এছাড়া, সেখানেও তাদের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া
হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াছিন আলম চৌধুরী
জানান, শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী বাবলু সরদারকে
বসন্তপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। এরপর তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছিল। রাতের কোন
এক সময়ে ডিবি অফিসের গারদের মধ্যে গ্রিলের সঙ্গে কোমরে থাকা সুতালী দিয়ে গলায়
ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. সজিব খান সাংবাদিকদের জানান,
প্রাথমিক তদন্তে সে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজন নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট ও চিকিৎসক ডিবি কার্যালয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে সুরতহাল
রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন ব্যক্তি কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে বা কোমরে
থাকা সুতালী দিয়ে একজন মানুষের পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব কী না এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে রাতে কতর্ব্যরত পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে
সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্বা সংসদের সাবেক কমন্ডার আব্দুল ওহাব বলেন, তিনি একজন
মুক্তিযোদ্ধা পরিবাবের সন্তান। তার মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দাবী করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ