পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের ভিডিওতে ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়। প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আগে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে দুদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করেন। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না, জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে। আমি আশা করব, আপনারা নিজেদের ঘর থেকেই এ অভিযান শুরু করবেন। কিছু সংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের এ বক্তব্য সময়োপযোগী, প্রাসঙ্গিক এবং অভিনন্দনযোগ্য। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরে দুর্নীতি দমন করা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল। এর প্রতি জনগণের আস্থাও কমছিল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হচ্ছে, কোনো ধরনের বাছবিচার না করে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না। আমরা দেখেছি, বিগত বছরগুলোতে সংস্থাটি যথাযথভাবে এ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেনি। বর্তমান চেয়ারম্যানের আগের চেয়ারম্যানের সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সে সময় বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিম্ন পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে দুদককে। এমনও দেখা গেছে, কেউ অভিযোগ করলে তার যথাযথ তদন্ত না করেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার করা হয়েছে। দুদক উপরের শ্রেণীর দুর্নীতিবাজদের ধরার চেয়ে নিচের শ্রেণীর দুর্নীতির দিকে বেশি মনোযোগী ছিল। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কে কখন শত্রুতা করে দুদককে একটি অভিযোগ দিয়ে বসে এবং দুদক এসে ধরে নিয়ে যায়, এ আশঙ্কায় অনেকে শঙ্কিত থাকত। অন্যদিকে, সমাজের উঁচু শ্রেণীর ব্যক্তি, আমলা কিংবা প্রভাবশালী রাজনীতিকদের দুর্নীতির বিষয়ে নানা সময়ে অভিযোগ উঠলেও, সেক্ষেত্রে দুদক একেবারে নিস্ক্রিয় ছিল। বরং এ চিত্র দেখা গেছে, যেসব বড় বড় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাদের সাক্ষাতের নামে ডেকে কিছু কথাবার্তা বলে বিদায় করে দিয়েছে। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, তারা দুর্নীতির সাথে জড়িত নন। দুদকের এমন কর্মকা- নিয়মিত হয়ে পড়ায় তখন দুদককে এ বদনাম নিতে হয় যে, বড় বড় দুর্নীতিবাজদের নির্দোষ ঘোষণা করে সার্টিফিকেট দেয়া এবং কিছু ছোট দুর্নীতিবাজদের ধরে তার কর্মতৎপরতা দেখানোই প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে দুদক সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা বলে কিছু ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক সুনাম ক্ষুন্ন হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুদককে তার প্রকৃত অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার ক্ষেত্রে তার তৎপরতা প্রশংসিত হচ্ছে। এখন আগের মতো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া অভিযুক্তকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয় না। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যান দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্তে দুদকের দীর্ঘসূত্রতার কথা অকপটে স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের প্রধান সমস্যা অনুসন্ধান ও তদন্তে যে দীর্ঘসূত্রতা তা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি এ কথাও বলেছেন, অতীতে সমাজে দুর্নীতিবাজদের ঘৃণার চোখে দেখা হলেও এখন তাদের সম্মান করা হয়। সমাজে তারা প্রতিষ্ঠিত। দুর্নীতিবাজদের প্রভাব-প্রতিপত্তির মোহে সমাজের অনেক মানুষ তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে মুখিয়ে থাকে। তার এ কথা যথার্থ এবং সময়োচিত। এ কথা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থান ও আন্তরিকতার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়।
দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি অন্যতম বাধা হয়ে আছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে দুর্নীতির মাত্রা কমিয়ে আনা এবং বিদেশে অর্থপাচার রোধ করা গেলে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা দরকার। কমিশন যদি অধিক কর্মতৎপর হয়ে এবং নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারে, তাহলে দুর্নীতির হার যেমন কমবে, তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও সহায়ক হবে। সবাই প্রত্যাশা করে, দুর্নীতি দমন কমিশন তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে কোনো ধরনের কুণ্ঠাবোধ করবে না। নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। দুর্নীতিবাজ যত প্রভাবশালী, সে রাজনীতিক, আমলা কিংবা ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন, তদন্ত করে দুদককে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়িত্ব পালনে তাকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।