পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মনযোগ হারিয়েছে দুর্নীতি দমন, অনুসন্ধান আর তদন্তে। ব্যাংক লুট আর মেগা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে যথারীতি ছিল নির্বিকার। তবে সরব দেখা গেছে বড় বড় বুলি কপচানোয়। বিপরীতে কুড়িয়েছে উচ্চ আদালতের ভর্ৎসনা। মাঝখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীরা পেয়েছেন সুরক্ষা। দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা কিছু ছোটখাটো মামলা, অনুসন্ধান আর রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অভিযোগ নাড়াচাড়া করেই বিগত বছরটিতে জানান দিয়েছে স্বীয় অস্তিত্বকে। যা দেশের মানুষকে উপহার দিয়েছে হতাশা। আইনত : স্বাধীন হয়েও কার্যত রক্ষা করেছে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহনের ধারাবাহিকতা। ২০২২ সাল দুদক নতুন কোনো বার্তাই দিতে পারেনি।
পুরো বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে দুদকও সাধন করেছে কৃচ্ছ্রতা। ১৭২ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ পেয়েও ব্যায় করেনি পুরো অর্থ। দুর্নীতি দমন, অনুসন্ধান ও প্রতিরোধে হ্রাস করেছে ব্যয়। বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের খরচ নামিয়ে এনেছিল অর্ধেকে। ডলার সঙ্কটের দোহাই দিয়ে যখন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তখন থেমে ছিল না দুর্নীতি, ব্যাংক লুট এবং অর্থ পাচার। বিপরীতে দুদককে দেখা গেছে দুর্নীতিবাজ ও পাচারকারীদের সঙ্গে আপোস আর আত্মসমর্পণ। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক লোপাটের ঘটনায় নিজ থেকে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। উচ্চ আদালতের আদেশ-নির্দেশ তামিল করেছে শুধু। যা করেছে তাও আবার কম নয়। ভারতের মদদপুষ্ট একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে খড়ুগহস্ত হয়েছে দেশের সম্মানিত ১১৬ আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে কথিত ‘অর্থ পাচার’র অভিযোগে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির দেয়া এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ২২ জুন আলেমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরে অবশ্য টিম গঠন তথা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত অস্বীকার করে।
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ টেলিকম লি:’র বিরুদ্ধেও শুরু করে অনুসন্ধান। যা এখনও চলমান।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দুদকে ১৮ হাজার ১৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে। শতাংশের হিসেবে যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৬ ভাগ। এসব অভিযোগের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে ৩ হাজার ৬০টি অভিযোগ বিভিন্ন দফতরে ফেরত পাঠায়। ১৪ হাজার ১১৯টি অভিযোগ কোনো কার্যক্রমের জন্য সুপারিশ করা হয়নি। চলতি বছর বিভিন্ন উৎস থেকে আসা মোট অভিযোগ থেকে সাড়ে ৪ ভাগ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ‘বিবেচ্য’ হয়েছে। দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়- মোট অভিযোগের ৭৮ শতাংশ ফেলে দেয়া হয়েছে।
এর আগের বছর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে ১১ হাজার ৮২৮টি। ২০২০ সালে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯টি। ২০২২ সালে গড়ে দুদকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৬৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০২০ ও ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৫৪১ ও ১ হাজার ১৮৩টি।
২০২২ সালে ১১ মাসে ৩৫৪টি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে দদুক। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১২টি অভিযোগ। সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি হয়েছে ৮৯টির। মামলা করেছে ২৭৬টি। চার্জশিট দিয়েছে ১৬২টি। অভিযোগ প্রমাণিত হয়নিÑ এমন দাবি করে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে ৭৮টি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে। সবশেষ তথ্য অনুসারে, অনুসন্ধান দুদকে পর্যায়ে রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ। চলমান মামলা আছে ১ হাজার ৬৯৯টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলা রয়েছে যথাক্রমে ৭২৪ ও ১৫৭টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার শতকরা হার ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থপাচার, ব্যাংক-বীমা সংক্রান্ত অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব অনুসন্ধান ও মামলা চলছে।
আলোচনায় যেসব ইস্যু : ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার ও তার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে দুদক। চলতি বছর ১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভারতের অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হন পিকে হালদার। অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে কলকাতায় তার বিচার চলছে।
গত মে মাসে দুদকের করা অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিন লাভ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন সম্রাটের বিরুদ্ধে।
উচ্চ আদালতের ভর্ৎসনা : পুরো বছরজুড়ে নানা ইস্যুতে উচ্চ আদালতের ভর্ৎসনা কুড়িয়েছে দুদক। কারণ, ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুদক আইনের অধীনে সংস্থাটির যাত্রা। প্রতিষ্ঠানটির ‘রূপকল্প ও লক্ষ্যে’ বলা হয়েছে, সমাজের সব স্তরে প্রবহমান একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতির চর্চা এবং এর প্রসার সুনিশ্চিত করা দুদকের উদ্দেশ্য। আর লক্ষ্য হলো, অব্যাহতভাবে দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ। তবে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা, ছোটখাটো দুর্নীতি মামলার আসামিদের পেছনে কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয়, কালক্ষেপণ এবং অকার্যকরিতা কারণে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট একাধিকবার ভর্ৎসনা করেন দুদককে।
সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের তিন মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে দুদক কেন নীরব, তা জানতে চান হাইকোর্ট। বেসরকারি ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর জামিনের ওপর শুনানিতে এ প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট। বিষ্ময় প্রকাশ করে আদালত বলেন, ৭ বছরেও তদন্ত কেন শেষ হলো না? বলা হচ্ছে, প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য ও সাক্ষীদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কথাগুলো আপত্তিকর। দুদক যদি এসব কথা বলে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? ড্রামা দেখার মতো। আমরা সবাই দেখছি ড্রামা হয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাবে, দুদক চেয়ে চেয়ে দেখবে?
গত ২৭ নভেম্বর অর্থশালীরা পাওয়ারফুল। তারা বিচারের ঊর্ধ্বে কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে কি-না? দুদকের প্রতি এমন প্রশ্নবাণ ছোড়েন হাইকোর্ট। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা ধরছেন চুনোপুঁটি। তাহলে রাঘববোয়ালদের ধরবে কে?
গত ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’র ১ থেকে ২৫ নম্বরে থাকা ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে কোনো অভিযোগ আগে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
করীফ-কাণ্ডে বেকায়দা দুদক : বিধিমালা ভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো: শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। প্রধান কার্যালয়সহ ২১টি জেলা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। গঠন করেন ‘দুদক সার্ভিস এসোসিয়েশন-দুসা’। এ ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার খোড়াক জোগায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের রাঘবোয়ালদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলা রুজুর সুপারিশ করায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়-মর্মে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সংস্থাটি।
পাচার হওয়া অর্থফেরত আনায় অসহায়ত্ব : গত ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক অর্থপাচারের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে দুদকের কর্মপরিকল্পনা জানতে চান। জবাবে দুদক কমিশনার মো: জহুরুল হক বলেন, অর্থপাচার হচ্ছে, এটা সত্যি। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু অর্থপাচারের ব্যাপারে আমাদের (দুদক) তফসিল থেকে সব নিয়ে গেছে আইন করে। এখন আমাদের যেটা আছে মাত্র একটা তফসিলভুক্ত, সেটা নিয়েই আমরা ফাইট করছি।
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, অর্থপাচার আইনের ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু একটি অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে আইনি সীমাবদ্ধতা দুদকের জন্য বড় জটিলতা। শুল্ক, কর, পুঁজিবাজার, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল-দস্তাবেজ তৈরি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থপাচার বেশি হয়। এসব অপরাধ যেন দুদক তদন্ত করতে পারে, সেজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আলোচিত পদোন্নতি : কার্যত : আমলাশাসিত দুর্নীতি দমন কমিশনে শুরু থেকেই নানা রকম নিগ্রহের শিকার কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তাদের বঞ্চনা, পদোন্নতি, পদায়ন, প্রেষণ নিয়ে ছিল ব্যাপক বৈষম্য। কমিশনের একজন কর্মকর্তা পদোন্নতির মধ্য দিয়ে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ থাকলেও কোনো কমিশনই দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তাদের এ পদে বসায়নি। প্রয়োজনীয় দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও উপ-পরিচালক, পরিচালক এবং মহাপরিচালকের পদগুলোতে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হতো প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে দীর্ঘদিন দুদক কর্মকর্তাদের মাঝে বিরাজ করছিল অসন্তোষ। কিন্তু বর্তমান কমিশন সেই অচলায়তন ভেঙ্গে দেয় একযোগে ৩ পরিচালককে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়ে। তবে সিনিয়র অনেক উপ-পরিচালককে বঞ্চিত করে পরিচালক পদে পদোন্নতি প্রদানে বর্তমান কমিশনকে নিয়ে সমালোচনাও ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।