পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খড়গহস্ত হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির হঠাৎ এই ‘চাঙ্গা ভাব’ শুধুমাত্র বিরোধী রাজনীতিকদের ঘিরেই। কিন্তু ঋণের নামে ব্যাংক লুট, রিজার্ভ চুরি, হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিষয়ে দুদক নির্বিকার। যখন যে দলের সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারবিরোধী মত দমনে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুদক। সংস্থাটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পুরনো। বিদ্যমান এই ধারণাকে আরো বদ্ধমূল করছে একের পর এক সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ। যদিও আইনগতভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী স্বশাসিত এই স্বাধীন সংস্থা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি সংস্থাটির কর্মকাণ্ডেই উদ্ভাসিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুদককে দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতার আওতায় সরকারের আকাক্সক্ষারই প্রতিফলন ঘটাতে দেখা যায়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, তার দুই পুত্র তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়ালকে অর্থপাচারের অভিযোগে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর বিএনপির সাবেক নেতা ও এমপি মোসাদ্দেক আলী ফালু, বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আরএকে সিরামিকস লি: ডেভলপমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এ কে ইকরামুজ্জামান, স্টার সিরামিকস প্রাইভেট লি:-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এ কে আনোয়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির পরবর্তী তারিখ রয়েছে। এই তিন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাই পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৩ মে মামলা করে দুদক। এ ছাড়া নোবেল বিজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ টেলিকম লি:’-এর বিষয়ে অর্থপাচারের অনুসন্ধান চালাচ্ছে সংস্থাটি। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
মির্জা আব্বাস দম্পতি : সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার সচিব মো. মাহবুব হোসেন আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। উপ-পরিচালক মোহা. নূরুল হুদা এ চার্জশিট দাখিল করেন। ‘আকস্মিক এই চার্জশিট দাখিলের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে কি নাÑ জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, এখানে পলিটিক্যাল কোনো যোগসূত্র নেই। দুদক তার নিজস্ব আইন-বিধি মেনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এদিকে দাখিলকৃত চার্জশিটে আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৮ টাকার সম্পদ অর্জন এবং স্বামী মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ সহায়তা করেছেনÑ মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, আফরোজা আব্বাস একজন গৃহিণী, সে হিসাবে ওই সম্পদ অবৈধ উৎসের আয় থেকে অর্জিত বলে প্রমাণ মিলেছে। মির্জা আব্বাস ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এমপি, মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন। তিনি এমপি, মেয়র ও মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত আফরোজা আব্বাসের নামে ওই টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা আফরোজা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় আফরোজা আব্বাস জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী এমএনএইচ বুলুর কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ ও বাবা-মা এবং বোনের কাছ থেকে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দান হিসেবে নিয়েছেন। তবে ওই টাকাসহ মোট সম্পদের হিসাবের সপক্ষে কোনো রেকর্ড দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া আয়কর ফাইল অনুযায়ী, আফরোজা আব্বাস একজন গৃহিণী। কিন্তু তার স্বামী মির্জা আব্বাস বিভিন্ন খাতের টাকা স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছেন। আফরোজা আব্বাস নিজেকে একজন হস্তশিল্প ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথিতে উল্লেখ করলেও তার নিজের আয়ের কোনো বৈধ উৎস নেই।
তদন্তে অবৈধ ওই সম্পদ হস্তান্তর, রূপান্তর ও অবস্থান গোপনকরণে কৌশল অবলম্বন করার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আফরোজা আব্বাস ও তার স্বামী মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় এবং সেই সঙ্গে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৮; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৯ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই ঢাকার শাহজাহানপুর (ডিএমপি) থানায় দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার সম্পদ অভিযোগ আনা হয়।
আমীর খসরু মাহমুদসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য
এর একদিন আগে ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর শ্যালিকা সাবেরা সরোয়ার নীনা, তার স্বামী গোলাম সরোয়ার এবং রাজউকের নকশা অনুমোদন শাখার (বিল্ডিং) ইন্সপেক্টর ও বিএনপিপন্থী সিবিএ নেতা আওরঙ্গজেব নান্নুকে আসামি করা হয়।
এজাহারে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে রাজউকের প্লট জালিয়াতি ও নকশা বহির্ভূতভাবে হোটেল সেরিনা নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন ঢাকার বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ২২তলা ভবন নির্মাণ করে অধিকাংশ ফ্লোর আত্মসাত করেছেন। রাজউকের নকশা বহির্ভূতভাবে ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাশের ২৫ নম্বর প্লটে নকশা বহির্ভূতভাবে ২১ তলাবিশিষ্ট হোটেল সেরিনা নির্মাণ করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
টুকু-আমানের আপিল পুন: শুনানি
এর আগে গত মধ্য নভেম্বর থেকে হাইকোর্টে শুরু হয়েছে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমান উল্লাহ আমানকে খালাস দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিলের আপিল পুন: শুনানি শুরু হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় শুনানি। হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ খোলার পর এ বিষয়ে আদেশ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী দুদক।
২০০৭ সালে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপনের অভিযোগ্ আনা হয়। উপ-পরিচালক এ এস এম আখতার হামিদ ভূঞা ওই বছর ২৮ জুন চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছর ১৫ নভেম্বর বিশেষ আদালত টুকুকে ৯ বছর কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১১ সালের ১৫ জুন হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন। দুদকের আপিলের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি খালাসের রায় বাতিল করে পুন: শুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
এদিকে সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন অন্তত দুই ডজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, তদন্ত, চার্জশিট দাখিল এবং আপিলের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। এর মধ্যে রাজনীতিক, সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ডোনার, ব্যাংকের পরিচালক এবং পেশাজীবীরা রয়েছেন।
আইনত স্বাধীন হলেও পুলিশ বা অন্যান্য সংস্থার মতো দুদকও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানিমূলক মামলা করছে। ভয়-ভীতি দেখাতেই এসব মামলা। এটি নতুন কিছু নয়। একটার পর একটা মামলা হচ্ছেই। তবে এভাবে মামলা দিয়ে প্রতিবাদী মানুষের জাগরণকে আর স্তব্ধ করা যাবে না- মর্মে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।