Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমবায়ে ৫শ’ স্বজনকে চাকরি!

‘গুপ্ত’ধনের খোঁজে দুদক ভারতে সেকেন্ড হোম : বিপুল বিত্তবৈভব বাবলার

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পদবি-উচ্চমান সহকারী। চাকরি সমবায় অধিদফতরে। বসেন রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ প্রধান কার্যালয়ে। আর এখান থেকেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন সারাদেশে বিস্তৃত অধিদফতরের সবগুলো অফিস। সমবায়ে চাকরি চাই? চাই যুৎসই পদায়ন কিংবা পদোন্নতি? ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিসের মতোই সমাধান মিলতে পারে এক টেবিলে। যদি টেবিলটি হয় ‘বাবলা দাশ গুপ্ত’র। অভিযোগ রয়েছে, উচ্চমান সহকারী হয়েও গত দুই দশকে সমবায় অধিদফতরে চাকরি দিয়েছেন অন্তত ৫শ’ জনকে। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, দূর সম্পর্কের ভাই-ভাগ্নি, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের আত্মীয়-কাউকেই বিমুখ করেননি তিনি। নিজে পদস্থ কোনো কর্মকর্তা না হলেও অনেক পদস্থ কর্মকর্তাই বাবলা দাশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন। কারণ, সমবায় অধিদফতরে নিয়োগ, পদোন্নতি, পোস্টিং, প্রাইজ পোস্টিং, ডাম্প পোস্টিং, শাস্তি প্রদানের নিয়ন্ত্রণ অলিখিতভাবে তার হাতে। সমবায় সমিতির নতুন নিবন্ধন, নিবন্ধিত সমবায়ের নবায়ন, অডিট, পরিদর্শন, সমিতিসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠান, পাতানো নির্বাচন দেখিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে সমিতি কুক্ষিগত করে রাখায় সহযোগিতা, সমিতির অ্যাডহক কমিটি অনুমোদনের ‘বিশেষ কর্ম’গুলো তার কৃপা ছাড়া অসম্ভব প্রায়। আর এই ‘কৃপা’ বর্ষণের মাধ্যমেই তিনি সমবায় অধিতফরকে পরিণত করেছেন ‘নিজস্ব’ প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে ঘুষ দিতে না পারায় অনেক মেধাবী, যোগ্য প্রার্থীও বঞ্চিত হয়েছেন চাকরি লাভে। বিনিময়ে বাবলা দাশ গুপ্ত মালিক হয়েছেন বিপুল বিত্ত-বৈভবের। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নামে-বেনামে করেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করেছেন সেকেন্ড হোম। অর্থপাচারের গন্তব্য বানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকেও। একজন উচ্চমান সহকারীর পক্ষে এসব করা অসম্ভব মনে হলেও বাবলা দাস গুপ্তের ‘গুপ্তধন’ আর কোথায় কোথায় রয়েছে এটি তার নিকটজনরাও জানেন না। তবে তার গুপ্তধনের সন্ধানে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পরিবারের সদস্য-স্বজনদের চাকরি : সমবায় অধিদফতরের শীর্ষ পদে না বসেও সরকারি চাকরি দেয়ার অলিখিত ক্ষমতা রয়েছে উচ্চমান সহকারী বাবলা দাস গুপ্তের। প্রার্থীর শিক্ষাযোগ্যতার ঘাটতি থাকলেও তার নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারেন তিনি। নিয়োগ বাণিজ্যে প্রথম তিনি পরিবারের সদস্যদের চাকরি দিয়ে অন্যদের আস্থা কুড়ান। পরে স্বজন, শ্বশুরবাড়ির লোক, পাড়া-প্রতিবেশী, দূর সম্পর্কের আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব এমনকি হাউজ টিউটরকেও তিনি সমবায়ের চাকরিতে ঢোকান। পরে প্রার্থীর সুবিধাজনক জায়গায় পদায়ন এবং পদোন্নতিও নিশ্চিত করেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাবলা দাশ গুপ্ত প্রথমেই চাকরি পাইয়ে দেন ২০১২ সালে অনুজ সঞ্জয় দাশ গুপ্তকে। পদের নাম ‘সরেজমিন তদন্তকারী’। নিয়োগের সর্বনি¤œ যোগ্যতা ছিল বিএ/গ্র্যাজুয়েশন। কিন্তু চাকরি গ্রহণকালে সঞ্জয়ের এই সার্টিফিকেটই ছিল না। অন্যান্য রেকর্ডপত্রের সঙ্গে তিনি দাখিল করেন একটি বিতর্কিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সনদ। পরে জানা যায়, এই সনদটিও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরিকৃত। সঞ্জয় দীর্ঘদিন সমবায় অধিদফতরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে কর্মরত।

বাবলা দাশের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচিত জয়শ্রী দাশ। তিনি কর্মরত ছিলেন কক্সবাজার জেলা সমবায় কার্যালয়ে ‘অফিস সহকারী’ পদে। নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাকেও সার্বক্ষণিক আগলে রাখেন বাবলা। তাকে অফিস সহকারী পদ থেকে পদত্যাগ করিয়ে ‘প্রশিক্ষক’ পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। নিয়োগ পরীক্ষার সময় জয়শ্রীর পূর্বতন পদ-পদবি গোপন রাখা হয়। তিনি চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত।

প্রথম স্ত্রী মীরা প্রভা নন্দীর আপন বোন মঞ্জু প্রভা নন্দীকে বাবলা চাকরি দেন ‘অফিস সহায়ক’ পদে। জাল সনদের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া মঞ্জু প্রভা নন্দী এখন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে কর্মরত।

ভাগ্নি নীতি রানী পালকে চাকরি পাইয়ে দেন পরিদর্শক পদে। তিনি এখন কক্সবাজার কার্যালয়ে কর্মরত। ভাইয়ের স্ত্রী শাপলা প্রভা দে’ কে পরিদর্শক পদে চাকরি দেন। তিনিও কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে। মামাতো বোন পল্লবী দাশ গুপ্তকে চাকরি পাইয়ে দেন ‘অডিটর’ পদে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে কর্মরত তিনি। ‘প্রশিক্ষক’ পদে রয়েছেন বাবলা দাশের শ্যালিকার ছেলে প্রণয় নন্দী। তাকে রেখে দিয়েছেন প্রধান কার্যালয়েই। একই দফতরে ‘সহকারী প্রশিক্ষক’ পদে রয়েছেন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জয়শ্রী দাশের ছোট বোন শাপলা দাশ। বাবলার শ্যালিকার মেয়ে পল্লবী কেয়া চক্রবর্তী অফিস সহকারী হিসেবে রয়েছেন অধিদফতরের হেড অফিসে। স্ত্রীর মেজ ভাইয়ের বিধবা স্ত্রী বিন্দু রানী পাল ‘উপজেলা সমবায় অফিসার’ হিসেবে রয়েছেন মুন্সিগঞ্জ, সিরাজদিখানে। বাবলার ছেলের গৃহশিক্ষক শ্যামল চন্দ্র রায়কে চাকরি পাইয়ে দেন সমবায়ের পরিদর্শক পদে। চাকরি দিয়েছেন শ্যামলের স্ত্রী প্রমিলা রানী রায়কেও। তিনি সমবায় অধিদফতর, ঢাকা অফিসের ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। শ্যামল চন্দ্রের ভাই তাপস কুমার রায়কেও চাকরি দেন। তিনি ‘ফিল্ম অপারেটর’ হিসেবে কর্মরত। বাবলার প্রথম স্ত্রীর আরেক বোন আছেন নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার পদে। নরসিংদীতে কর্মরত প্রথম স্ত্রীর ভাই নয়ন নন্দী। উল্লেখিত এসব ব্যক্তির অধিকাংশকেই চাকরি প্রদানের জন্য বাবলা শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

দুই দশকে নিয়োগ ৫শ’ জনকে : বিতর্কিত সমবায় নেত্রী মা সাধনা দাশগুপ্তের প্রভাবে ২০০৪ সালে চাকরি পান বাবলা দাশগুপ্ত। যোগদান করেই তিনি মেতে ওঠেন নিয়োগ বাণিজ্যে। একে তো রয়েছে মায়ের প্রভাব। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সমবায় অধিদফতরে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে লেনদেনের সম্পর্ক। রাজনীতিকদের ‘ম্যানেজিং ক্যাপাসিটি’ তো রয়েছেই। এসবের মিশ্রণে তিনি গড়ে তোলেন প্রকাশ্য শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট করে বাবলা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না বসেও দুই দশক ধরে দুন্ধুমার চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ-বাণিজ্য। দীর্ঘদিন প্রধান কার্যালয়ে থাকার সুবাদে নিয়োগ সিন্ডিকেটে বাবলা দাশ পালন করেন ট্রাস্টি এবং ট্রেজারির দায়িত্ব। ঘুষের টাকা জমা হয় বাবলার কাছেই। তিনি হার মতো সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট মেম্বারদের মাঝে বিশ্বস্ততার সঙ্গে বিলি-বণ্টন করেন। বাবলার আশীর্বাদ ছাড়া হয় না কোনো কর্মচারীর পদোন্নতিও। এসব নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদদলিত করা হয়েছে কোটা ও বিধিবিধান।

ঘুষের বিনিময়ে সমবায়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তার আত্মীয়-স্বজনই রয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক। এমনও রয়েছেন, সমবায়ে চাকরি পেয়েছেন একই পরিবারের ৫-৬ জন সদস্য। যাদের নামের শেষে ‘দাশ, ‘গুপ্ত’ ‘দেব’ কিংবা ‘নন্দী’ রয়েছেন তারা কোনো না কোনোভাবে বাবলা দাশেরই আত্মীয়-স্বজন। বাবলা যাদের চাকরি দেন তাদের লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দেন। অভিযোগ রয়েছে, আত্মীয়-স্বজন লিখিত পরীক্ষায় পাস না করলেও তাদের উত্তরপত্র কৌশলে গায়েব করে দেন বাবলা। পরে নিজের বাসায় প্রার্থীকে বসিয়ে খাতা পূরণ করে সেটি যথাস্থানে পৌঁছে দেন। ফলে বাবলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেন না।

২০১২ সালে লিখিত পরীক্ষায় ‘পাস’ দেখিয়ে চাকরি দেন অন্তত ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে প্রশিক্ষক লাবনী চৌধুরী, ইন্সপেক্টর শ্রাবন্তী দাশ গুপ্ত, মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, ইকবাল হোসাইন, সরেজমিন তদন্তকারী মোহাম্মদ মহসিন ইসলাম, ইন্সপেক্টর শাপলা প্রভা দে, অজুতা খাতুন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সরেজমিন তদন্তকারী সাফিনা রুবি, ইন্সপেক্টর সুমা রায়, কল্পিতা ভৌমিক, প্রমিলা রানী রায়, রিজোয়ানা ইসলাম, মোহাম্মদ রবিউল করিম, সরেজমিন তদন্তকারী মোহাম্মদ আতাউর রহমান, ইন্সপেক্টর পপি রানী, তাপস কুমার সরকার, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সরেজমিন তদন্তকারী মোহাম্মদ আজাদুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর নাসিমুল হক, মো: আবুল হোসাইন, মো: ইসমাইল হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, শিপ্রা দেবনাথ, আসলাম কবির, সরেজমিন তদন্তকারী পলাশ সাহা, ইন্সপেক্টর সরোয়ার জাহান, উম্মেল কুলসুম সনিয়া, অভিজিত দাশ চৌধুরী, রাজীব কান্তি দেব ও আয়েশা বেগম চৌধুরী রয়েছেন।

বিপুল বিত্তবৈভব, ভারতে সেকেন্ড হোম : শত শত ব্যক্তিকে সমবায় অধিদফতরে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতির বিনিময়ে বাবলা দাশ গুপ্ত দু’হাতে কুড়িয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দেশে নামে-বেনামে করেছেন বিপুল সম্পদ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অর্থপাচার করে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। অস্ট্রেলিয়ায়ও বিপুল অর্থ পাঠিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে।

দেশের ভেতর সম্পদের মধ্যে কক্সবাজার উখিয়ায় কিনেছেন প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি। সেখানে মার্কেটসমেত একটি বাড়ি রয়েছে তার। চট্টগ্রাম আসকার দীঘিরপাড় এলাকায় (আনসার-ভিডিপি অফিসের পার্শ্ববর্তী গলিতে অবস্থিত) রয়েছে ফ্ল্যাট। চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় গুডস হিলের দক্ষিণে দ্বিতীয় স্ত্রী জয়শ্রী দাশকে কিনে দিয়েছেন আরেকটি ফ্ল্যাট। আগের ঘরের সন্তানসহ জয়শ্রী বসবাস করেন এই ফ্ল্যাটে। বাবলা শুক্র-শনিবার বিমানযোগে চট্টগ্রাম গেলে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন।

২০১৪ সালে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানার চর পাথরঘাটা এলাকায় কেনেন প্লট। এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে মা, ভাই ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি। কক্সবাজার উখিয়ার উয়ালাপালং মৌজায় ২০১৪ সালে ২৭ ফেব্রæয়ারি কেনেন একটি প্লট (উখিয়া সাবরেজিস্ট্রি অফিস, দলিল নং-২৯৪/১৪)। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে তখন তার চাকরির বয়স ৭-৮ বছর। ওই সময় ১৮ লাখ টাকায় নিজ নামে কেনেন প্লটটি। যদিও এর স্থানীয় প্রকৃত মূল্য ৪ গুণ বেশি।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে মা, ছেলে, জয়শ্রীর নামে রয়েছে একডজনের বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এসবে ঘুষের টাকা গচ্ছিত রাখেন। গত ১৬ জানুয়ারি সমবায় অধিদফতরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির আড়াইশ’ জনের পদোন্নতির পরীক্ষা হয়। পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে বাবলা ৪ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেন বলে জানা যায়। লেনদেনের বিষয়টি টের পেয়ে পদোন্নতি বোর্ড মাত্র এক জনকে উত্তীর্ণ করে। এছাড়া বদলি করে দেয়া হয় বাবলার সিন্ডিকেটভুক্ত সমবায় কর্মকর্তাদেরও। ফলে আপাতত ভেস্তে যায় বাবলার পদোন্নতি বাণিজ্য পরিকল্পনা। গুঞ্জন রয়েছে, ওই পদোন্নতি কমিটি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে বাবলার বাজেট ছিল ৩৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা পকেটস্থ করতেন বাবলা নিজেই।

সমবায়ের সম্পত্তি দখল : নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্যের পাশাপাশি বাবলা দাশের নাম রয়েছে দখলদারিত্বেও। কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়স্থ সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন ‘নিউ ঢাকা’ নামে একটি আবাসিক হোটেল জবরদখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে তার পরিবারের বিরুদ্ধে। ছোট ভাই সমবায় অধিদফতরের তদন্তকারী সঞ্জয় দাশ সম্পত্তিটি দেখাশোনা করেন। সম্পত্তিটির প্রকৃত মালিক ‘জাতীয় সমবায় শিল্প সমিতি’। বাবলা তার বড় বোনকে নির্বাচনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই সমিতির ‘সভাপতি’ বানিয়ে নিজের দখলদারিত্ব বজায় রেখেছেন।
রাজধানীর স্বামীবাগের করাতিটোলায় মা সাধনা দাশ গুপ্তের নামে রয়েছে ফ্ল্যাট, বাড়ি। যদিও সমবায় নেত্রী সাধনা দাশ গুপ্তের বিরুদ্ধেও রয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় লবণ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির জায়গা বিক্রি ও প্লট নির্মাণের মাধ্যমে অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা (স্মারক নং-৪৭.০০.০০০০.০৩২.০৬.১৮৪.১৮.৫০৯) নিতে সমবায় অধিদফতরে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুÐ গত বছর ২৫ অক্টোবর এ চিঠি দেয়া হলেও বাবলা দাশ সুকৌশলে সেটি ঠেকিয়ে রেখেছেন বলে জানা যায়।

বাবলা দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। অর্থ রোজগারও করেন বাংলাদেশে বসেই। কিন্তু দ্বিতীয় ঠিকানা (সেকেন্ড হোম) গড়ে তুলেছেন ভারতের কলকাতায়। সেখানে তার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে থেকে পড়াশোনা করে বাবলা দাশ গুপ্তের বড় ছেলে শৈবাল দাশ শুভ (পাসপোর্ট নং-বিএফ ০৯৩০৪৭৩)। এ ছাড়া বাবলা অস্ট্রেলিয়ায় ঠিকানা গড়েছেন বলেও জানা যায়।

প্রভাবশালী উচ্চমান সহকারী বাবলা দাশের নিয়োগ-বাণিজ্য, দুর্নীতি, নামে- বেনামে বিপুল অর্থসম্পদ এবং অর্থপাচারের বিষয়ে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি বাবলা দাশকে কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এ জিজ্ঞাসাবাদে বাবলা কী তথ্য দিয়েছেনÑ তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক (অনু: ও তদন্ত-১) মো: মিজানুর রহমান ভুইয়া।

নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ এবং দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে বাবলা দাশ গুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে গত সোমবার একাধিকবার তার নম্বরে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ফোনটি কেউ ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তাতেও সাড়া দেননি বাবলা।



 

Show all comments
  • মর্মভেদী ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৫ এএম says : 1
    হায়রে বাবলা। কত ক্ষমতার মালিক বাবলা। এগুলো সরকার বা দুদক এতাদিন দেখে না। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • aman ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৭ এএম says : 1
    বাবলা এসব না করে বিরোধী দলের কেউ এসব করতো তাহলে সরকারের লোকদের ঘুম হারাম হয়ে যেতো। তখন সরকার ধরতো। এখন সরকারের ধরার এতো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ এতে তো রাজনৈতিক সুবিধা নেই। এসব বাবলাদের কারণেই আজ দেশে এতো দুর্নীতি হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Tutul ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:২৮ এএম says : 1
    দ্রুত সরকার ও দুদক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অন্যরা ভালো হয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • H M Nurullah ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৫৭ এএম says : 1
    হায়রে বাবলা। কত ক্ষমতার মালিক বাবলা। এগুলো সরকার বা দুদক এতাদিন দেখে না। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Hridoy Sikder ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৯ এএম says : 1
    তার মতো এমন বাবলা এ দেশে হাজার হাজার আছে, এদের কারণেই সরকারের বদনাম হচ্ছে। তারপরও সরকার তাদের কিছু করতে পারছে না। তাদের খুটির জোর কোথায়। এসব চোরদের ধরে ফাসি দিতে হবে। তাহলে অন্যরা শিক্ষা পাবে
    Total Reply(0) Reply
  • মনি মোহন দাস ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:২৮ এএম says : 1
    এ রকম বাবলা দাশ অনেক আছে, ভূমি,স্বাস্থ্য,সাব-রেজিস্টার,শিক্ষা,বন,---------ইত্যাদি এসব জায়গায় ডায়নোসার থাকে । এরা মানুষের তাজা রক্ত খায়।
    Total Reply(0) Reply
  • OK THAT ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৬ পিএম says : 1
    তাই তো আজ যাদের কপালে বাবলার মত মামা খালু নেই তারা আজ দেশের সরকারি চাকুরী পায় না। ধীক ওদের জন্য যারা আজ খমতায় বসে ক্ষমতার অপব্যবহারে ব্যস্ত। এব দুখিরা বলবে আর কি!
    Total Reply(0) Reply
  • এমরান ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:০৭ পিএম says : 1
    ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সঃহিঃনং এর মাধ্যমে অন্যের নামীয় হিসাব দিয়ে টাকা কালেকশন হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ