মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কাবুলের পতনের পর আফগানিস্তানে একের পর এক ভয়াবহ গণহত্যায় প্রতীয়মান হয় যে, সহিংস সালাফি গোষ্ঠী আইএস-খোরাসান (আইএস-কে) আফগানিস্তানে নতুন তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে। আইএস-কে আফগানিস্তানের সবচেয়ে মারাত্মক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আবির্ভ‚ত হয়েছে, যা ২০২১ সালে এ পর্যন্ত ২ শ’ ৭০ টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ১৬ শ’ এরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পরে সংঘটিত ৫০ টিরও বেশি হামলা।
আফগান মাটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না, তালেবান তার প্রতিবেশীদের এটি আশ্বস্ত করার পর, আইএস-কে এখন একটি যৌথ ফ্রন্ট গঠনের জন্য টিটিপি সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করছে। আইএস-এর লক্ষ্যনীয় উত্থান অনেককের মনে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের অনেক পন্ডিত এবং রাজনীতিবিদদের সন্দেহ জাগিয়েছে যে, পশ্চিমা শক্তিগুলি মধ্যপ্রাচ্যে তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য পুনর্র্নিমাণের জন্য এই দলটি তৈরি করেছিল। আঙ্কারা সেন্টার ফর ক্রাইসিস অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ (এএনকেএএসএএম)-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মেহমেত সেফেতিন বলেছেন, ‘সিরিয়া এবং ইরাকের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে দায়েশকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তারপর পশ্চিমারা দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে সন্ত্রাসী সংগঠন পিওয়াইডি বা কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টিকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সিরিয়ান সহযোগী) বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। (সহজভাবে বললে) দলটিকে একটি নির্দিষ্ট মিশনের জন্য আনা হয়েছিল, যা এটি সম্পন্ন করেছে।’ মেহমেত বলেন, ‘এটা দেখলে অবাক হওয়ার কিছু হবে না যে, সিরিয়া এবং ইরাকে সাম্রাজ্যবাদের ভ‚মিকা পালনকারী সংগঠনটি (দায়েশ) বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলে, বিশেষ করে আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতার অনুঘটক হিসাবে ব্যবহৃত হয়, কারণ বৃহৎ শক্তিগুলি সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে তাদের ছায়া যুদ্ধ চালায়।’ তিনি বলেন, ‘নতুন মহাযুদ্ধে, বিশৃঙ্খলা বপনের জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য আফগানিস্তান হয়ে তুরস্ক, রাশিয়া, চীন ও বিশ্বকে অস্থিতিশীল করা। এবং দায়েশ একটি অত্যন্ত দরকারী অনুঘটক হতে পারে (এই যুদ্ধে)।’
২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশে প্রাক্তন আল-কায়েদা কমান্ডার আবু বকর আল বাগদাদির খিলাফতের ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট বিশে^র নজরে আসে, যাকে আরবীতে দায়েশ বলা হয়। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে খেলাফতের প্রলোভন দেখিয়ে সংগঠনটি হাজার হাজার সদস্য, বিশেষ করে পশ্চিমের তরুণ মৌলবাদীদের সদস্য বানিয়ে চলেছে, যাদিও তারা বর্বর মৃত্যুদন্ড এবং শিরচ্ছেদ সহ ভয়াবহ সহিংসতার কারণে বিশ্বব্যাপী সামালোচিত। মেহমেত আন্তর্জাতিকভাবে তালেবানকে বিচ্ছিন্ন করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন এবং আঞ্চলিক বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা রোধ করতে আইএস-কে’র হুমকি মোকাবেলা করার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতির সুপারিশে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানকে এমন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয় (সবার জন্য একটি লাভজনক পরিস্থিতির জন্য)।’ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কাউন্টার-টেরোরিজম (আইসিটি) এর সিনিয়র গবেষক ডক্টর মাইকেল বারাক কৌশলগত ক্ষেত্রে অধ্যাপক মেহমেতের সাথে একমত। তবে তিনি বলেছেন, ‘আঞ্চলিক দেশগুলোকে তালেবানের সাথে একটি যৌথ অভিযানের ক্ষেত্র গঠনের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত, যেটি আফগানিস্তানে আইএস-কে’র কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকবে এবং এর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাবে।’ তিনি বলেন যে, তালেবানরা এই ধরনের সহযোগিতায় রাজি না হলে আইএস-কে ক্রমেই আরও শক্তিশালী হতে থাকবে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, পূর্ব আফগানিস্তানে তার শক্তিশালী ঘাঁটিগুলি হারানোর পর, আইএস-কে নেতৃত্ব তার কৌশল পুনর্বিন্যাস করেছে, যার মধ্যে এখন উত্তর আফগানিস্তানে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করা অন্তর্ভুক্ত, প্রাথমিকভাবে বাদাখশানে, যা মধ্য এশিয়া এবং চীনে কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। এটি তালেবান বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে শক্তি সংরক্ষণের অভিপ্রায়ে এবং তালেবানদের শক্তি ক্ষয় করতে এবং তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে শহরাঞ্চলে হাই-প্রোফাইল আক্রমণ পরিচালনা সহজ করে দেবে। কাবুলে তালেবানের নাকের নীচে আইএস-কে সহজেই নতুন কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারে। কারণ এর টার্গেট হিসেবে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবকাঠামো, সংখ্যালঘু, যুদ্ধবাজ, বিদেশী দল এবং গণমাধ্যমের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে, গ্রুপটি তার প্রচারণাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য অন্যান্য বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন যে, যদি আইএস-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির এমন একটি ভয়ঙ্কর জোট তৈরি করে, খুব সম্ভবত, আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলায় নেমে আসতে পারে। এবং অনিয়ন্ত্রিত নীতি এবং অবকাঠামোর কারণে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের একটি নতুন কেন্দ্রে পরিণত করতে, যা আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে ব্যবহার করা হবে। সূত্র : ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।