নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের জার্সিতে সবশেষ ম্যাচটা কবে খেলতে নেমেছিলেন তাইজুল ইসলাম? উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেরই কপালে পড়বে চিন্তার ভাজ। সেটিও গত এপ্রিল-মে মাসে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে! পরের প্রায় সাত মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি তাকে। আপনার হয়তো মনে নেই, ওই টেস্টেও ৭২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন দেশসেরা এই স্পিনারের! কালেভদ্রে খেলতে নামলে তাকে মনে রাখার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন-ই। তাইজুলদের তাই ম্যাচপ্রতি পারফরম্যান্স দিয়েই জানান দিতে হয় নিজেদের উপস্থিতি। যেমন তিনি জানালেন আরেকবার।
পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক এই তাইজুলই। গতকাল টেস্টের তৃতীয় দিনে তার শিকার ১১৬ রানে ৭ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। বাংলাদেশের হয়ে একাধিকবার ইনিংসে ৭ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তিও গড়লেন তিনিই। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে নিয়েছিলেন ৩৯ রানে ৮ উইকেট। টেস্টে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড যেটি।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটা পুরোপুরিই তাইজুল বনাম পাকিস্তান। দুই পাকিস্তানি ওপেনার আবিদ আলী আর আবদুল্লাহ শফিক জমে গিয়েছিলেন উইকেটে। কাল ১৪৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিলেন। তৃতীয় দিনে আরও একটি সংগ্রামী দিন যেন অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশ দলের সামনে। কিন্তু বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুলই ঘুরিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের ইনিংসের মোড়। দিনের শুরুতেই শফিককে ফেরানোর পর একই ওভারে তুলে নিয়েছেন অভিজ্ঞ আজহার আলীর উইকেটটিও। কিন্তু তাইজুল এখানেই থেমে থাকলেন না। একে একে তুলে নিলেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী, ফাওয়াদ আলম, হাসান আলী, সাজিদ খান ও শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। ৭ উইকেট নিয়ে এটি পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তাইজুলের দ্বিতীয় ৫ উইকেট-কীর্তি। টেস্ট-ক্যারিয়ারে এটি তার নবম ৫ উইকেট। সাগরিকার উইকেটে ফ্লাইট আর টার্নের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে যেন দিনটি তাইজুলের।
২০২১ সালে এখনো পর্যন্ত ৮ ইনিংস বোলিং করে ২৬ উইকেট তাইজুলের। চট্টগ্রাম টেস্ট ধরলে এ বছর নিজের পঞ্চম টেস্টটি খেলতে নেমেছেন তিনি। গত এপ্রিলে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে দুই ইনিংসে দুইবার ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে সংগ্রাম আর দুর্বল পারফরম্যান্সের ভিড়ে বল হাতে তাইজুলে যেন ব্যতিক্রম একজনই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই তার পরিচয় টেস্ট স্পেশালিস্ট। তবে দেশের বাইরের টেস্টে আবার তিনি নিয়মিত নন। জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে একটি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সফরে গেলেও ওই ম্যাচে তার জায়গা হয়নি একাদশে। দেশে ফিরে আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্কোয়াডে ছিলেন ঠিকই। তবে দুটিই টি-টোয়েন্টি সিরিজে। স্কোয়াডে রাখা হলেও টেস্ট স্পেশালিস্টকে খেলানো হয়নি একাদশে।
বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচই খেলে কম। দেশের মাঠে আরও কম। ম্যাচ খেলার জন্য তাই চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে হয় তাইজুলকে। পারফরম্যান্সে মেলে ধরার তাগিদও হয়তো বেশি থাকে। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিন ভালো খেলে। তাদেরকে ভুগিয়ে প্রায় একার হাতে বাংলাদেশকে লিড এনে দিলেন তাইজুল। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে ৪৯ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু। এরপর এই প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে ৭ উইকেট নিতে পারলেন কোনো বোলার। বাঁহাতি স্পিনের সামনে পাকিস্তানি ব্যাটিং এতটা নাকাল হয়েছে সবশেষ ২০১৪ সালে। বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ সেবার নিয়েছিলেন ১২৭ রানে ৯ উইকেট।
গত বছর তার সময় কেটেছে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কার্যকারিতা বাড়াতে সেই সময়ের স্পিন পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেটোরির পরামর্শে অ্যাকশন বদলে ফেলেন তাইজুল। সেই অ্যাকশনে অনেক অনুশীলনের পর স্বস্তি পাননি। গত বছরের নভেম্বরে আরেক দফায় পরিবর্তন আনেন অ্যাকশনে। নতুন অ্যাকশন নিয়ে গবেষণা চলে তার পরীক্ষাগারে। সেটিও কার্যকর হয়নি। পরে তিনি ফিরে যান আগের সহজাত অ্যাকশনে। তাতে ফিরে পান নিজেকেও। এই টেস্ট বা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই টেস্টের আগে গত ফেব্রæয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪টি করে উইকেট। সব মিলিয়ে এ বছর ৫ টেস্টে ২৭ উইকেট হয়ে গেল তার।
২০১৪ সালে অভিষেকর পর এখনো পর্যন্ত ৪০টি টেস্টও (৩৪ টেস্ট) খেলা হয়নি তাইজুলের। ৩২.৫৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৩৮টি। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কিংস্টাউনে ৫ উইকেট নিয়ে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার। অভিষেকের বছরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় ৩৯ রানে ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন, সেটিই তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।
শুধু উইকেট সংখ্যাই নয়, চট্টগ্রামে গতকাল প্রথম সেশনে যে বোলিং উপহার দেন তাইজুল, অনেক দিনের মধ্যে সম্ভবত তা শুধু তার নিজেরই নয়, বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা বোলিং। দিনের প্রথম ওভারেই নেন দুটি উইকেট। একদম শুরু থেকেই ফ্লাইটের চাতুর্য, ক্রিজের কার্যকর ব্যবহার আর দারুণ গতি-বৈচিত্র দিয়ে বিভ্রান্ত করতে থাকেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। ধ্রæপদি বাঁহাতি স্পিনের সুনিপুন প্রদর্শনী মেলে ধরেন তিনি। এভাবেই তাইজুল নিজের কাজ বেশির ভাগ সময় করে যান ঠিকঠাক। বেশির ভাগ সময় আড়াল থেকেই আলো ছড়ান। কখনও কখনও হয়ে ওঠেন ভাস্বর। এটি তেমনই একটি দিন, যেদিন তাইজুলই সবচেয়ে দ্যুতিময়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।