Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দু’হাত ভরেই দিলো ক্যারিবীয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দুঃস্বপ্নের টেস্ট সিরিজ বাদ দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দু’হাত ভরেই দিয়েছে বাংলাদেশকে। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজকে সঙ্গী করে জাদুর কাঠি হাতে নিয়ে দেশ থেকে উড়ে গেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার প্রেরণাদায়ী অধিনায়কত্বে ৩ ম্যাচ ওয়ানডের প্রথমটিতে রেকর্ড গড়া জয়, দ্বিতীয়টিতে বৃষ্টির বাগড়ায় হেরে গেলেও শেষটি জিতে সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাটা পড়েনি এতটুকু। ঐ সিরিজ থেকেই তো ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকেও তো পেয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়েও ক্রিকেটাররা হয়েছেন পুরষ্কৃত। টি-২০ সিরিজেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ জয় করে থেকে ফ্লোরিডার লডারহিল- মাঠ তো বটেই দর্শকদের মন ভরিয়ে টি-২০ সিরিজ জিতেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে। এমন একটি সিরিজের শেষটায় বাধা হতে চেয়েছিল বেরসিক বৃষ্টি। ম্যাচ শেষ, কিন্তু মাঠে নেই কোনও খেলোয়াড়! ম্যাচ রেফারি বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে ১৯ রানে জয়ী ঘোষণা করতেই উচ্ছ¡াসে মেতে ওঠে গ্যালারি। খেলা বন্ধ অবস্থায় কিছুটা যেন অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন সমর্থকরা। বুঝতে পারছিলেন না হচ্ছেটা কী! জয়ের ঘোষণা আসতেই ড্রেসিংরুম থেকে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। উইকেটের পাশে পড়ে থাকা স্টাম্প দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন তারা। সেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়েননি তামিম -মুশফিকও। এই প্রথম বড় কোনও দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারানোর স্মারক নিজের সংগ্রহে রাখার লোভ কেই-বা সংবরণ করবে!
এখানেই থেমে যেতে পারতো সাকিব-তামিমদের আরেকটি সিরিজ জয়ের উচ্ছ¡াস। কিন্তু থেমে যাননি তারা। পনেরো-বিশ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়াম অনেকটাই পূর্ণ। হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেরও সমর্থক ছিলেন ঢের। পার্শ্ববর্তী ক্যারিবীয় দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া মানুষের সংখ্যাও তো কম নয়। তবে গলা ফাটানোতে তারা অনেকবারই হেরে গেলেন বাংলাদেশের সমর্থকদের কাছে। শুধু মাঠে নয়, গ্যালারিতেও বিজয়ী দলটার নাম কিন্তু বাংলাদেশ!
বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফ্লোরিডায় উপস্থিত হয়েছিলেন হাজার পাঁচেকের মত সমর্থক। ম্যাচের পুরো সময় সাকিব-তামিমদের সমর্থন জুগিয়ে গেছেন তারা। দিয়ে গেছেন ‘হোমলি ফিলিংস’। যার ফলও হাতে হাতে দেখেছে বিশ্ব- ফ্লোরিডায় হওয়া দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সাকিবরা এই সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ম্যাচের শেষটায়। বাংলাদেশ দল মাঠ ছাড়ার আগে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে পুরো মাঠ ঘুরে বেড়ালো। দর্শকরাও সাকিবদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন।
৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে জয়ের সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে আরও একটি খরা কাটালো বাংলাদেশ। টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ মাত্র একবারই বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতেছে। ২০১২ সালে আইরিশদের বিপক্ষে জেতার পর অনেকবার বিদেশের মাটিতে ছোট্ট ফরম্যাটের সিরিজ খেললেও জিততে পারেননি সাকিবরা। অবশেষে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে ৬ বছরের খরা কাটালো বাংলাদেশ।
এমন জয়ের পর লিটন দাসকে নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন দর্শকরা। তাকে ঘিরে মাঠের জটলাটা খানিকটা বড়ই ছিল। হওয়ারই কথা। কিছুক্ষণ আগে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে এসেছেন, পেয়েছেন দ্রæততম হাফসেঞ্চুরির পুরস্কার। তার বাহারি সব স্ট্রোকের কাছেই তো হার মেনেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! লিটনের ৩২ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ ৬ বছর পর বিদেশের মাটিতে টি-২০ ক্রিকেটে সিরিজ জিতল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ দলকে এই ফরম্যাটে এক ধাপ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে। হয়তো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয়যাত্রা ফ্লোরিডা থেকেই শুরু হলো!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ এবারই প্রথম কোনও সিরিজে দুইয়ের বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললো। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম এক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল। কিন্তু নিজেদের প্রথম মোকাবিলায় হার মানতে হয়েছিল সাকিবের নেতৃত্বে খেলা বাংলাদেশ দলকে। দুই বছর পর ২০১১ সালে মুশফিকের নেতৃত্বে মিরপুরে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম জয় এসেছিল বাংলাদেশের। এরপর পূর্ণাঙ্গ সিরিজের শেষে একটি করে বেশ কিছু টি-টোয়েন্টি খেললেও জয়ের দেখা পায়নি। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই সফল হলো সাকিব বাহিনী।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর থেকেই তেতে ছিল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে সফলভাবে শেষ করার পর ভক্তরা আশায় ছিলেন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও বাংলাদেশ সাফল্য পাবে। কিন্তু ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতে তেমন সাফল্য নেই টাইগারদের। এই বছরেই যেমন কিছুদিন আগে ধবলধোলাই হতে হয়েছিল আফগানিস্তানের সাথে। এই বছর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠেও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে টানা আটটি দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জয় পায়নি।
তার ওপর টি-টোয়েন্টিতে বরাবরই দুর্দান্ত উইন্ডিজ। সর্বোচ্চ দুইবার এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিপক্ষে এই জয় পাওয়াটা তাই দুর্দান্ত একটা অর্জনই।
এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে বাংলাদেশ মাত্র দুইটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথমটা অবশ্য একটা ম্যাচই ছিল। তবে তিন ম্যাচের সিরিজ এর আগে একবারই জিতেছিল, ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছিল ৩-০ ব্যবধানে। সব মিলে দেশের মাটিতেও বাংলাদেশ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে কখনো জয় পায়নি। দেশের মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল সেই ২০১৫ সালে, পাকিস্তানের সঙ্গে সেবার খেলা হয়েছিল শুধু একটা ম্যাচেই। সেজন্যই জয়ের পর ফ্লোরিডায় ছোটোখাটো একটা ভিক্টরি ল্যাপই দিয়ে দিল বাংলাদেশ।
সাদা পোষাকে সাদা শুরুর পর রঙিন জার্সিতে সফলতার চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ। যেন রঙিন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট সিরিজ

২১ নভেম্বর, ২০১৮
৩০ নভেম্বর, -০০০১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ