মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীন গত মাসে তার দ্বিতীয় হাইপারসনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী হাইপারসনিক গ্লাইড যানটিকে একটি ‘অরবিটাল বোম্বারমেন্ট সিস্টেম’ রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে চালিত করা হয়েছিল, যা দক্ষিণ মেরুর ওপর দিয়ে উড়তে এবং কার্যকরভাবে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাগালের বাইরে থাকতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, অস্ত্রটি মূলত ধারণার চেয়েও অনেক বেশি উন্নত।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ জুলাই এবং ১৩ আগস্ট চীন হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল থেকে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দিয়ে উড্ডয়নের সময় একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। পেন্টাগনের উন্নত গবেষণা সংস্থা ডার্পা’র বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন যে, চীন কীভাবে এই অভূতপূর্ব কৃতিত্ব অর্জন করেছে, কারণ বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটি পদার্থবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
চীনের হাইপারসনিক মিসাইলগুলোর মধ্যে একটি হল ডিএফ-২৬। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে যে, মিসাইলটি শব্দের গতির চেয়ে ১৮ গুণ দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে। এটি প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়ামের মার্কিন ভূখণ্ডকে বিস্ফোরিত করতে যথেষ্ট দূরে ভ্রমণ করতে পারে। রকেটটি প্রচলিত বা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে এবং এর আরেকটি সংস্করণ উন্মুক্ত মহাসাগরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম বলে বলা হচ্ছে।
চীন আরো ঘোষণা করেছে যে, তারা একটি তীব্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পন্দন তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা একটি হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা যোগাযোগ এবং বৈদ্যুতিক লাইনগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ২ হাজার মাইল রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্রটি শব্দের গতির থেকে ৬ গুণ বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে পারে। এটি একটি শহরের উপর রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শহরটিকে বিকল করে দিতে সক্ষম।
পেন্টাগনের কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করছেন যে, এটি ছিল একটি এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। অন্যরা মনে করছেন, এটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য পাল্টা ব্যবস্থা ছিল, যাতে তারা হাইপারসনিক অস্ত্রকে গুলি করতে না পারেন। তবে চীন এই সাফল্য কীভাবে অর্জন করেছে, তা আবিষ্কার করার জন্য সামরিক বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির উদ্দেশ্য কি ছিল, তা নিয়েও তারা আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।
রাশিয়া স্নায়ুযুদ্ধের সময় একটি ‘ফ্র্যাক্শনাল অরবিটাল বোম্বারমেন্ট সিস্টেম’ ব্যবহার করেছিল। কিন্তু তা কম উন্নত ছিল এবং হাইপারসনিক গ্লাইড যান বহন করেনি। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই বছরের পর বছর ধরে হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, চীনের সর্বশেষ দ্বিতীয় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা প্রমাণ করে যে, তাদের প্রচেষ্টা ক্রেমলিন বা পেন্টাগনের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।
মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই উন্নয়নটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক কারণ এটি এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে যারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় তাদের সবার জন্য হওয়া উচিত। এটি বহু সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কেও আমাদের উদ্বেগ তৈরি করে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন অনুসরণ করে চলেছে।’
এনএসসি বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের দিক থেকে বিভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বজায় রাখবে। তবে, দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেছেন যে, তারা অন্য দেশের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতা করতে মোটেও আগ্রহী নই। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র সম্প্রসারণ এবং হাইপারসনিক অস্ত্রের বিকাশকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ‘চীনা হুমকি’-এর মতো অজুহাত তৈরি করছে।
বেইজিং মূল হাইপারসনিক অস্ত্র পরীক্ষার খবর প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে যে, এটি একটি পুন:ব্যবহারযোগ্য মহাকাশ যানের পরীক্ষা। তবে উভয় পরীক্ষার সাথে পরিচিত ব্যক্তিদের মতে, মহাকাশ যানের সেই পরীক্ষাটি হাইপারসনিক অস্ত্র পরীক্ষার ১১ দিন আগে হয়েছিল।
চীন এই বছর সামরিক ব্যয়ে অতিরিক্ত ১ শ’ ৫১ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছে, কারণ দেশটি দক্ষিণ চীন সাগরের অঞ্চলের উপর তার দাবি শক্তিশালী করতে চাইছে। এশিয়ান শক্তিগুলির মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে বিশ্বে নতুন একটি স্নায়ূ যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় পূর্বের থেকে ৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন ১৩ আগস্ট আরেকটি হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
২৭ জুলাইয়ের পরীক্ষাটি দেখিয়েছে যে, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি রকেট ফোসর্’ অনেকের ধারণার চেয়ে অনেক দ্রুত অগ্রগতি করছে। ইউএস স্পেস ফোর্সে’র মহাকাশ অভিযানের ভাইস-চিফ জেনারেল ডেভিড থম্পসন বলেছেন, হাইপারসনিক অস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্র চীন বা রাশিয়ার মতো অতটা উন্নত নয়। শনিবার হ্যালিফ্যাক্স আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ফোরামকে থম্পসন বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত কাজটি ধরতে পেরেছি। চীনারা বেশ কয়েক বছর ধরে একটি অবিশ্বাস্যভাবে আক্রমণাত্মক হাইপারসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
থম্পসনের সাথে একমত হয়ে মার্কিন জেনারেল জন হাইটেন সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ‘স্পুটনিক যুক্তরাষ্ট্রে অতি গূরুত্বপূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করেছিল। ২৭ জুলাইয়ের পরীক্ষাটি সেই জরুরী অনুভূতি তৈরি করেনি। আমি মনে করি, সম্ভবত এর অতি গূরুত্বপূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করা উচিত।’
এর আগে, এই বছরের শুরুতে, রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছিল যে, তারা একটি জিরকন নামক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, যা সমস্ত পশ্চিমা প্রতিরক্ষা এড়াতে সক্ষম। ৭ মার্চ রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে শ্বেত সাগরে ফ্রিগেট অ্যাডমিরাল গোর্শকভ থেকে জিরকন দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। মস্কোর রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত টিভি সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে জিরকনকে উপকূলীয় আমেরিকান শহরগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ভøাদিমির পুতিনের পছন্দের অস্ত্র হিসাবে চিহ্নিত করা করেছে। সূত্র : দ্য সান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।