Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি, লোলুপ দৃষ্টি শিকারীদের

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৫৫ পিএম

শীতের প্রারম্ভে খুলনাঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। এ অঞ্চলের ডোবা, পুকুর খাল বিল জলাশয়গুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে তাদের কলকাকলীতে। সারাদিন পানি কাদায় বিচরণ করার পর রাতে তাদের একটা অংশ আশ্রয় নেয় গাছের উচুঁ উচুঁ ডালে। আরেকটি অংশ আশ্রয় নেয় ঝোপঝাঁড় জঙ্গলে। হাজার হাজার পাখির আগমনের সাথে সাথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাখি শিকারীরা। তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে অতিথি পাখিদের উপর। অভিনব নানা কৌশলে তারা নির্বিচারে পাখি হত্যায় মেতে উঠেছে। যেসব পাখি ডাঙ্গায় রাত কাটায়, তাদের শিকার করা হচ্ছে বেশী। শিকারীদের টার্গেট বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখপখিম সারস, কাইমা, শ্রাইক, গাঙ কবুতর, বনহুর, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড়া।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব উপজেলার গ্রামগুলোতে বিভিন্ন বয়সের অনেকেই রাত হলে পাখি শিকারে নেমে পড়েন। নানা কৌশলে তারা পাখি শিকার করেন।বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চরকুলিয়া গ্রামের একজন পাখি শিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চিকন শক্ত সূতার ফাঁদ পেতে পাখি ধরা হয়। বিষটোপ দিয়েও পাখি ধরা হয়। এয়ারগানও ব্যবহার করা হয় কখনো কখনো।
অভিনব পাখি শিকারের একটি পন্থা জানিয়েছেন খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের কয়েকজন পাখি শিকারী। তারা জানান, বিভিন্ন পাখির ডাক রেকর্ড করে তা বহনযোগ্য সাউন্ডবক্সে যেসব জায়গায় পাখি থাকে সেব জায়গাতে বিশেষ করে ধানক্ষেতে বাজানো হয়। এরফলে অনেক পাখি সাউন্ডবক্সের কাছে এসে ধরা পড়ে। অরেকটি পদ্ধতির কথা তারা জানালেন। কোড়া, কাইম, চখা জাতীয় পাখিকে পোষ মানিয়ে খাঁচায় করে তা জলাশয়ে বা ধারক্ষেত্রে রেখে আসা হয়। খাঁচার মুখ খোলা থাকে। পাখিটির পা ভিতরে সূতা দিয়ে বাঁধা থাকে। পাখিটির ডাক চিৎকারে একাধিক পাখি খাঁচার কাছে আসে। তখনই আগে থেকে পেতে রাখা ফাঁদে তারা ধরা পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিথি পাখি শুনলে অনেকেই তার স্বাদ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই পাখি কোনোভাবে ধরতে পারলে বিক্রি করতে বেগ পেতে হয় না। প্রকার ভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা অনায়াসে জোড়া বিক্রি হয়। অবশ্য পাখি ধরার পর তা রাতেই গোপনে বিক্রি হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
পাখি শিকার করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। গত ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়াহিদ হোসেন অভিযান চালিয়ে স্থানীয় কোদালিয়া বিল থেকে ৪০ টি অতিথি পাখি শিকারের অভিযোগে রিপন বারুই (৩৮) নামে এক পাখি ব্যবসায়ী এবং শরৎ রায় (৩৫) নামে এক পাখি শিকারিকে আটক করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে চল্লিশটি পাখি, পাখি শিকারের ফাঁদ, সাউন্ডবক্স এবং ব্যাটারিসহ পাখি শিকারের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে বিজন বারুইকে পনেরো দিনের কারাদণ্ড এবং শিকারি শরৎ রায়কে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উদ্ধার করা পাখিগুলোকে বিকালে মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবমুক্ত করা হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অতিথি পাখি

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯
১২ জানুয়ারি, ২০১৯
২০ নভেম্বর, ২০১৭
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ