Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবাধে অতিথি পাখি শিকার

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুন্দরবনের কোলঘেষে গড়ে ওঠা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয় এখন অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত। শীত আসতে শুরু করায় প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছে অতিথি পাখিরা। খালে বিলে পাখি আসতে শুরু করার সাথে সাথে মৌসুমী শিকারীরা পাখি শিকারে মেতে উঠেছে। শীত এলেই হাজার হাজার মাইল থেকে উড়ে আসে এই অতিথি পাখিরা। আর এই অতিথিদের নির্দয়ভাবে সুযোগ সন্ধানীরা শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয় আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মিটায়।
সুন্দরবন বিভাগের বন্যপ্রাণী দফতরের সূত্র জানায়, প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য ফসলও উত্তোলন শেষ এবং পানি কমে যাওয়ায় বিলগুলোতে অতিথি পাখির বিচরণ বেশি থাকে। এ সুযোগে চোরা শিকারীরা তৎপর হয়ে ওঠে। তারা পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র এবং স্থানগুলোতে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে। পরে তা প্রকাশ্য ও গোপনে মোটা অঙ্কের অর্থে বিক্রি করা হয়। সূত্রমতে, প্রতিদিন শিকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। পাখি ধরার নিত্য নতুন কৌশলও উদ্ভাবন হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, তালা, পাইকগাছা, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, রূপসা, তেরখাদা, মোড়লগঞ্জ, কচুয়া কয়রা এবং কালিগঞ্জ, কুশলিয়া, শ্যামনগর, আশাশুনি, তালা প্রভৃতি উপজেলার পাখি শিকারীরা এখন তৎপর।
নৌকা জাল বড়শী বিভিন্ন ফাঁদ বন্দুক অচেতন ঔষধ সহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র চুপিসরে বিকিকিনি হচ্ছে অতিথি পাখি। অভিনব কৌশলে শিকারীরা পাখি বিক্রি করছে খোদ শহরেও। এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সাংবাদিক ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা গোপনে কিনছে পাখি। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ঘের ধান ক্ষেত খাল বিল নদী নালা সহ বিভিন্ন জলাশয়ে সুদুর সাইবেরিয়া, কাজাকাস্থান হিমালয় সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখি এসে থাকে। প্রকৃতির ভারসম্য ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় অতিথি পাখির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পাখি প্রেমিকরা অতিথি পাখি আগমনের অধির অপেক্ষায় থাকেন। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ অতিথি পাখিদের হত্যা করছে। যা সভ্য সমাজের জন্য কাম্য নয়। আমাদের দেশে রাজহংস, চখাচখি, মানিকজোড়, বিভিন্ন জাতের হাসপাখি, কাচিচোরা, নানান প্রজাতির বাটান, ধলবগনি, শেতকাক, পেলিকেন, পানকৌড়ি, কাদা খোচা , বালিহাস বক সহ প্রায় দেড়শত প্রজাতির হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এদের শিকার ও হত্যা করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ বান্ধব এসব পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব অতিথি পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। আর এসব রোগান্ত পাখি খেয়ে মানব দেহে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও পাখি রান্না করে খেলে বয়েলের কারনে বার্ডফ্লু ছড়ায় না। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারীদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে সাধারন মানুষদের অভিযোগ।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড: জি এম কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আজ বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চলের মৎস্য ঘেরগুলোতে অতিথি পাখি বিচরণের পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছি।
বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোল্লা হাট, খুলনার রূপসা, ডুমুরিয়ার চুকনগর ও খর্নিয়ায় এবং তালায় রীতিমত নিদির্ষ্ট দিনে সকাল সন্ধ্যায় পাখির হাট বসে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাখি বিক্রেতারা বিভিন্ন কৌশলে লুকিয়ে পাখি এনে শহরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে চড়া দামে বিক্রি করছে। বেসরকারি সংস্থা কেএমএসএস এর এক বিশেষ জরিপ থেকে জানা যায়, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মৎস্য ঘেরগুলো মুলত পাখি বিচরণের বিশেষ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলে রয়েছে হাজার হাজার মাছের ঘের। যেখানে নতুন পানি তুললে পাখির আনাগোনা বাড়ে। আর শীতের শুরুতেই বিদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে। এছাড়া এ অঞ্চলের মরা নদীগুলো এবং বিভিন্ন নদীর জেগে ওঠা চরে প্রতি বছর এ রকম সময় পাখি আসে। আর চোরা শিকারীদের হাতে শত শত হাজার পাখি ধরা পড়ে। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোন ভূমিকা রাখছে না। রাজনৈতিক নেতারা খবর রাখে না। প্রশাসন দেখেও দেখেনা। বরং সমাজের এই বিবেকরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নেতা অধ্যাপক এনায়েত আলী বিশ্বাস ইনকিলাবকে জানান, জনসচেতনতা ছাড়া অতিথি পাখি নিধন রোধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর আইন থাকা সত্তে¡ও তা প্রয়োগ করছে না। তিনি এ ব্যাপরে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।



 

Show all comments
  • রবিন ১ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৫৪ পিএম says : 0
    সাভার রাজফুলবাড়িয়া ডেলিকেট গার্মেন্টস পাশে একটি জলাসয় আছে সেখানে কিছু বাল হাঁস স্হায়ি ভাবে বসবাস করছে। কিন্তু এলাকার বাচ্ছারা পাখিদের নানা ভাবে বিরক্ত করে। বাচ্ছাদের দমক দিয়ে ফেরান গেলেও বড়দের ফেরান যায় না। তাই ১০টি বাচ্ছা সহ দুজন লোক তাদের শিকার করে নিয়ে বাসায় পালন করতেছে।১ ডেলিগেট গার্মেন্টসের দারুয়ান সাহাবুদ্দিন ২ মহিউদ্দিন কন্টাকার মার্কেটের নাইট গাড দুলাল মিয়া তাদের থেকে পাখি মুক্তির দাবি যানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অতিথি পাখি

২০ নভেম্বর, ২০১৭
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ