Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৯ গুণ বেড়েছে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনের যোগ দেয়ার ২০ বছর পূর্তি হলো। এ সময়ে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নয় গুণ বেড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি হওয়ার দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে এশিয়ার অর্থনৈতিক জায়ান্টটি। তবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত উদ্যোগগুলোয় প্রত্যাশিত সংস্কার কার্যকর এবং দেশের বিভিন্ন অংশে সমতাপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে চীন। খবর নিক্কেই এশিয়া। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ডব্লিউটিওতে যোগ দেয় চীন। সস্তা শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানেই বিশ্বের কারখানায় রূপান্তরিত হওয়া দেশটির রফতানি বাড়তে থাকে। শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে আমদানিও বাড়াতে থাকে চীন। জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের (আঙ্কটাড) বরাতে জানা গেছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের রফতানি ও আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ৮৭০ ও ৭৪০ শতাংশ। বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে ৮১০ শতাংশ, যেখানে পুরো বিশ্বের বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে ১৮০ শতাংশ। দেশীয় কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি ও বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই চীনের পিছু ছাড়ছে না। এতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১১ জাতিরাষ্ট্রের সিপিটিপিপিতে যোগ দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আরো শক্তিশালী অবস্থানের উচ্চাভিলাষ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সাংহাইয়ে আয়োজিত চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোতে বাণিজ্য উদারীকরণে দেশটির বিশাল অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ডব্লিউটিওতে যোগ দিয়ে যে অঙ্গীকার করেছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে চীন। বৈদেশিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে। ডব্লিউটিওতে যোগদানের সময় যেখানে শুল্ক ৯ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত ছিল। ডব্লিউটিওতে যোগদানের পর চীনা রফতানির বড় অংশজুড়ে ছিল শ্রমনির্ভর বস্ত্র ও পোশাক খাত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি) থেকে শুরু করে স্মার্টফোনের মতো হাই-টেক আইটেম রফতানি করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৩ শতাংশ এখন চীনের নিয়ন্ত্রণে। ২০০১ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যায় চীন। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো প্রধান অর্থনীতিগুলোর শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার চীন। দেশে বিভিন্ন বিরোধিতায় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে কিঞ্চিৎ পিছিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আগ্রাসীভাবে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের আঞ্চলিক জোট আরসিইপি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিতে কাজ করবে। আট বছর ধরে এ জোট গঠনের কাজ চলছে। আগামী জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে গত সেপ্টেম্বর আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় সিপিটিপিপি বাণিজ্য জোটে যুক্ত হওয়ার আবেদন করেছে বেইজিং। বাজার উদারীকরণে এটা আরসিইপির চেয়েও অগ্রসর নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। এতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চাচ্ছে। সিপিটিপিপির শর্ত মেনে চলার ইঙ্গিত দিয়ে বৃহস্পতিবারের বক্তব্যে শি জিনপিং বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতি, বাণিজ্য ও পরিবেশ, শিল্প ভর্তুকি এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় উদার ও খোলা মন থাকবে চীনের। কিন্তু চীনের পক্ষে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সহায়তা দিয়ে আসছে চীন সরকার। সিপিটিপিপির আওতায় মুক্ত বাণিজ্যের পথে এগুলো প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সহায়তাপুষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান (এসওই) নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন চীনের বাণিজ্য উপমন্ত্রী ওয়াং শৌয়েন। গত মাসে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, এসওইগুলো বাজারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, যা নিজস্ব অর্থায়ন ও নিজেদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারা মুক্ত বাজারে প্রতিযোগিতায় নামে এবং তাদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা থাকে না। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ন্যূনতম পরিবর্তন এনেই সিপিটিপিপিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের সামনে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা তুলে বেশকিছু শর্তে শিথিলতা প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে সিপিটিপিপিতে। বিভিন্ন নীতিমালা এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে সিদ্ধহস্ত চীন। যেমন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও ডব্লিউটিওতে উন্নয়নশীল দেশের যাবতীয় সুবিধা নিচ্ছে তারা। এ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ডব্লিউটিওর সম্পর্ক বেশ তিক্ততায় রূপ নিয়েছিল। এমনকি সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে বাণিজ্য উপমন্ত্রী ওয়াং বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এখনো আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা যায়নি। এজন্য বিভিন্ন এসওইকে সুবিধা দিতে হচ্ছে। নিক্কেই এশিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ