নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর অস্থিরতা চলছে বিসিবিতে। সঙ্কট এত রকমের যে, বোর্ড কর্তারা বুঝে উঠতে পারছেন না কোন দিক তারা কীভাবে সামলাবেন। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান গত কয়েক দিনে দফায় দফায় সভা করেন বোর্ড পরিচালক ও নির্বাচকদের সঙ্গে। সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে নিজ বাসায় গত শুক্রবার বিকেলে বোর্ড প্রধান কথা বলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের সঙ্গেও। সঙ্কট থেকে উত্তরণের অনেক পথ নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে দুর্ভাবনার একটি জায়গায় থমকে যাচ্ছে সবকিছু, মিলছে না কোনো দিশা। যেটির কেন্দ্রে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থতায় জাতীয় দলের কোচকে রাখার খুব ইচ্ছে বিসিবির নেই, কিন্তু এই মুহূর্তে ছেড়ে দেওয়ার উপায়ও নেই!
সামনেই আবার আরেকটি সিরিজ। বিশ্বকাপ ফাইনালের পরদিনই বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান। গুছিয়ে ভাবা ও পরিবর্তনের সময়ও খুব একটা নেই। সব মিলিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিসিবির। দেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি ও এখনকার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমকে নিজের উদ্যোগেই বাসায় ডেকে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। এই আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে নাজমুল হাসান এখনও বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেননি বলে জানালেন বিসিবির দীর্ঘদিনের পরিচালক জালাল ইউনুস, ‘তাদের মধ্যে একান্তে কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে, আমরা আসলে এখনও তেমন কিছু জানি না। বোর্ড প্রধান দেশের বাইরে গেছেন, ফেরার পর হয়তো এটা নিয়ে কথা বলবেন। তবে ওরা অনেক অভিজ্ঞ, অনেক কিছু জানে। ওদের কথাকে নিশ্চয়ই গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
বোর্ডের একটি সূত্র অবশ্য দেশের শীর্ষ স্থানীয় এক নিউজ এজেন্সিকে নিশ্চিত করেছে, ওই সভার পরই বিসিবি পরিচালকদের সঙ্গে বোর্ড প্রধানের আরেকটি সভায় উঠে এসেছে তামিম-মাশরাফিদের সঙ্গে সভার প্রসঙ্গ। বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ানো তামিম ইকবালকে আবার টি-টোয়েন্টি দলে ফিরে আসার অনুরোধ করেন বিসিবি সভাপতি। এমনকি, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। তবে ওই সূত্র জানায়, তামিম সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আগামী বিশ্বকাপের জন্য তরুণদের প্রস্তুত করার পরামর্শই দিয়েছেন।
আপাতত বোর্ডের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা অবশ্য কোচ। ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পাওয়ার পরও মূল প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছিল সেই সময়ের কোচ স্টিভ রোডসকে। এবার দলের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। কিন্তু তার পরও রাসেল ডমিঙ্গোকে বাদ দেওয়ার পথ পাচ্ছে না বোর্ড। বিশ্বকাপের আগেই যে কোচের সঙ্গে নতুন চুক্তি করা হয়ে গেছে!
ডমিঙ্গোর সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল এই বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, কোচের সঙ্গে বিসিবি দুই বছরের নতুন চুক্তি করে ফেলে বিশ্বকাপের আগেই! বোর্ডের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে। বিশ্বকাপের আগে ডমিঙ্গো বোর্ডকে জানান, তার সামনে নতুন একটি চাকরির হাতছানি আছে। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাকে। নিজের এজেন্টের মাধ্যমে একটি চিঠিও বোর্ডে পাঠান ডমিঙ্গো। সেখানেই তিনি জানান, নতুন চুক্তি করতে চাইলে তার সঙ্গে বিশ্বকাপের আগেই করতে হবে, নইলে তিনি তাসমানিয়ার সঙ্গে চুক্তি করবেন। সেই সময় দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের পিঠেপিঠি সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বোর্ড মনে করেছিল, যে কোনো মূল্যে ডমিঙ্গোকে রাখতেই হবে। তাই বেতন প্রায় আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ডমিঙ্গোর সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি বিশ্বকাপের আগেই সেরে ফেলা হয়!
শুধু এটুকুই নয়, ডমিঙ্গোর দাবি মেনে চুক্তিতে একটি ধারাও রাখা হয়। দুই বছরের চুক্তির প্রথম এক বছরে বিসিবি তাকে বরখাস্ত করতে চাইলে কিংবা তিনি চাকরি ছাড়তে চাইলে, গুনতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। যে পক্ষই সম্পর্ক ছিন্ন করুক, সেই সময় থেকে এক বছর হওয়া পর্যন্ত যত মাস বাকি থাকবে, সেই মাসের বেতনের অঙ্ক বুঝিয়ে দিতে হবে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ডমিঙ্গোর মাসিক বেতন হবে প্রায় ১৭ হাজার ডলার (আয়করসহ প্রায় ২২ হাজার ডলার)। এখন বিসিবি যদি ডমিঙ্গোকে বাদ দেয়, আগামী এক বছরের বেতন তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ডমিঙ্গো নিজে থেকে ছাড়তে চাইলেও একই অঙ্ক দিতে হবে।
ডমিঙ্গোর চাকরি ছাড়তে চাওয়ার কোনো কারণ নেই। বিসিবি এখন তাকে রাখতে না চাইলেও উপায় নেই, এখন বরখাস্ত করলে ডমিঙ্গোকে বুঝিয়ে দিতে হবে ২ লাখ ডলারের বেশি! ডমিঙ্গোর সঙ্গে চুক্তির এই বাস্তবতার কারণে অবশ্য বোর্ড পরিচালকদের মধ্যেও অস্বস্তি আছে অনেকের। এটি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন কেউই। তবে আড়ালে ক্ষোভ ঝাড়ছেন এক পক্ষ। তাদের দাবি, বোর্ডকে অনেকটা ‘ব্ল্যাকমেইল’ করেছেন ডমিঙ্গো এবং বোর্ডও সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। আরেকটি পক্ষ অবশ্য এটিকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ মনে করছে না। তাদের মতে, পেশাদারী দিক থেকেই আলোচনা হয়েছে এবং দুই পক্ষের সম্মতিতেই চুক্তি হয়েছে। তাদের বরং আফসোসের জায়গা, বিশ্বকাপে দল এতটা খারাপ করবে, সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না বিসিবি সভাপতি ও বোর্ড পরিচালকদের।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও ডমিঙ্গোকে বাদ দেওয়ার একটি ভাবনা বোর্ডের আছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। তবে এখনই নয়। পাকিস্তান সিরিজে তারা দলের পারফরম্যান্স দেখবেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে, জরিমানা দিয়ে হলেও পরের সিরিজের আগে ডমিঙ্গোকে বিদায় করে দেওয়া হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালক নিশ্চিত করলেন, ভবিষ্যৎ ভাবনায় সাবেক কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বোর্ড। তবে আগের দায়িত্বের চুক্তির বাধ্যবাধকতায় আগামী আগস্টের আগে নতুন কোনো দায়িত্ব নিতে পারবেন না হাথুরুসিংহে। ওই পরিচালকের দাবি, হাথুরুসিংহের জন্য অগাস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বোর্ড। ডমিঙ্গোকে সেই সময় পর্যন্ত রাখা হতে পারে কিংবা আগেই বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দিয়ে কিছুদিন কাজ চালানো হতে পারে।
বাংলাদেশের আরেক সাবেক কোচ জেমি সিডন্সের সঙ্গেও বোর্ডের আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানালেন ওই পরিচালক। জাতীয় দলের মূল কোচ নয়, তবে কোনো একটা দায়িত্বে তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুক্ত করতে চায় বিসিবি। সেই আলোচনাই এখন চলছে। সব মিলিয়ে নানা আলোচনাই চলছে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো, উইকেটের উন্নয়ন, ক্রিকেট সংস্কৃতির বদল, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এসব নিয়ে আলোচনার হালে খুব বেশি পানি পাচ্ছে না বলেই এখনও পর্যন্ত জানা গেছে। বিডিনিউজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।